52f77e0adfcb2-KENDUA-0মুক্তিযোদ্ধা খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং একই কারণে সাময়িক বরখাস্ত এক শিক্ষককে দিয়ে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান পরিচালনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (স্কুল অ্যান্ড কলেজ) এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ সান্দিকোনা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয় স্থানীয় সাংসদ ইফতিকার উদ্দিন তালুকদারকে। খেলা পরিচালনায় অন্যদের সঙ্গে একটি চাঞ্চল্যকর খুনের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শরীরচর্চা শিক্ষক মনিরুজ্জামানকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি যথারীতি খেলার বিভিন্ন ইভেন্ট পরিচালনা করেন। তবে প্রচারপত্রে খেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের তালিকায় ওই বিতর্কিত শিক্ষকের নাম ছিল না। খেলার শেষ পর্যায়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন সাংসদ ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার। হত্যা মামলায় দণ্ডিত ব্যক্তিকে দিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনার অভিযোগ পেয়ে মঞ্চেই অধ্যক্ষ মো. মাহবুব আলমকে ভর্ত্সনা করেন ক্ষুব্ধ সাংসদ। সেই সঙ্গে এ ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য অধ্যক্ষের কাছে লিখিত জবাব চান তিনি। পরে সন্ধ্যার দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন সাংসদ। মামলার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষককেও সতর্ক করে দেন তিনি।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষককে দিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনা প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ মাহবুব আলম মুঠোফো  বলেন, ‘ওই শিক্ষক (মনিরুজ্জামান) খেলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন না। শুধু পোলাপানের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন।’ এরপর ‘কথা বোঝা যাচ্ছে না’ বলে মুঠোফোন রেখে দেন তিনি।
সাংসদ ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার  বলেন, ‘খুনের দায়ে দণ্ডিত একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে খেলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি আমাকে আগে জানানো হয়নি। মাঠে গিয়ে জানতে পেরে তাত্ক্ষণিকভাবে মঞ্চে এবং পরে শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠকেও অধ্যক্ষকে এ বিষয়ে লিখিত জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষককেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’
নিহত ব্যক্তির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেত্রকোনার মদন উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের মাখনা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা সফিউদ্দিনকে স্থানীয় সিংহেরবাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে ছুরিকাঘাত করে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের ভাই জুলফিকার আলী বাদী হয়ে মনিরুজ্জামান ও তাঁর অপর তিন ভাইসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে সেটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে ২০০৬ সালে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে মনিরুজ্জামান ও তাঁর অপর তিন ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মামলার বাদী জুলফিকার আলী   জানান, দণ্ডিত ব্যক্তিরা সবাই সবাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। জামিনে বের হয়েই আসামিরা তাঁদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন।