এশিয়া কাপে এবার শুরু থেকেই কিছুটা অস্থিতিশীল সময় পার করছে বাংলাদেশ দল। এবাদত হোসেন চোটে পড়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ছিটকে যান। জ্বরের কারণে লিটন দাসও খেলতে পারেননি গ্রুপ পর্বের ম্যাচে। তার জায়গায় নেয়া হয় এনামুল হক বিজয়কে। যদিও এখনো মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। আফগানিস্তান ম্যাচের পর হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের কারণে দেশে ফিরতে হয়েছে নাজমুল হাসানকেও।

এই পরিস্থিতিতে এশিয়া কাপে আরো একটি বাঁচা-মরার লড়াইয়ে সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ টাইগারদের। আজ কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এই ভেনুতে ওয়ানডে ফরম্যাটে কোনো জয় নেই টাইগারদের। কিন্তু টি-২০ ফরম্যাটে দারুণ তিনটি জয় আছে বাংলাদেশের। এখন দেখার বিষয়, টি-২০-এর সুখস্মৃতি আজ আত্মবিশ^াসী করতে পারে কিনা টাইগারদের। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত ১১ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। সবগুলোই হেরেছে। তবে এখানে টি-২০তে ৭ ম্যাচ খেলে আসা তিনটি জয়ই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২০১৭ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টি-২০তে ৪৫ রানে, ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফির তৃতীয় ম্যাচে ৫ উইকেটে এবং নিদাহাস ট্রফিতে ফিরতি দেখায় টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ ম্যাচে ২ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। আজ সেটিই হতে পারে বাংলাদেশের প্রেরণা।

এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচে হারলেও ২০১৫ সাল থেকেই ওয়ানডে ফরম্যাটে সেরা দল হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর সব দিক দিয়েই শ্রীলঙ্কার ওপরে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের মঞ্চে ১৬ বার মুখোমুখি হয়েছে উভয় দল। লঙ্কানদের জয় ১৩টিতে। সব মিলিয়ে, সর্বমোট ৫২ বার ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা ৪১ বার এবং বাংলাদেশ ৯টি ম্যাচে জিতেছে। বাকি দু’টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
লাহোরে এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরে যাওয়ায় টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে বাংলাদেশের সামনে জয় ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেলে এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলার আশা একরকম শেষ হয়ে যাবে টাইগারদের। পাল্লেকেলেতে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হেরে এশিয়া কাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। যে কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের ম্যাচটি বাঁচা-মরার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল।

ম্যাচে আফগানদের ৮৯ রানে হারিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে বিদেশের মাটিতে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৩৪ রান করে বাংলাদেশ। জিততে হবে- এমন সমীকরণে আরো একবার জ্বলে উঠতে পারবে কিনা বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০৪ রানের ইনিংসে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়া ইনফর্ম ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তর অনুপস্থিতিতে ইতোমধ্যেই দল বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। শান্তর জায়গায় সুযোগ পেলেও নিজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারেননি গেল কয়েক বছরে টাইগার দলের অন্যতম সেরা ব্যাটার লিটন। তার অধারাবাহিকতায় চিন্তায় ফেলেছে দলকে।

নিদাহাস ট্রফির ঘটনায় গত পাঁচ বছর ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে। সেই উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত এখনো দু’দেশের ক্রিকেটারদের স্মরণে আছে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে দু’দলের মধ্যে সেই ম্যাচের কোনো ছাপ দেখা যায়নি। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে সহজেই জয় পায় লঙ্কানরাা। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে চাপে পড়েছিল তারা। জয় না পেলেও ওই ম্যাচে রান রেটে হিসাব-নিকাশ ছিল। শেষ পর্যন্ত ২ রানের জয়ে সুপার ফোরে ওঠে দ্বীপ রাষ্ট্রটি।
বাঁচা-মরার ম্যাচে বাংলাদেশ আবারো জ্বলে উঠবে বিশ্বাস অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। সাকিব বলেন, ‘আমাদের বোলিং বিভাগ ভালো করছে। এই মুহূর্তে ব্যাটিং ভালো ও খারাপ মিলিয়ে হচ্ছে। ধারাবাহিক হতে হবে এবং আমরা সেটাই করার চেষ্টা করব। এ ম্যাচকে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আশা করি, আমরা ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের ধারায় ফিরতে পারব।’

বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন দাস, তৌহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহীম, আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মাহেদি হাসান, নাঈম শেখ, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, তানজিদ হাসান তামিম, তানজিম হাসান সাকিব ও এনামুল হক বিজয়।
শ্রীলঙ্কা দল : দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), পাথুম নিশাঙ্কা, দিমুথ করুণারত্নে, কুসল পেরেরা, কুসল মেন্ডিস, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, চারিথ আসালঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমা, দুনিথ ওয়েলালাগে, মহেশ থিকশানা, মাথিশা পাথিরানা, কাসুন রাজিথা, দুশান হেমন্থা, বিনুরা ফার্নান্দো ও প্রমোদ মাদুশান।