2টাকা নিয়ে চলে যান, এজেন্ট থাকার দরকার নেই। আমরাই সব কিছু দেখবো। এরপর আমাকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। তারা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে আনারস প্রতীকে সিল মারে।’- এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্ট ওমর ফারুক। এ দৃশ্য দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাচনের প্রায় সব কেন্দ্রেই। এদিকে ৮৩টি কেন্দ্রের ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ এনে মঙ্গলবার শাহজাদপুর উপজেলায় আধাবেলা হরতাল ডেকেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইকবাল হোসেন হিরু। সকাল সাড়ে ৯টা। গাড়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। বাইরে মহড়া দিচ্ছিল কয়েক শতাধিক আওয়ামী লীগ কর্মী। কেন্দ্রের ভেতরে সুনসান নীরবতা। কয়েকজন ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ভেতর থেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্ট রাজিব, সালমা খাতুন, সাজু খাতুন, শাহ আলম ও আরিফকে মারধর করে বের করে দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে কোন বুথেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কোন এজেন্টের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ২ নং বুথে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্ট পরিচয় দানকারী তিনজন বসে আছে। তাদের কারও আইডি কার্ড নেই। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হাফিজুর রহমান জানান, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কোন এজেন্ট আসেননি। এছাড়া, আমাদের কাছে যথেষ্ট আইডি কার্ড নেই। তাই তাদের সরবরাহ করা হয়নি। সকাল ১০টা। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইকবাল হোসেন হিরু সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন, শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ, তালগাছি ভোটকেন্দ্র, ঝিগাড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিফাতনগর, বেলতৈল, সাতবাড়িয়া, বেতকান্দি কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। এসময় যুবদল নেতা আলালকে মারধর করে তারা। এ অভিযোগ পেয়ে শাহজাদপুর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে শতাধিক আওয়ামী লীগ কর্মী মহড়া দিচ্ছেন। ভেতরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কোন এজেন্ট নেই। এব্যাপারে প্রিজাইডিং অফিসার আমেজউদ্দিনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টরা সকালে এসেছিলেন। এখন কোথায় গেছেন জানি না। এসময় দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে কেউ এ ধরনের কোন অভিযোগ করেননি। তবে ওই কেন্দ্রে আমি পরিদর্শন করেছি। আমরা শুনেছি, সকালে কিছু ঝামেলা হয়েছিল। পরে ওই কেন্দ্রে গিয়ে এ ধরনের কিছু পাইনি। এরপর ওই কেন্দ্র থেকে বের হয়ে কিছুদূর এগোতেই দেখা গেছে, কয়েক শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বুকে ব্যাজ লাগিয়ে মহড়া দিচ্ছে। তখন সাধারণ ভোটাররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওই এলাকা থেকে সরে পড়েন। বেলা ১১টা। ১ নং কুমির গোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। দুর্গম এলাকায় অবস্থিত ওই কেন্দ্রটির ভেতরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আইয়ুব ও আহমদ আলী মেম্বারের নেতৃত্বে শতাধিক কর্মী মহড়া দিচ্ছিল। তারা নিজেরাই ভোটারদের তদারক করছে। কে ভেতরে যাবে তার নির্দেশনা দিচ্ছে। বিএনপি সমর্থিত কোন ভোটার দেখলেই ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে তাদের বের করে দিচ্ছে। ভেতরে সাংবাদিকদের দেখেই ভীতসন্ত্রস্ত বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্ট আবদুল হাই বলেন, আমাকে জোর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনেই আনারস প্রতীকে একতরফা সিল মারছে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, মরতে এসেও মরতে পারিনি। এ অভিযোগ পেয়ে সাংবাদিকরা টহলরত ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করলে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। এরপর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম প্রিজাইডিং অফিসার এসএম সাইফুল ইসলামকে ডাকেন। উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিকদের সামনেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর আরেক এজেন্ট ওমর ফারুক অভিযোগ করেন, আমাকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলেন, টাকা নিয়ে চলে যান, এখানে এজেন্ট থাকার দরকার নেই। আমরাই সব কিছু দেখবো। এরপর কেন্দ্র থেকে না বের হলে আমাকে মারধর করে জোর করে বের করে দেয় তারা। