দৈনিক বার্তাঃ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অভিবাসন ব্যয় শূন্যের কোঠায় আনা হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। রোববার বেলা ১১ টায় ঢাকার ইস্কাটন রোডের প্রবাসী কল্যাণ ভবনের নিজস্ব কার্যালয়ে এ কথা জানান তিনি।অভিবাসন ও শ্রম বাজার নিয়ে সম্প্রতি বিদেশ সফর শেষে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
মন্ত্রী বলেন,দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অভিবাসন ব্যয় সবচেয়ে বেশি।এটা হয়ে থাকে মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালদের কারণে। ফলে নানারকম ঋণে জড়িয়ে পড়েন কর্মীরা। বিদেশে গিয়ে অবৈধভাবে থাকতে বাধ্য হয় কর্মীরা।কখনো আবার অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। বিয়ষটি গুরুত্ব দিয়ে অভিবাসন ব্যয় কমানোর বিষয়ে আগ্রহী হয়েছে সরকার।
মন্ত্রী আরো বলেন, গত পাঁচ বছরে ৫ লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে গিয়েছে। যা জোট সরকারের আমলে দুই থেকে আড়াই লাখের মতো ছিল। বিগত সরকারের আমলে ৯৭ দেশে লোক পাঠানো হতো। এখন ১৫৯ দেশে যাচ্ছেন কর্মীরা। খুব শিগগিরই সৌদি আরবের শ্রম বাজার খুলছে বলে জানান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি।
সৌদি আরবে শ্রম বাজার বন্ধ হয়নি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অভিবাসন ও মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কারণে সৌদি আরবে শ্রম বাজার সীমিত হয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি।তিনি বলেন, অল্প অল্প কওে শ্রমিকরা যাচ্ছেন। কয়েক দিন আগেও প্রায় দুই হাজার লোক গেছেন। কিছুদিনের মধ্যে আরও দেড় হাজার যাবেন।
সৌদি আরব কিছুদিনের মধ্যে বিপুল সংখ্যক লোক যাবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,সৌদি আরবের তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে শ্রমিক পাঠাতে প্রস্তুত বলে মত দিয়েছে।এতে অল্প দিনের মধ্যেই অনেক লোক নেবে সৌদি সরকার। তবে ভিসা ট্রেডিং বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি জানান, শূন্য অভিবাসন ও নিয়ম-নীতির মাধ্যমে গত একবছরে ১৭ হাজার ৪শ’ টাকায় প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার লোক গেছেন সৌদি আরবে। সৌদি আরবে মার্ক ভাইরাস আক্রান্ত শ্রমিকদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি-না- এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সে দেশে প্রায় ২৫ লাখ বাঙালি রয়েছেন। সৌদি সরকারের সঙ্গে আমরাও শ্রমিকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি।
মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে প্রফেশনাল ভিসা ও ভিসা ট্রেডিং বন্ধে কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় বেসরকারিভাবে লোক পাঠাতে হলে নিয়ম-নীতি মেনে পাঠাতে হবে।
কুয়েত,ডেনমার্ক, আবুধাবি,আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করছে বলে জানান মন্ত্রী।ইরাক ও লিবিয়ায় কর্মী প্রেরণে নিরাপত্তা বিষয় ও বিমার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেসব দেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে সেসব দেশে আমরা কর্মী ছাড়পত্র দেই না। তবে বিমার বিষয়ে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বিভিন্ন দেশে কর্মী পাঠাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত হাসপাতাল অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে- এমন অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মেডিকেল সনদে মাত্র ১২শ’ টাকা আমরা নির্ধারণ করেছি।এর বেশি যারা নিচ্ছে তাদের বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
হংকং থেকে নারী গৃহকর্মীরা নির্যাতিত হয়ে দেশে আসায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ৩০ জনের একটি ব্যাচ ফিরে এসেছে।তাদের প্রশিক্ষণ দূর্বলতা ছিল বলে স্বীকার করেন তিনি। তবে অন্য কোনো ব্যাচে এমন দুর্বলতা থাকবে না বলে আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
বর্তমান সরকারের আমলে কর্মী পাঠানোর হার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের চেয়ে বেড়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জোট সরকারের সময় বৈশ্বিক মন্দা ছিল না। কিন্তু জনশক্তি রফতানি ছিল বছরে মাত্র দুই থেকে আড়াই লাখ। বর্তমানে বছরে প্রায় ৫ লাখ কর্মী যাচ্ছেন। প্রতি বছর এক থেকে দেড় লাখের বেশি কর্মী ফেরত আসছেন না।
কর্মী পাঠানো কমে গেলে রেমিটেন্সে ভাটা পড়ছে এমন অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোনো মাসে কম, কোনো মাসে বেশি কর্মী যাচ্ছেন। এতে রেমিটেন্সে প্রভাব পড়ছে না।তবে ভিসা ট্রেডিং ও দালালের দৌরাত্ম্য কমলে রেমিটেন্স বাড়বে বলে আশা করেন তিনি। শ্রম বাজার কোনোদিন মুখ থুবড়ে পড়বে না।
বেসরকারি খাতের মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি খাতের প্রতি আমাদের কোনো বিধি-নিষেধ নেই। নিয়ম-নীতি মেনে পাঠালে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত শ্রমিকদের নিতে হবে।