1দৈনিক বার্তাঃ   দলের প্রধানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) ক্যান্সার বলে অভিহিত করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।

তিনি বলেন,দেশে সরকার বলে কিছু নেই ।বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে গুম খুন বেড়েছে। এসময় তিনি হুশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, গুলির মুখেই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে এ সব কথা বলেন ফখরুল। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির  চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপি  চেয়ারপারসন  বেগম খালেদা জিয়া মঞ্চে নয়, দর্শক সাড়িতে বসে জিয়াউর রহমানের ৩৩ শাহাদাৎ বার্ষিকীর আলোচনা শুনেন।বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর ইন্সটিটউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সে পবিত্র  কোরআন  থেকে  তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় এ সভা। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বিএনপি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং পরিচালনা করন দলের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক। বক্তৃতা রাখেন বিকল্পধারার সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা  চৌধুরী, এলডিপির  চেয়ারম্যান অলি আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, এমকে আনোয়ার, জমির উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ,  রফিকুল ইসলাম খান, নজরুল ইসলাম খান,  ভাইস  চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর,  সেলিমা রহমান প্রমুখ।

বিএনপির  চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুধবার মুন্সিগঞ্জের সভায়ে র‌্যাবকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করে এর সংস্কার সমাধান আনবে না বলে মত  দেন।ফখরুলও  সেই সূত্র ধরে বলেন, র‌্যাব এখন ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। এর  কোনো সংস্কার করে লাভ হবে না।  এ সময় র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের দু:শাসনের বিকৃত চেহারাটা প্রতিদিন গণমাধ্যমে কোন না কোনভাবে অনাবৃত হয়ে পড়ছে। দলবাজী ও দুর্বৃত্তপনার চরম প্রকাশ জনসমাজে এক ভয়ংকর অ¯ি’রতা সৃষ্টি করেছে। নিত্যদিন বেছে বেছে খুন, গুম, অপহরণ, ব্যাপক নির্যাতন, নারকীয় অত্যাচার, নির্বিচারে গ্রেফতার,আইন শৃঙ্খলার নামে বিরোধীদের কন্ঠরোধ, মতাসীনদের বেপরোয়া কদর্য দায়িত্বজ্ঞানহীন ও রুচিহীন আপত্তিকর উক্তি, জনগণের সম্পত্তি লুটপাট করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়া হচ্ঠেছ বর্তমান অবৈধ সরকারের মুখাবয়ব।

তিনি বলেন, বিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেশের সম্পদ দখলের মাধ্যমে মতাসীনরা নিজেরা এক সমষ্টিগত সুখময় জীবন চিরকালের জন্য গড়ে তুলতে চাচ্ছেন। অবস্থাদৃষ্টে এখন মনে হচ্ছে নিষ্ঠুর দমনের মাধ্যমে আধিপত্য বজায় ও দখলদারিত্বে তারা তাড়াহুড়ো শুরু করেছে। মনে হচ্ছে যেন ‘বেলা নাহি আর’ যা করার মতার বেলা থাকতেই শেষ করে ফেলতে হবে, নইলে কখন কী ঘটে।

ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রীয় অনাচার ও তিকর কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনগণের অভ্যূত্থান রুপ নিতে পারে। তখন ভোটারবিহীন স্বয়ংক্রিয় এমপি’রাও সরকারকে টেকাতে পারবেনা।

তিনি বলেন, এদেশে সুষ্ঠু রাজনীতি ও গণতন্ত্রের চর্চা নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। গডফাদারদের রাষ্ট্রীয় মদদ দেওয়ার কারণে দেশে এখন আইনের শাসনের বদলে গডফাদারদের শাসন চালূ হয়েছে। এরাই আইন প্রণেতা ও জনপ্রতিনিধি। কারণ বর্তমান অবৈধ সরকারের কাছে জনগণের ইচ্ছা অনিচ।ছার কোনো মূল্যই নেই। কারণ ‘জনগণের ভোটের অধিকার প্রকৃত গণতন্ত্রের মূল উপাদান’ এই সত্যকে মতাসীনরা কখনোই বিশ্বাস করেন না।

তিনি বলেন, জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দলীয় লোকদের দিয়ে গোছানো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু কর্মকর্তাকে আর যুবলীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদেরকে। প্রাইভেট বাহিনীর পরিচালক গডফাদার নেতারা জানেন খুনোখুনি ও রক্তারক্তি করলেও তাদের কিছু হবে না। থানা, কোর্টে দু’একবার যেতে হলেও দু’একদিন পর নিমিষে সব মিলিয়ে যাবে। তাই সাংসদ শাওনের গাড়ীতে তারই পিস্তলের গুলিতে যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম নিহত হলেন-কিছুই হয়নি কারো।

ফখরুল বলেন নরসিংদীর লোকমান, ঢাকায় বিশ্বজিৎকে দিনে দুপুরে হত্যা, নারায়নগঞ্জে সাত খুন, ফেনীতে উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যা প্রায় প্রতিটিতেই প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মতাসীন দলের লোকেরা বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাতে চেয়েছেন। কিন্তু পাপ এবং মিথ্যাকে লোহার সিন্দুকে বন্ধ করে রাখা যায়না। জনসমে প্রকাশ পাবেই। বারবার নিজেদের অপকর্মের দায় বিএনপি’র ঘাড়ে চাপাতে গিয়ে তারা প্রতিদিন খাদে পড়ে যা”েছন। অতি চালাকির গলায় দড়ি পড়ে। নকল কখনোই আসলের সমান হয় না।
বন্ধুগণ,

