মনির/দৈনিক বার্তা : দেশের সর্বধিক গুণগত মান সম্পন্ন পাট উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে ক্যাত ফরিদপুরের পাট চাষীরা ভালো নেই। একদিকে টানা খরা অন্যদিকে ছানা পোকার আক্রমনে ফলন বিপর্যয়ের শংকায় দিন কাটাচ্ছেন জেলার পাট চাষীরা। বারবার ঔষধ প্রয়োগ করেও পোকা দমন করতে না পেরে হতাশ চাষীরা। এতে এবছর পাট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
টানা খরার কারণে জমিন ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। প্রচন্ড শক্ত মাটি ফুঁড়ে মাতা তুলে দাঁড়াতে পারছেনা জমিনের পাটের গাছ। প্রায় এক মাস আগে চাষীরা পাট বুনলেও এখনো তা বৃষ্টির অভাবে বাড়তে পারেনি। কিছু কিছু চারা গজালেও কচি পাটের চারাগুলো রৌদ্রের খরতাপে শুকিয়ে যাচ্ছে।
এর সাথে পাট আবাদে বাড়তি এর প্রতিবন্ধকতা হিসেবে সাথে যোগ হয়েছে ছানা পোকার আক্রমন। দিনের বেলায় মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা এসব পোকা সন্ধ্যা হলেই মেতে ওঠে পাটের পাতা ও কান্ড ভক্ষণের মহোৎসবে। পাট গাছের কচি পাতা ও কান্ড খেয়ে ফেলায় চারাগাছগুলো মরে যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে ছানাপোকা নামে পরিচিত কীটগুলো ভেঙ্গে দিচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন । পোকায় পাটের ডোগা ও পাতা কেটে ফেলায় ফলন বিপর্য়য়ে পড়বে কলে ফরিদপুরের পাটচাষীদের দাবী।
ফরিদপুরের পাটচাষীদের দাবী, অনেক জমিন পতিত থাকলেও লোকসানের শংকায় তা আর এবছর আবাদের আওতায় আনছেননা। মেশিন দিয়ে পানি দিয়েও খরার কারণে কোন লাভ হচ্ছেনা। এমনকি চাষীদের দাবী, দুর্দিনে পাশে নেই মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তারাও।
ফরিদপুর পাট গবেষনা আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাঠ পর্যবেক্ষক (এফআই) সুবোধ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পোকার আক্রমন থেকে বাঁচতে রাতের বেলায় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ স্প্রে করার পরামর্শ পাট বিশেষজ্ঞদের।
ফরিদপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম সূর্যুল আমিন জানান, এবছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা পাটের ফলনে প্রভাব ফেলছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর ভৌমিক বলেন, লেদা বা ছানা পোকা দমনে উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে স্কোয়াড গঠন করে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর ভৌমিক। তিনি জানান, খরার কারণে পাটচাষীরা ক্ষতির স্বিকার হয়েছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে পাটের ফলনে প্রভাব পড়বে।
চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় ৭৫ হাজার ২শ’ ৬৩ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৬৪ হাজার ৬শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে। পাটের ভাল ফলনের জন্য আবাদের শুরুর দিকে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে জমিতে তিনটি “জো” আসা প্রয়োজন। কিন্তু এ বছর পাট চাষাবাদের মৌসুম প্রায় পার হওয়ার উপক্রম হলেও দেখা মিলছে বৃষ্টির। তাই প্রভাব পড়বে ফলর ও মানে। ফলশ্রুতিতে ফরিদপুর অঞ্চলের উৎপাদিত পাটের বিশ্বব্যাপী সুনাম থাকলেও প্রচন্ড খরায় সে ঐতিহ্য ধরে রাখা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।