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনেই আনারস প্রতীকে সিল মারে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমতা আমতা করেন। প্রিজাইডিং অফিসারের উদ্দেশে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আপনার সামনে এসব ঘটলো আপনি আমাদের অবহিত করলেন না কেন? আপনি তো একা দায়িত্ব পালন করছেন না? আপনার সঙ্গে একজন এএসআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুরো ব্যাটালিয়ন আছে। ঈমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টকে ভেতরে গিয়ে বসতে বলেন ম্যাজিস্ট্রেট। তখন ওই এজেন্ট বলেন, ভোট তো সব দিয়ে ফেলেছে। এখন আর গিয়ে লাভ নেই। ওই কেন্দ্রের ২ নং বুথে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক লোক ভোটকেন্দ্রের ভেতরে জটলা পাকিয়ে আছেন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আবু তাহের ভোটারদের ভোটার নাম্বার জিজ্ঞেস করে ব্যালট পেপার দিচ্ছেন। ভোটার নাম্বার তালিকার সঙ্গে মেলাচ্ছেন না। দু’জন পোলিং অফিসার নীরবে এ দৃশ্য দেখছেন। ভোটার নাম্বার ও নাম যাচাই করা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এর কোন সদুত্তর দেননি। দুপুর ১টার দিকে শ্রীফলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির সমর্থিত প্রার্থী মোক্তার হোসেনের কর্মী ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে ৪-৫ জন গুরুতর আহত হন। তবে মোক্তার হোসেন অভিযোগ করেন, শ্রীফলতলা কেন্দ্র থেকে আমার লোকজনকে মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। ভোট দিতে পারেননি জামায়াত প্রার্থী ভোট দিতে পারলেন না প্রার্থী নিজেই। তিনবার বাসা থেকে বের হয়েছেন ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি যেতে পারেননি। তার নেতা-কর্মীরাও রাস্তায় নামতে পারেননি। যাকে রাস্তায় পেয়েছে তাকেই মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে সরকার সমর্থকরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কোন অভিযোগই আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঘটনাটি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার। সকাল ৯টার মধ্যে এই উপজেলার সকল সেন্টার থেকে বিতাড়ন করা হয় সরকার বিরোধী প্রার্থীদের এজেন্টদের। কোন কোন কেন্দ্রে বিরোধী এজেন্টদের নির্বাচন কেন্দ্রের ধারে-কাছেও ঘেঁষতে দেয়া হয়নি। বেলা ২টার দিকে জামায়াত প্রার্থীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সকাল থেকে কয়েকবার তিনি ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন নিজের ভোট প্রয়োগের জন্য। কিন্তু পারেননি। যখনই তিনি বাসা থেকে বের হয়েছেন তখনই আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তার গতিরোধ করে। তার ছেলে আহম্মদ হোসাইন মুরাদকে কেন্দ্র থেকে মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। আব্দুস সাত্তার বলেন, তার এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও মারধর করে, কোথাও ভয়-ভীতি দেখিয়ে, আবার কোথাও কোথাও কেন্দ্রেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি তার এজেন্টদেরকে। খুনকি রূপনাই গাছপাড়া কেন্দ্রে তার তিন কর্মীকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছে সরকার সমর্থকরা। তার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ১২৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৩টি কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করা হয়। প্রশাসনের সদস্যরা তাদেরকে সহায়তা করেছে। তিনি এই অভিযোগ দেয়ার জন্য রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করেছিলেন। সেখান থেকে বলা হয়েছে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়ে আসার জন্য। কিন্তু সেখানে দরখাস্ত নিয়ে গেলে তাদেরকে অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়নি।