mahendra-singh-dhoni
mahendra-singh-dhoni

 

দৈনিক বার্তা- ভারতীয় ক্রিকেট অনুরাগী মাত্রই জানেন, অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ভালবাসেন উইনিং স্ট্রোক মারতে। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল ভারত জিতেছিল ক্যাপ্টেন কুল-এর ছক্কায়। সেই ধোনি মিরপুর মাঠে ভারতকে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার রানটা নেওয়ার সুযোগ পেয়েও নন স্ট্রাইকার বিরাট কোহলিকে ছেড়ে দেওয়ায় ওয়াকিবহাল মহল অবাক!

কেন এমন অপরিচিত কাণ্ড?
সেমিফাইনাল জয়ের স্ট্রোক মারা কোহলি সাংবাদিক সম্মেলনে এসে জবাব দিলেন, “আরে, ১৯তম ওভারের শেষ বলে যখন আমাদের আর মাত্র এক রান দরকার, আমি এমএস-কে বললাম, তুমি এই বলেই শেষ করে দিতে পারো। কিন্তু ও বলল, না ভাই, তুমিই শেষ করো পরের ওভারে। এটাই আমার তোমাকে এই ম্যাচ জেতানোর জন্য পুরস্কার। এটুকুই আমি শুধু দিতে পারি তোমাকে!” কিছুক্ষণ আগেই এই বিষয়ে টিভির সামনে ধোনি বলে এসেছেন, “বিরাট আজ ব্রিলিয়ান্ট ব্যাটিং করেছে। ওর মতো সব ফর্ম্যাটের ক্রিকেটে এত অসাধারণ ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান বিশ্বে খুব কমই আছে। ওকে তিন নম্বরে পাওয়াটা আমার কাছে পরম প্রাপ্তি। এ রকম এক জন টিমমেটকে অন্তত উইনিং স্ট্রোক মারার সুযোগ না হয় দিলাম, এই ভেবেই ১৯তম ওভারের শেষ বলটায় রান নিইনি।”

‘অসাধারণ ধারাবাহিকতা’র মধ্যেও শুক্রবারের ইনিংসটাই কি কোহলির এ যাবত টি-টোয়েন্টি কেরিয়ারের সেরা? এই মুহূর্তে দেশের এক নম্বর ব্যাটসম্যান একটু ঘুরিয়ে উত্তর দিচ্ছেন— “টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে ভাল ইনিংস আমি অতীতে খেলেছি। যেখানে আমি অনেক ভাল ভাবে বল মেরেছি। আরও জোরে মেরেছি। তবে পরিস্থিতির বিচারে, ম্যাচের গুরুত্বের কথা ভাবলে নিশ্চিত ভাবে এটাই আমার সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস।” টুর্নামেন্টে এই প্রথম ভারতীয় ব্যাটিংকে একটা সত্যিকারের ভাল টার্গেট তাড়া করতে হল। দু’টো ইনিংসের মাঝে ধোনির দলের ড্রেসিংরুমের চেহারাটা ঠিক কেমন ছিল? স্বয়ং ধোনি যার উত্তর দিয়েছেন, “কেমন আবার? একেবারে ঠান্ডা, স্বাভাবিক। বেশির ভাগ চিন্তাই ছিল ইতিবাচক। আমাদের প্রত্যেকেই পিচটা দেখেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস শেষ করে ফেরার আগে। বুঝেছিল এত দিন মিরপুর মাঠে যে পিচে আমরা খেলে আসছি তার চেয়ে সেমিফাইনাল উইকেটটা ভাল। প্রত্যেকের মনে বিশ্বাস ছিল ১৭৩ তুলতে পারব আমরা। এটা শুধু নিজের উপর বিশ্বাস, আস্থার ব্যাপারই নয়। এই দলে আমরা একে অন্যের ক্ষমতার উপরও বিশ্বাস, আস্থা রাখি।”

