100দৈনিক বার্তাঃ খালেদা জিয়াকে ঢাকায় কোন সমাবেশ করতে দেবে না সরকার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়া  যেদিন চাইবেন সেদিনই জনগণকে সাথে নিয়ে ঢাকায় সমাবেশ করবেন।

তিনি বলেন,আওয়ামী লীগ আজ দেশকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছে। র‌্যাবের মতো একটা ইউনিফর্মধারী বাহিনী পাড়ায়-মহল্লায় মানুষ খুন করছে। এটা অকল্পনীয়।তিনি সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরো বলেন, অহমিকা নিয়ে কথা বলবেন না। ফ্যাসিষ্ট সরকারকে কিভাবে  মোকাবিলা করতে হয় জনগণ তা জানে।

জিয়াউর রহমানের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয়  প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত শহীদ জিয়া, বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র শীর্ষক আলোচনা সভায়  দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা: এ  কেএম আজিজুল হক। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপি’র ভাইস  চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, ড্যাবের মহাসচিব ডা: এজেড এম জাহিদ হোসেন।

একটি পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে ফখরুল বলেন, সরকার নাকি খালেদা জিয়াকে ঢাকায় সমাবেশ করতে  দেবে না। খালেদা জিয়ার দুটি অনুষ্ঠানে সরকার বাধা দিয়েছে। তারপরও তিনি কথা বলেছেন।সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, এ ধরনের চিন্তা মাথা  থেকে দূর করুন। অহমিকা ত্যাগ করুন। হিটলার, নমরুদ, ফ্যারাউন, ইয়াহিয়া  কেউই ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি।

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আপনারা অহমিকা দেখান। ঢাকায় সমাবেশ করতে দিতে চান না। কিন্তু খালেদা জিয়া  যেদিন চাইবেন সেদিনই ঢাকায় সমাবেশ করবেন।  দেশবাসী খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছে।

সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য হত্যা-গুম করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আগে বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করা দরকার। এর পর সবাইকে নিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন করবেন। এখন বলছেন, ৫ বছরই থাকবেন।বাকশাল গঠনের উদাহরণ টেনে ফখরুল বলেন,  কেউ চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি করছেন, খুন করছেন। নিজেরা মারামারি করছেন।  দেশের আইন-শঙ্খলা ধ্বংসের পথে। ব্যাংকগুলো লুট করছেন।  দেশে বিনিয়োগ নাই। পদ্মাসেতু আপনাদের কমিশনের কারণে হয়নি। এখন নিজেরা করবেন। কারণ কমিশন  বেশি আসবে।

ফখরুল বলেন, জিয়াকে আপনারা  হেয় করছেন। কিন্তু আপনারা যখন পালিয়ে গিয়েছিলেন তখন জিয়াই  ঘোষণা দিয়ে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছেন। আপনারা যতোই আইন করে স্বাধীনতার  ঘোষক বানান না  কেন লাভ হবে না। জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এই জিয়াউর রহমানই  শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে নতুনভাবে আওয়ামী লীগ গঠন করে  দেন। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও গণতন্ত্র হত্যা করেছে। এজন্য জনগণের সঙ্গে নানা ছলচাতুরি করেছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বলেছিল সংবিধান রক্ষার জন্য তারা একটি নির্বাচন করছে। দ্রুতই সবার অংশ অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করা হবে। কিন্তু তারা (সরকার) এখন বলছে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে।

তিনি বলেন, বললেই কী ক্ষমতায় থাকা যায়। ১৪ আগস্ট কি  কেউ  ভেবেছিল ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি হবে?বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দাবি করেন, আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম হয়েছে জিয়াউর রহমানের হাতে।  শেখ হাসিনাকে  দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জিয়াই সবচেয়ে বড় ভূমিকা  রেখেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি শেখ মুজিবের ভূমিকা খাটো করে  দেখে না। জিয়াউর রহমানের ভূমিকাও খাটো করে  দেখার সুযোগ নেই।এ সরকারের আমলে কিছু পাঠ্য পুস্তকে জিয়াউর রহমানকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

৫ জানুয়ারি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গায়ের  জোরে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।ফখরুল আরো বলেন, বিরোধীদলীয়  নেতা-কর্মীদেরকে হত্যা, গুম, অপহরণ,  গ্রেফতার ও নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে  দেশকে ভয়াবহ  নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে  দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের ধারাবাহিক নীতি- নৈতিকতা বিরোধী, নির্মম ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড  থেকে  কোনো বিচ্ছিন্ন বা আলাদা ঘটনা নয়।তিনি বলেন, বিরোধী দলের  নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও হাস্যকর মামলা দায়ের করে  গ্রেফতারের মাধ্যমে তাদের উপর জুলুম-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এভাবে একটা  দেশ চলতে পারে না, চলতে  দেওয়া যায় না।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে  মেজর হাফিজ বলেন, আপনারা তো মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন। কিন্তু ভেজাল  সোনার  ক্রেস্ট দিয়ে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করেছেন তাতে প্রমাণ হয়, আপনারা মুখেই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন।বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান  মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম বলেছেন,  শেখ সাহেবের ললাটে  যে ভাগ্যলিপি হয়েছিল তার  চেয়েও করুণ পরিণতি হবে বর্তমান সরকারের।

মেজর হাফিজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা  ক্রেস্টে স্বর্ণ চুরির ঘটনা না ঘটলে আওয়ামী লীগকে কখনোই  চেনা  যেতো না। ওরা মুক্তিযুদ্ধের  চেতনাকে  ফেরী করে চলে।  সোনার নামে বিদেশি ভদ্রলোকদের যা দিয়েছেন তা নিশ্চয়ই কাল হয়ে  গেছে, কারণ  ক্রেস্টে  সোনা ছিল না।  ক্রেস্টের মধ্যে যেমন সোনা ছিল না তেমনি আওয়ামী লীগের মধ্যেও মুক্তিযুদ্ধ  নেই। এরা জাতির কপালে কলঙ্ক  লেপন করেছে। এদের বিচার অবশ্যই হবে।

মেজর হাফিজ বলেন,গণতন্ত্রের নামে আন্দোলন কি নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে মানুষ তাকে  দেখেছে। উত্তপ্ত সীসার বুলেট যুবকদের বুকে বিদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন দেশে এমনটা কখনো কামনা করিনি। যুবকদের ধরে নিয়ে আসতে না  পেরে বাবা-মা- বোনদের ধরে থানায় নিয়ে এসেছে। এ অত্যাচার পাকিস্তান বাহিনীও করেনি, যা এরা করছে।