1দৈনিক বার্তা : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)ওবাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-এর উদ্যোগে তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে করণীয় নির্ধারণে পরামর্শ সভায় আলোচকবৃন্দ বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টনের সমস্যা সমাধানের সাথে সাথে ভারতের সাথে ৫৪টি অভিন্ন নদীসহ ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনের সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে, প্রয়োজনে বহুপাক্ষিক পর্যায়ে এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে মীমাংসার উদ্যোগ নিতে হবে। ১৯৯৭ সালের নদী ও পানির প্রবাহ ব্যবহার সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশনে গৃহীত নীতিমালায় বাংলাদেশকে স্বাক্ষর করতে হবে। বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানকে নিয়ে যৌথ অববাহিকা কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। পানি বিজ্ঞানের সূত্র, আন্তর্জাতিক নীতিমালা এবং ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে তিস্তাসহ সকল নদীর পানি বণ্টনের সুরাহা করতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে পরামর্শ সভায় আলোচনা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন, জাতিসংঘের সাবেক কনসালট্যান্ড প্রকৌশলী এস আই খান, পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. এনামুল হক, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ফিরোজ আহমেদ, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্য় পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন নান্নু প্রমুখ।

পরামর্শ সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো, সাজ্জাদ জহির চন্দন, আহসান হাবিব লাবলু, শাহ আলম, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, আশরাফ হোসেন আশু, মাহাবুব আলম, আব্দুল কাদের, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।

আলোচকরা বলেন, শুধু তিস্তা নয়, ভারত থেকে আসা ৫৪টি নদীর উজানে ভারত একতরফাভাবে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশ আজ মরুকরণের হুমকির মুখে। পদ্মার উজানে ফারাক্কা বাঁধের মারাত্মক ক্ষতিকর অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ এবং আন্তঃনদীসংযোগ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। চীন কর্তৃক ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎসমুখে চীন বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এইসব প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশের উপর ভয়ঙ্কর রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসবে। বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। নদী কেবল বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতিতে ঠাঁই নেবে।

আলোচকবৃন্দ আরো বলেন, ভারত তিস্তার ৬৫ কি.মি. উজানে গজলডোবায় ব্যারেজ নির্মাণ করে তিস্তার পানির ৮৫% প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে তিস্তা পরিণত হয়েছে ধুঁ ধুঁ প্রান্তরে। তিস্তা দিয়ে যেখানে শুষ্ক মৌসুমে ৫ থেকে ৮ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো, সেখানে এই শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা দিয়ে পানি এসেছে মাত্র ৫০০ কিউসেক। এই পানি স্বল্পতার কারণে, সেচ সুবিধার অভাবে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চিটা হয়ে গেছে। কৃষক ও দেশ ৪২৭ কোটি টাকার প্রত্যক্ষ ক্ষতির মুখে পড়েছে।

আলোচকবৃন্দ বলেন, তিস্তাসহ ভারত থেকে আসা ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশের আইনসংগত প্রাপ্য। উজানের দেশ ভারত ভাটির দেশ বাংলাদেশের সাথে কোনো আলাপ-আলোচনা না করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করছে, যা আন্তর্জাতিক নদী ব্যবহার সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের হেলসিংকী নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর এবং আশুগঞ্জ নৌবন্দর ভারতকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি এবং রামপালে সুন্দরবন ধ্বংস করে ভারতের সাথে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি ও সাগরের দুটো ব্লক ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। অথচ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারছে না। একদিকে ভারতের শাসকগোষ্ঠী উজানে পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে তাদের সংকীর্ণ স্বার্থ হাসিল করছে, অন্যদিকে আমাদের শাসকগোষ্ঠীর নতজানু নীতির কারণে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারছি না। ফলে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক ক্ষুণœ হচ্ছে। লাভবান হবে দুই দেশের প্রতিক্রিয়াশীল মহল ও বুর্জোয়া শাসকগোষ্ঠী। দুই দেশের শাসকগোষ্ঠীর জনস্বার্থ ও প্রকৃতি-পরিবেশ বিরোধী কর্মকা-ের ফল ভোগ করতে হচ্ছে দু’ দেশের মানুষকে।

পরামর্শ সভা থেকে অভিন্ন নদীর পানির উপযুক্ত ও সকলের জন্য কল্যানকর ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুই দেশের জনগণের ব্যাপক ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। একই সাথে চলমান পানি বণ্টন বিষয়ে ন্যায়সঙ্গত সমঝোতার স্বপক্ষে সোচ্চার হওয়ার জন্য ভারতের বামপন্থী, গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশের মানুষের জীবন-মরণ এই সমস্যার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।