কোহলি যিনি নির্ঘাত যা কিছুই তাড়া করুন না কেন, তার মধ্যে নিশ্চয়ই রান তাড়া করতেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, বলায় বিরাট হাসিতে কোহলির জবাব, “আজ মাঠে সেই রকম একটা দিন ছিল, যে দিন নিজের মাথা ঠান্ডা রাখতে হত। বিপক্ষে বিশ্বমানের বোলিং আক্রমণ। সহজে বাউন্ডারি আসবে না কারণ, প্রতিপক্ষ দুর্দান্ত ফিল্ডিং সাইড। এ ধরনের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আমি টাগের্টটাকে নিজের মনে কত বলে কত রান করতে হবে-র বদলে কত ওভারে কত রান করতে হবে, এ ভাবে দেখি। যেমন, ৬০ বলে ১০০ করতে হবে-র থেকে আমার কাছে ১০ ওভারে ১০০ করতে হবে ভাবতে অনেক সহজ লাগে। নিজেকে এ রকম সময় বলি, আমাকে যত বেশি সম্ভব ওভার ক্রিজে থাকতে হবে। সে জন্য শুরুতে কিছুটা ধরে খেললেও আমি ভীত ছিলাম না। আমার প্রথম ২০ রানে কোনও বাউন্ডারি ছিল না। কিন্তু এই আত্মবিশ্বাসটা ছিল যে, পরের দিকের ওভারগুলোয় টার্গেটটা পুষিয়ে দিতে পারব। যেমন আজ নন স্ট্রাইকার রায়নাকে বলেছিলাম, চলো, ১৯ ওভারে ফিনিশ করব। আমরা চাইনি শেষ ওভারে ডেল-কে (স্টেইন) আট রান আটকাতে বল করতে হোক। কারণ, ও ছ’টাই নিখুঁত ইয়র্কার মারার ক্ষমতা রাখে।” সব পরিকল্পনা ঠিকঠাক খেটে যাওয়াতেই কি উইনিং স্ট্রোক মারার পর ওই অস্বাভাবিক শরীরী সেলিব্রেশন? বিরাট লাফ! ভয়ঙ্কর ভাবে নিজের বুক চাপড়ানো! এ দিনই চলতি বিশ্বকাপে সর্বাধিক রানের (২৪২) রেকর্ড করে ফেলা কোহলি এ বার ফাঁস করেন, “আসলে ম্যাচের আগে শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। দুর্বল লাগছিল। সে জন্য দলকে একটা ভাল ম্যাচ জেতাতে পেরে একেবারে মনপ্রাণ খুলে সেলিব্রেশনটা সঙ্গে সঙ্গে মাঠেই সেরে ফেললাম।”

ক্রিজে যাওয়ার সময় ১৭৩ তাড়া করার গেমপ্ল্যানটা কী করেছিলেন নিজের মনে? প্রশ্ন হলে কোহলির ব্যাখ্যা, “আমাদের ইনিংসের শুরুটা একটা জরুরি ইস্যু ছিল। আজ রোহিত আর জিঙ্কস (দলে অজিঙ্ক রাহানের ডাকনাম) আমাদের একটা ভাল শুরু দিয়েছে। এ রকম ভাল শুরুর ফলে তিন নম্বরে গিয়ে হাত খোলার আগে একটু থিতু হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। নইলে আজ ওপেনারদের কেউ তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গেলে ১৭৩ টার্গেটের সামনে আমাকে নেমেই চালাতে হত। নইলে পরের দিকে আস্কিং রেট অনেক বেড়ে যেতে পারত। আবার সে ক্ষেত্রে আমার আউট হওয়ারও সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকত। সেই সব সম্ভাবনার কিছুই তৈরি হয়নি ওপেনাররা ভাল খেলায়। আসলে ক্রিকেটটা খেলতে হয় যত না টেকনিকের জোরে, তার চেয়ে বেশি মানসিকতা ও পরিকল্পনার জোরে।” ফাইনালে সেই শ্রীলঙ্কা, যাদের বিরুদ্ধে তিন বছর আগে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের জয়ে কোহলির অবদান ছিল। কিন্তু সাত বছর আগে ২০ ওভারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলেই ছিলেন না কোহলি। রবিবার কাপ ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে যিনি আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে বলে গেলেন, “শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণ দুর্দান্ত। আমরা কাপটা জিততে চাই, কিন্তু তার জন্য মরিয়া নই। কিছু পেতে মরিয়া থাকলে লক্ষ্যের দিকে ফোকাসড্ থাকা যায় না। এমএস-দের আগের বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেলিব্রেশন আমি বাড়িতে বসে টিভিতে দেখেছিলাম। এ বার চাই এমএসের দলের এক জন হিসেবে মাঠেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সেলিব্রেশনটা করতে।”