গাজীপুরের কালীগঞ্জে বেড়াতে নিয়ে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে স্ত্রীকে হত্যা করেছে ট্যাক্সি চালক স্বামী। এ ঘটনায় নিহতের স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। তাকে মহানগরের বাসন থানার নাওজোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার র‌্যাব-১’র পোড়াবাড়ী স্পেশালাইজ ক্যাম্পের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মাহফুজুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতের নাম- মিজানুর রহমান ওরফে সুমন (২৮)। সে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মফিজুল ইসলামের ছেলে।

সহকারী পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান জানান, রাজধানীর তুরাগ থানার রানাভোলা এলাকায় প্রথম স্ত্রী শিমু ও দেড় বছরের মেয়ে এবং মা’কে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করে উবারে ট্যাক্সি চালাতেন মিজানুর রহমান সুমন। প্রায় দুই বছর পূর্বে অভিভাবকের অগোচরে বিলকিসকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে রানাভোলার পার্শ্ববর্তী নয়াপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। কিন্তু উবারে ট্যাক্সি চালিয়ে দুই সংসার চালানোয় উভয় সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। এরমধ্যে গত ৩/৪ মাস যাবত বিলকিস তার স্বামীর কাছে আগের চেয়ে বেশী টাকা দাবি করলে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। একপর্যায়ে দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিসকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্বামী সুমন। মাঝে মধ্যে মিজান তার স্ত্রী বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যেতেন এবং হত্যার জন্য সুযোগ খুঁজতেন।

তিনি আরো জানান, গত ১৯ মে দুপুরের পর বেড়ানোর কথা বলে বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় যান মিজান। পথে চা পান করে বিলকিসকে হত্যার জন্য জায়গা ও সুযোগ খুঁজতে থাকেন। বিকেল ৪ টার পর গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার পূর্বাচল ২৪ নং সেক্টরের নিরিবিলি এলাকায় জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে গাড়ী থামিয়ে স্ত্রীকে গাড়ীতে বসিয়ে রেখে গাড়ি থেকে পাইপ দিয়ে পেট্রোল বের করে বোতলে ভরে। কিছুক্ষণ পর বিলকিস গাড়ি থেকে নামলে সুমন বোতলের পেট্রোল বিলকিসের গায়ে ছিটিয়ে দেয় এবং ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে গায়ে ছুঁড়ে মারে। বিলকিসের গায়ে আগুন জ্বলে উঠলে বাঁচার জন্য চিৎকার শুরু করলে পাষন্ড স্বামী হত্যাকারী সুমন গাড়ি নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। বিলকিসের ডাক চিৎকারে আশে পাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে একটি ড্রেন থেকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে শেখ হাসিনা বার্ন হাসপাতালে রেফার্ড করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সোমবার (২০ মে) সকাল ৯ টায় বিলকিস মারা যায়। ঘটনার পর থেকে ঘাতক স্বামী সুমন আতœগোপনে চলে যায়। পরে র‌্যাব-১ আসামী সুমনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায় এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামী পাষন্ড স্বামী সুমনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের বাসন থানার নাওজোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।