3মনির/দৈনিক বার্তা — ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে মায়ের সামনে থেকে ফিল্মি ষ্টাইলের এক কলেজ ছাত্রীকে অপহরণের পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। বোয়ালমারী সরকারী ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়ার সময় রোববার সকালে অপহরনের শিকার সাবিহা রহমান মিস্টিকে আগেও একবার অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
জানা গেছে, গত ৬ মে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তিনশ গজ দুরের বাবার অফিসের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসায় ফেরার সময় মাঝামাঝিস্থানে বাসা ও কেন্দ্রের দেড়শ গজের মধ্যে একটি মাইক্রোবাসে জোর করে উঠিয়ে সাবিহা রহমান বৃষ্টিকে অপহরণের চেষ্টা করে বখাটে আশরাফুর রহমান লিখন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। কিন্তু মাইক্রোবাসটি স্টার্ট না হওয়ায় সৌভাগ্যক্রমে সে যাত্রায় চিৎকার চেঁচামেচি করে রক্ষা পায় বিএডিসির প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমানের কন্যা সাবিহা রহমান বৃষ্টি। এরপর থেকেই বাসা থেকে দেখতে পাওয়া কলেজ কেন্দ্রটিতে এগিয়ে দিয়ে আসতেন মা। কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা। ১১ মে যথারীতি মা তার কন্যাকে নিরাপত্তা দিতে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন কেন্দ্রে। ঠিক মাঝামাঝি ওই স্থানে পৌছানো মাত্রই মায়ের উপর হামলা করে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় মিষ্টিকে। অসহায় মা চিৎকার করলেও রুখতে পারেনি অপহরণকারীদের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মেয়েটিকে। কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই ফিল্মি স্টাইলে ঘটে যায় ঘটনাটি।
অপহৃতের মা জানায়, সতর্ক থেকেও নিজের সন্তানের নিরাপত্তা দিতে পারেনি তিনি। চোখের সামনে থেকে বুকের ধনকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারছেননা ওই গর্ভধারিনী মা।
অপহৃতের বাবা বিএডিসির প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, কামারগ্রামে অবস্থিত কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজে পড়তেন সাবিহা রহমান মিষ্টি। কলেজে আসা যাওয়ার সময় উত্তাক্ত করতো লিখন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
এলাকায় বসবাসকারী মোঃ জাকির হোসেন বলেন বারবার ঘটনা ঘটালেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে বখাটে লিখন। তাই এঘটনার বিচার দাবী করেন এলাকাবাসীর পক্ষে।
মানবাধিকার কর্মী ও সম্পাদক বোয়ালমারী বার্তা’র সম্পাদক এ্যাড. কোরবার আলী বলেন, দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও অপহৃতকে দ্রুত উদ্ধার না করা হলে বৃৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এদিকে সোমবার বিকালে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সরকারী কলেজের সামনে থেকে কলেজ ছাত্রীকে অপহরণের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে সন্দেহে পুলিশ একটি মাইক্রোবাস (নং ঢাকা মেট্রো-চ- ৫৪-০৬৭৮) সহ ওই মাইক্রোবাসের চালক ও মালিককে আটক করেছে। সোমবার বিকালে তাদের বোয়ালমারী চৌরাস্তা এলাকা থেকে আটক করা হয়।
আটককৃত চালকের নাম মোঃ আবু বক্কার সিদ্দিকী (২৫)। সে উপজেলার চর শেখর গ্রামের মোঃ টোকন সরদারের পুত্র। আর মালিকের নাম মোঃ আশরাফুল আলম (৩২)। সে উপজেলার চরবর্ণী মোঃ আফসার মোল্লার পুত্র।
অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ উপ-পরিদর্শক এস.এম. রায়হান জানান, জব্দকৃত মাইক্রোবাসটি অপহরণের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে। তিনি আরো জানান, আটক ব্যক্তিদেরও অপহরণের সাথে যোগসাজস রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমীন জানায়, খবর পেয়েই সর্বত্র ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অপহৃতকে উদ্ধারে ব্যপক অভিযান চালানো হচ্ছে। অপহৃতকে উদ্ধারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
শুধুই সান্ত¦নার বানী নয় অবিলম্বে মিষ্টিকে উদ্ধারের পাশাপাশি সকল নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী সচেতন নাগরিকদের।