তিনি বলেন, মোহভঙ্গ হতাশ নির্যাতিত জনগণ এখন পূর্ণ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ে প্রস্থত। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আপোষহীন সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দল বিএনপি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কখনোই পিছপা হয়নি। রাজনৈতিক জাগরণে উদ্বুদ্ধ জনগণ এখন এই অবৈধ মতাসীন অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুদ্ধের ময়দানে অপো করছে।ফখরুল বলেন,  দেশ এখন গভীর সংকটে। এ  থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সরকারকে হটাতে হবে।তিনি বলেন, এখন প্রমাণ হয়ে  গেছে- জিয়াই স্বাধীনতার  ঘোষক। তার আদর্শ ধরেই এগোতে হবে।তিনি বলেন, জিয়া যেদিন শাহাদাৎ বরণ করেন, সেদিন বাংলার কৃষাণীরা চুলায় রান্না বসায়নি, কৃষক চাষ করেনি। ঘরে ঘরে ছিল শোক। তিনি ছিলেন জনমানুষের নেতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন,  দেশে গণতন্ত্র  নেই, রাজনীতি  নেই।  দেশে ভয়ানক অবস্থা বিরাজ করছে। এখানে একটা বিরাট শূন্যতা। এই শূন্যতার কারণে  দেশে অরাজকতা বাড়বে। যেখানে রাজনীতি  থাকে না  সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সেক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ, ফেনীর ও লক্ষীপুরের মত আরো ঘটনা সংগঠিত হবে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, জিয়াউর রহমানের স্মৃতি সবার অন্তরে। তাই শত  চেষ্টা করে তার স্মৃতি মুছে  ফেলা যাবে না।

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি যদি এতো জনপ্রিয় হয়ে থাকে তাহলে আসেন সামনা সামনি। বাংলাদেশের যেকোনো  আসনে নির্বাচনে দাঁড়ান  সেখানে আপনার সাথে আমাদের ছাত্রদলের  কেউ একজন দাঁড়ালে তখন  দেখা যাবে  কে জনপ্রিয়।বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. বদরুদ্দোজা  চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমানের মত মহান ব্যক্তি বাংলাদেশের ইতিহাস। তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস  লেখা সম্ভব না। ইতিহাস লিখতে  গেলে জিয়াউর রহমানের নাম লিখতে হবে। জিয়াকে ছোটো করার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

বদরুদ্দোজা  চৌধুরী বলেন, জিয়া শুধু স্বাধীনতার  ঘোষণাই  দেননি। তিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন।  দেশের দুঃসময়ে তিনি দায়িত্ব নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করেছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানই  দেশের হিন্দু মুসলমান সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। আমরা সবাই বাংলাদেশি এ দর্শন জিয়াউর রহমানেরই সৃষ্টি।এ সময় আধুনিক রাষ্ট্রের সংস্কারক হিসেবেও জিয়াকে স্মরণ করেন বদরুদ্দোজা  চৌধুরী।

আওয়ামী লীগ সরকারের পরিণতি  ফেরাউন-নমরুদের মতোই হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন লিবারেল  ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ।অলি বলেন, আওয়ামী লীগের অবস্থা নমরুদ, ফেরাউনের মতোই হবে। এখন আওয়ামী লীগের লোকজনও নিরাপদ নয়। সবসময় নিরাপত্তাকর্মী নিয়ে তাদের চলতে হয়। এতেই বোঝা যায়, তাদের জনপ্রিয়তা  নেই।প্রয়োজনে জনপ্রিয়তা যাচাই করতেও ক্ষমতাসীনদের তিনি চ্যালেঞ্জ জানান।

এছাড়া, বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি বলে আবারও মন্তব্য করেন অলি আহমদ।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে কিলার আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, জিয়া ও মঞ্জুর হত্যায় এরশাদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি, এরশাদ কিলার নামে বই আকারে প্রকাশ করবো।তিনি বলেন, ইন্দিরা গান্ধী ও রাজিব গান্ধীর মৃত্যুর পরে আন্দোলন হয়নি, মুজিবের  মৃত্যুর পরেও হয়নি।

নিজ দলের  নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মাপা কথা, মাপা কাজে আন্দোলন হবে না। নিজেরা কিছু হতে চাইলে হন, কিন্তু অন্যের চরিত্র হনন করে কিছু হতে গিয়ে দলের ক্ষতি করবেন না।আব্বাস আরও বলেন, সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে হবে। সঠিক সময়ে বেঠিক কাজ করলে আন্দোলন হবে না।

তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন, তারা জানেন তার আদর্শ।  সেই আদর্শ ধরে এগুতে হবে। দেশে এখন গণতন্ত্র নয়, শুধু প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার ইচ্ছাতন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।গয়েশ্বর রায় দলের   নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, শহীদ জিয়া নিঃস্ব অবস্থায় বিদায় নিয়েছিলেন। কিন্তু,  সেই দলের  নেতা হয়ে আমরা নিজেদের সম্পদ রক্ষায় ব্যস্ত; যার সুযোগ নিচ্ছেন  শেখ হাসিনা। এখন  দেশে গণতন্ত্র নয়, হাসিনার ইচ্ছাতন্ত্র চলছে।

তিনি বলেন, জিয়া ছিলেন সৎ।  দেশের মানুষই তার সবকিছু ছিল। তার আদর্শে না চললে  দেশের সত্যিকার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে নয়।