গাজীপুরে বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবীতে শনিবারেও শ্রমিকরা সদর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি নতুন বাজার এলাকায় বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে। এসময় পুলিশ বাঁধা দিলে শ্রমিকদের ছোঁড়া ইটে শিল্প পুলিশের এএসপি ও পরিদর্শক সহ অন্ততঃ চারজন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এদিকে বিজিএমই এর সিদ্ধান্ত মেনে শনিবার থেকে গাজীপুরে অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা পর্যায়ক্রমে খুলে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এদিন সকাল থেকে এসব কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। অপ্রীতিকর ঘটনা ও সহিংসতা ঠেকাতে বাড়তি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।

জানাগেছে, ন্যূনতম মজুরী ২৩ হাজার টাকা করার দাবীতে গত ২৩ অক্টোবর থেকে আন্দোলন শুরু করে গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরা। গত কয়েকদিন আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে। তারা উত্তেজিত হয়ে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে ও ইটপাটকেল ছুঁড়ে তান্ডব চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল, সর্টগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। জেলায় শ্রমিক আন্দোলনকালে এ পর্যন্ত দুইজন শ্রমিক নিহত হয়েছে। শ্রমিকদের তান্ডবে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুইশতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে সরকার, মালিক, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সহ শ্রমিক সংগঠণের নেতৃবৃন্দ আলোচনায় বসেন। গঠণ করা হয় মজুরি বোর্ড। মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে নবেম্বর মাসে ঘোষণা ও ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। এরপ্রেক্ষিতে শনিবার হতে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয় বিজিএমইএ।

বিজিএমই এর ওই সিদ্ধান্ত মেনে শনিবার থেকে গাজীপুরে অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এদিন সকাল থেকে এসব কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। অপ্রীতিকর ঘটনা ও সহিংসতা ঠেকাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। তবে শনিবার সকাল ১০টার দিকে জেলার সদর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার এসএম নিট গার্মেন্টসের শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এসময় আন্দোলনরত শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এতে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এসময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরতদেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনরতদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় শ্রমিকদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর শ্রীপুর সাব-জোনের সহকারি পুলিশ সুপার মো. আসাদ, পরিদর্শক আবদুর নুরসহ কয়েকজন আহত হন। এঘটনায় এক মহিলা গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে ঢাকা পাঠানো হয়। এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠণ ও মালিকপক্ষের লোকজন কাজ করছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর শ্রীপুর সাব-জোনের সহকারি পুলিশ সুপার মো. আসাদ বলেন, আমরা প্রথমে শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে তিনিসহ পরিদর্শক আবদুর নুর আহত হন।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের মুখে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে জেলার ২২০ টিরও বেশী কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। মালিকপক্ষ ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ ভিত্তিতে ওই কারখানাগুলো বন্ধ করেছে। শনিবার থেকে বেশ কিছু কারখানা চালু করা হয়। পোশাক শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রমিকদের ভাঙচুর না করে শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে।