1দৈনিক বার্তা : বাংলাদেশে এখন প্রতিনিয়ত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই নির্মম অত্যাচার নির্যাতনের মাধ্যমে  বেআইনী ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে নতুন করে চক্রান্ত শুরু করেছে।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। দলীয়  চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস  চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গুম-খুনের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়। একই কারণে ৪  মে সকাল-সন্ধ্যা অনশন কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

বাংলাদেশে এখন আর কেউ নিরাপদ নন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দিনদুপুরে প্রকাশ্যে একের পর এক খুন-গুম হচ্ছে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে পাঁচজনকে একসঙ্গে গুম করা হয়েছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুই করতে পারছে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, দলীয় তথ্য অনুযায়ী এক বছরে তাঁদের দলের ২৭২ জন খুন ও ২৫ জনকে গুম করা হয়েছে। অপহরণের পর কারও লাশ পাওয়া  গেছে, আবার কারও লাশই পাওয়া যায়নি। তিনি অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারের দলীয় ক্যাডারের মতো কাজ করছে। তারা মানুষকে নিরাপত্তা না দিয়ে  কেবল বিরোধী দলকে দমন ও নিপীড়ন করতে ব্যস্ত আছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করে সরকার ক্ষমতায় আছে। আন্দোলনের মাধ্যমেই এদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে হবে। এ জন্য তিনি দলীয়  নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সারা  দেশে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন,আওয়ামী লীগের অত্যাচার নির্যাতন মধ্যযুগীয় বরর্বতাকে হার মানিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব,গণতন্ত্র রক্ষা করতে ফ্যাসিস্ট জুলুমবাজ ও পশুশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে  তোলার প্রস্তুতি নিলে শীর্ষ  নেতাদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।

২০১৩ সালে জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত বিএনপির ২৭২ জন নেতাকর্মীকে খুন ও ২৫ জনকে গুম করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ফখরুল বলেন,দেশে হত্যা, গুম, অপহরণ,গ্রেফতার ও নির্যাতন যেভাবে চলছে তাতে মানুষের বাস করার পরিবেশ নেই। এদেশ মধ্যযুগীয় বর্বর দেশে পরিণত হয়েছে। এ পশুদের সরকারের পতন ঘটাতে  নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্র ব্যক্তিগত সম্পতিতে রূপ নিয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, যে-ই সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে, তাকেই হত্যা, গুম, অপহরণ,  গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যক্তিগত সম্পদের মতো ব্যবহার করে জনসাধারণের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

দেশে গণতন্ত্র নেই উলে¬খ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,নয়াপল্টন ও প্রেসক্লাবের সম্মুখে সমাবেশের অনুমতি  চেয়েছে। অনুমতি দেওয়া হয়নি। আসলে শুধু সভা-সমাবেশ  কেনো,  দেশে ন্যূনতম মত প্রকাশেরও অধিকার নেই।

তিনি বলেন, এ সরকার তাদের অতীতের চরিত্রে ফিরে  গেছে। তাদের আচরণ ৭২-৭৫ এর সময়কালের দুঃসহ শাসন আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে। তারা জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাংক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিরোধী দলের নিরপরাধ  নেতাদের বিরুদ্ধে দুদক দিয়ে মামলা করিয়ে তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রসঙ্গ তুলে ফখরুল দাবি করেন, এই টাকা সরকারের টাকা নয়, বিদেশিদের অনুদানের টাকা। এই টাকা খরচ হয়নি, ব্যাংকে পড়ে রয়েছে। অথচ আজ্ঞাবহ দুদক দিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সরকারের কর্তা ব্যক্তিরাই দুর্নীতির পাহাড় গড়েছে অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, তারা (সরকার) জানে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক খালেদা জিয়া। তিনি গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘায়েল করা গেলে হত্যা-গুম-অপহরণ- গ্রেফতার-নির্যাতন বিনা বাধায় চালানো যাবে। তাই মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির এমন  কোনো  নেতাকর্মী  নেই যার বিরুদ্ধে মামলা  নেই, কারও কারও বিরুদ্ধে শতাধিক মামলাও রয়েছে।

সরকার গণতন্ত্রের ধার ধারে না এবং এই সরকার উদ্ভট উটের পিঠে চলছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা বলেন, ভোটবিহীন কলংকিত সরকার গঠন করায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়  দেশে খুন, গুম সংঘটিত হচ্ছে।

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যর্থ হলে আপনি ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে খোকা বলেন,আসুন আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামের জন্য একে অপরকে  দোষারোপ না করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খালেদা জিয়ার  নেতৃত্বে পাড়ায়, মহল¬ায়, গ্রামে গঞ্জে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করে সরকারের পতন নিশ্চিত করি।

সংগঠনের আহবায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক  হোসেন খোকার সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল¬াহ আল নোমান,চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু,সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন,আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড.আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন  চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।