1দৈনিক বার্তা : দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে নিজে অসন্তুষ্ট হলেও পদত্যাগের খবর ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। সোমবার একটি অনলাইন সংবাদপত্রে পদত্যাগের খবর প্রকাশ হওয়ার পর এরশাদকে টেলিফোন করা হলে তিনি বলেন,আমি  কেন পদত্যাগ করব? আমি পার্টির সুপ্রিম অথরিটি। আমি কার কাছে পদত্যাগপত্র  দেব? সবকিছুর  তো একটা সিস্টেম আছে।

দলের  চেয়ারম্যান হিসেবে পদত্যাগের প্রক্রিয়া কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যদি পদত্যাগ করতে চাই, তাহলে পার্টির  প্রেসিডিয়াম কমিটির মিটিং আহ্বান করতে হবে,  সেখানে আলোচনা করে আমি অব্যাহতি নিতে পারি।আমি কিছুটা অসন্তুষ্ট, কিন্তু এই মুহূর্তে পদত্যাগের  কোনো সিদ্ধান্ত আমার  নেই, বলেন জাপা  চেয়ারম্যান এরশাদ।

অসন্তুষ্টির কারণ জানতে চাইলে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে সাবেক এই সামরিক শাসক বলেন, সেটা আমি  তোমাকে  কেন বলব?অনলাইন সংবাদপত্রটিতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে,এরশাদ দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

বাবলুর সঙ্গে  যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন খবর।আমার কাছে কোনো চিঠি আসেনি, বলেন তিনি।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতা-কর্মীদের  তোপের মুখে জাতীয় পার্টির  চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে চাইছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

তিনি নেতা-কর্মীদের বলেছেন, আমার যদি এত দোষ হয় তবে তোমরাই দলের দায়িত্ব নিয়ে  চেয়ারম্যান পদ অন্য কাউকে বুঝিয়ে দাও। আমার অনেক বয়স হয়েছে, শরীরের অবস্থাও ভালো না। তোমরা পারলে সহযোগিতা করো, না হলে পদ  ছেড়ে  দেব।

গত  রোববার রাজধানীর গুলশান  ¯েপ্রকট্রা কনভেশন  সেন্টারে জাতীয় পার্টির  যৌথ সভায় দলের  চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ  নেতা-কর্মীদের এসব কথা বলেন। সভা সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার একাধিক  নেতা বলেন, এরশাদ নিজেই আর  চেয়ারম্যান পদে থাকতে চান না। থাকবেন কীভাবে, মঞ্জুর হত্যা মামলায় ঝুলে আছেন। সরকারও চান জাপার  চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন। তিনি এই বয়সে  জেলে  যেতে রাজি নন। তবু তিনি চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে রাজি আছেন। এই জন্যই তিনি আর সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে চান না।

প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, স্যারের (এরশাদ) কাছে সমস্যার কথা বলার সুযোগ পাই না। কমিটি  তৈরি হয়ে যায়, কিন্তু আমরা জানতেও পারি না।  সেখানেও নাকি টাকা-পয়সার লেনদেন হয়। এরশাদ নিজেও ভালোভাবে কমিটির সদস্যদের  চেনেন না। তাই সব বন্ধ করা উচিত।

প্রেসিডিয়াম সদস্য  গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, স্যার (এরশাদ)  নেতা-কর্মীদের প্রতি আন্তরিক নন। নিজেকে রক্ষা করতে ব্যস্ত। তাই  চেয়ারম্যান পদ পরিবর্তন হওয়া জরুরি।

রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির এক  নেতা বলেন, জাতীয় পার্টির এ করুণ অবস্থার জন্য স্যার (এরশাদ) নিজেই দায়ী। তিনি নিজেই দলকে ধ্বংস করে দিয়ে যাচ্ছেন। কারণ তিনি সকালে এক কথা, বিকেলে বলেন আরেক কথা।  দেশের মানুষ স্যার (এরশাদ) অনেক জনপ্রিয় ছিল। সেই জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোটায়।

সভায় রওশন এরশাদ বলেন, তৃণমূলের  নেতা-কর্মীরাও ক্ষুব্ধ। বহু চেষ্টা করেও  চেয়ারম্যানের সাক্ষাত পানা না তারা। দলে এমন চেয়ারম্যান থাকাও ঠিক না।  নেতা-কর্মীরা  চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না এটা  কেমন কথা। এভাবে দল চলতে থাকলে জাপা হয়ে পড়বে নেতা-কর্মীশূন্য। তাই সবার সঙ্গে আন্তরিকতা থাকতে হবে।

তিনি বলেন,  চেয়ারম্যানের উচিত সবাইকে সময় দেয়া। কোনো ব্যক্তি অন্যায় করলে তার ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সিদ্ধান্ত না নিলে, শাস্তি না দিলে পার্টি ধ্বংস হয়ে যাবে।