সারাদেশে পালিত হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই পবিত্র দিনে পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি খুঁজছেন মুসলমানরা। এছাড়া ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
বাঙালি সমাজে কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত মুসলমানদের এই অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর করে আসছে।

বৃহস্পতিবার সকালে জায়নামাজ হাতে সবাই ছুটছেন ঈদগাহে। শিশুরা রঙিন পোশাকে ছুটোছুটি করছে। চার দিকে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।

ঈদুল আজহা মূলত ত্যাগ ও বিসর্জনের বার্তা নিয়ে আসে। এদিন পশু জবাইয়ের মাধ্যমে ত্যাগের একটি প্রতীকী প্রকাশ ঘটানো হয়। এর মাধ্যমে মনের পশুত্বকে বিসর্জন দিয়ে নিজেকে নৈতিক ও আত্মিকভাবে পরিশীলিত করা হয়। তাই কুরআন ও হাদিসে তাগিদ দেয়া হয়েছে কুরবানি যেন লোক-দেখানো না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে।

প্রায় দুই হাজার বছর আগে নিজের ছেলেকে কুরবানি করার মতো কঠিন নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিম (আ.) কে। সেই মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইবরাহিম (আ.) খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। প্রিয় সন্তানকে কুরবানির জন্য প্রস্তুত হলেও শেষ পর্যন্ত তা করতে হয়নি তাকে। এখান থেকেই পশু কুরবানির নির্দেশনা আসে উম্মতে মোহাম্মদির জন্য।

ধর্মবেত্তাদের মতে, স্বচ্ছ হৃদয়ে, খাঁটি নিয়তে কুরবানি করলেই আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে। অন্যথায় এই ‘রক্তপাতে’ কোনো লাভ নেই। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, কুরবানির পশুর মাংস, রক্ত কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না, পৌঁছে একমাত্র তাকওয়া। আর এই তাকওয়ার উপস্থিতি না থাকলে পশু কুরবানির কোনো সার্থকতা নেই। এজন্য নিষ্পাপ পশুর গলায় ছুরি চালানোর আগে নিজের মনের পশুটাকে কুরবানি দিতে হবে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলিম ভাই-বোনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, কুরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব জাগ্রত করে এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ‘আজহা’ অর্থ কুরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আজহা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগের শিক্ষা ও প্রভু প্রেমের পরাকাষ্ঠা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) কে কুরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে অতুলনীয়।

তিনি বলেন, করোনা মহামারির অভিঘাত ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নিম্ন আয়ের মানুষ নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝে দিনাতিপাত করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহার ত্যাগের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবজাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, আসুন, ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা মানবজাতির কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করি। সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঈদুল আজহার আনন্দ ভাগাভাগি করে নেই।
জাতীয় মসজিদে হবে ৫ জামাত

রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবার পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। তবে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে এই জামাত সকাল ৮টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে সকাল ৮টা, সকাল ৯টা, সকাল ১০টা এবং সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ঈদের জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হবে।

সংসদ ভবন এলাকায় জামাত সকাল আটটায়

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার টানেলে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ, হুইপবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ-সদস্যবৃন্দ ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীসহ মুসল্লীরা এই জামাতে অংশ নেবেন।