1দৈনিক বার্তা– মানবীয় মমতায় সভ্যতা হয়ে উঠে সহনশীল , মানবের জন্য সুখময়। মানবসেবা বড় সেবা। এ সেবার ধর্ম যারা ধারণ করেন তারা হন মহীয়সী, মানব সভ্যতার আইকন। ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল। মানব সেবার আইকন, সভ্যতার অহংকার ও গর্ব। আধুনিক নার্সিং এর অগ্রদূত এই নারীর জন্ম ১৮২০ সালে ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্সে কলোম্বিয়া ভিলায় এক অভিজাত পরিবারে। ফ্লোরেন্স শহরের নামানুসারে তার নাম রাখা হয় ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল। অভিজাত পরিবারে জন্ম নিলেও তিনি মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন ভোগ বিলাসের বাহিরে। যুদ্ধাহতদের সেবাই ছিল তাঁর প্রধান ব্রত। একাধিক বই লিখেছেন নার্সিং এর উপরে। তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন নার্সিং অর্থ পেশা নয় বরং সেবা। নার্সিং এর উপরে তিনি সহজ ভাষায় বই লিখতেন যাতে সবার বোধগম্য হয়। তার সারাজীবনের উদ্দেশ্য ছিল একটাই- মানবসেবাকে প্রসারিত করা। ‘লেডী উইথ ল্যাম্প’ খ্যাত ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল ঘুরে বেড়াতেন বিভিন্ন জায়গায় কোথায় কিভাবে একটু সেবা করা যেতে পারে তার সন্ধানে। নার্সিং প্রশিক্ষণকে বৃহৎ পর্যায়ে নেয়ার জন্য তিনি অর্থ সংগ্রহ করতেন।
১৮৫৯ সালে তিনি প্রচুর পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করতে সক্ষম হন তার নাইটেঙ্গেল ফাউন্ডেশনের নামে।  ১৮৮৩ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া তাকে ‘রয়েল রেডক্রস’ পদক প্রদান করেন। ‘অর্ডার অব মেরিট’ খেতাব লাভ করেন ১৯০৭ সালে প্রথম নারী হিসাবে। ১৯০৮ সালে লাভ করেন লন্ডন নগরীর ‘অনারারি ফ্রিডম’ উপাধি।
ক্রিমীয় যুদ্ধের সময় আহত সৈন্যদের সেবার মাধ্যমে নার্সিংকে তিনি যে উচ্চতায় নিয়েছিলেন তাতে তাকে শুধু আলোকবর্তিকা বললে হয়তো যথপোযুক্ত হবেনা- মানবের জন্য সেবার চেয়ে বড় কিছু যে হতে পারেনা তারও তিনি রোল মডেল। ক্রিমীয় যুদ্ধের পর আহতদের পাশে তিনি অন্তত দুই শতাধিক পরিচারিকাকে একই কাজে যোগ দেয়াতে সক্ষম হয়েছিলেন।  তিনি বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন সৃষ্টিকর্তা তাকে পাঠিয়েছেন একমাত্র ব্যাথিতদের পাশে দাড়ানোর জন্যই। আর তাইতো পরিবার থেকে মা ও বোনের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও মানব সেবার সিদ্ধান্তে তিনি অটল ছিলেন। অনেক বড় বড় মনীষী তাকে ঈশ্বরের দূত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যে দূতের যুদ্ধাহতদের সেবার বাইরেও কাজ ছিল ক্ষুধামুক্ত এক সমাজ বিনির্মাণের। বর্তমান সময়ে যারা নার্সিং পেশায় নতুন আসেন তারা ‘নাইটিঙ্গেল প্লেজ’ নামে একটি শপথ গ্রহণ করে তার প্রতি সম্মান জানান।

নাইটিঙ্গেলের জন্মের অনেক আগে থেকেই নার্সিং পেশাকে অনেক ছোট কাজ মনে করা হত। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই সেবাটা মানুষের মণিকোঠায় জায়গা দখল করে রেখেছে। নার্সিংকে, মানবসেবাকে আরও বেশি উজ্জীবিত করার জন্য তার অডিও বার্তা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮৯০ এর দিকে যা এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। নাইটিঙ্গেল ডাক্তারির চেয়ে গুরুত্ব দিতেন বেশি নার্সিংকেই।
নাইটিঙ্গেলের কি শুধু যুদ্ধাহতদেরই সেবা করেছিলেন? না তিনি নারীদের মুক্তি নিয়েও সংগ্রাম করেছেন। কলম ধরেছেন। Suggestions for Thought to Searchers after Religious Truths  (১৮৫৯)  নামে বই লিখেছেন। পেশা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নারীদেরকে যে সমস্থ বাধার সন্মুখীন হতে হয় তার বইয়ের বিষয়বস্তু ছিল সেসব।
মানুষের জীবন চিরস্থায়ী নয়। এক সময় তাকে চলে যেতে হয়ই। কিন্তু চিরস্থায়ী হয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নেয় তার কর্ম, কর্মফল। নাইটিঙ্গেল- যিনি ঝড় , বৃষ্টি, তুষারপাতকে অগ্রাহ্য করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন, আহতদের সেবা দিতেন। এভাবে চলতে চলতে তার শরীর বয়সের ভারে এক সময় নিস্তেজ হয়ে যায় । ১৮৯৫ সালে তিনি অন্ধ হয়ে গেলেন!
সে সাথে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পড়েছিল। পঙ্গুত্ব বরণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এই মানবসেবার আলোকবর্তিকা। শারীরিক যন্ত্রণা নিয়ে তিনি বেঁচে ছিলেন আরও ১৫ টি বছর । ১৯১০ সালে ১৩ আগস্ট তিনি পরলোক গমন করলেন, রেখে গেলেন তার সুকর্মের অজস্র স্মৃতি। আজ তার জন্মবার্ষিকী । তার প্রতি সন্মান জানাতে বিভিন্ন দেশে অনেক আগে থেকেই নির্মাণ করা হয়েছে নাইটিংগেলের মূর্তি। লন্ডনের ওয়াটার লু তে আছে দৃষ্টিনন্দন Statue of Florence Nightingale ।  তার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। আমাদের দেশে, সমাজে এমন নাইটিংগেলের প্রয়োজন খুব বেশি। যুদ্ধ নয়, কোন হানাহানী নয় আমরা চাই শান্তি। ঘরে ঘরে একজন করে নাইটেঙ্গেলের জন্ম হোক।