1402303895.

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪সেপ্টেম্বর: সুন্দরবন রক্ষায় অংশ নিয়ে বাঘ ও প্রকৃতি বাঁচাতে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্ব সমপ্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশসহ বাঘ অধু্যষিত দেশসমূহকে বাঘ সংরক্ষণে তাদের আনত্মরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত বাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ লক্ষ্যে তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে৷তিনি রোববার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাঘ অধু্যষিত দেশসমূহ ও গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভ পার্টনারস’র ২য় বিশ্ব বাঘ স্টকটেকিং সম্মেলন উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি যে, বাংলাদেশসহ বাঘ-অধু্যষিত দেশসমূহের বাঘ সংরক্ষণের আনত্মরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে৷ আসুন সকলে মিলে আমরা বাঘ বাঁচাই, প্রকৃতি বাঁচাই৷ এ ক্ষেত্রে আমাদের সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে৷শেখ হাসিনা বলেন, বাঘ অধু্যষিত দেশসমূহকে তাদের পূর্ববতর্ী পরিকল্পনা পর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর বাসত্মবায়নে কৌশল উদ্ভাবনের পদক্ষেপ নিতে হবে৷

আমরা বিশ্ব বাঘ সংরক্ষণ পরিকল্পনার তিন বছর পাড়ি দিয়েছি- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এখন আমরা বাঘ রক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্যের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পেঁৗছেছি৷প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবন রক্ষায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাঘ রক্ষা করে সুন্দরবনকে, আর সুন্দরবন রক্ষা করে বাংলাদেশকে৷

বাঘ সংরক্ষণে বিশ্ব ব্যাংকসহ গেস্নাবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল টাইগার ফোরাম ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বন বিভাগ তিনদিনের এই সম্মেলনের আয়োজন করছে৷ বাঘ রক্ষার পরিকল্পনা বাসত্মবায়নের পর্যালোচনা ও এ লক্ষ্যে একটি সুপারিশ প্রণয়নে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে এ সম্মেলনে একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সচিব মো. নজিবুর রহমান, বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাঠ, গ্লোবাল টাইগার ফোরামের মহাসচিব রাজেশ গোপাল, গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভ’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এন্ড্রু ভি কুশিন ও বন বিভাগের প্রধান কনজারভেটিভ অফিসার মো. ইউনুস আলী বক্তৃতা করেন৷

অনুষ্ঠানে বাঘ সংরক্ষণে মুখ্য ভূমিকা পালনের জন্য সম্মেলনের আয়োজদের পৰ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতিকী প্রশংসাপত্র দেয়া হয়৷সম্মেলনে বাঘ অধূ্যষিত ১৩টি দেশসহ ২০ দেশের প্রতিনিধ অংশগ্রহণ করছেন৷ বাঘ অধু্যষিত ১৩ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ, ভূটান, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস পিডিআর, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, রাশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও উত্তর কোরিয়া৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনাদিকাল ধরে এশিয়ার প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে বাঘ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে৷তিনি বলেন,জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা তৈরি, বনভূমি ধ্বংস এবং সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাপে বাঘের প্রাকৃতিক আবাসস’ল দিন দিন কমে আসছে৷ পাশাপাশি অবৈধভাবে বাঘ শিকার ও বাঘের আবাসস্থল সঙ্কোচনের ফলে বাঘ আজ বিলুপ্তির পথে৷ গত একশ বছরে বাঘের সংখ্যা ১ লাখ থেকে হ্রাস পেয়ে ৩ হাজার ৭’শ-তে দাঁড়িয়েছে৷বিলুপ্তপ্রায় এই অনিন্দ সুন্দর প্রাণীর বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে আজকের এই সম্মেলন তাত্‍পর্যপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী৷

বাঘ সংরক্ষণের মহান উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১০ সালের নভেম্বরে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ-অধু্যষিত দেশগুলোর সরকার প্রধানগণের আনত্মর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনের কথা উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সম্মেলনে আমরা বিদ্যমান বাঘের সংখ্যার ভিত্তিতে ২০২২ সালের মধ্যে এর সংখ্যা দ্বিগুণ করার ঘোষণা ও বাসত্মবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছি৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১২ সালের অক্টোবরে ভূটানের রাজধানী থিম্পুতে বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে দ্বিতীয় এশীয় মন্ত্রীপর্যায়ের সম্মেলনে ৯-দফা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়৷তিনি বলেন, সম্মেলনে বাঘ-অধু্যষিত দেশগুলোর প্রতিনিধি দলের প্রধানরা আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, আবাসস্থল সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা জোরদারের অঙ্গিকার করেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে চীনের কুনমিং-এ বাঘ ও অন্যান্য বিপন্নপ্রায় প্রজাতির আনত্মঃদেশীয় সংরক্ষণ এবং বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা বন্ধের কৌশল বিষয়ক আনত্মর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশ্বের সর্ববৃহত্‍ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন অবস্থিত৷ এই সুন্দরবনেই বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস৷

তিনি বলেন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের জাতীয় পশু এবং সুন্দরবন রক্ষায় এ পশু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷ বাঘ ছাড়া সুন্দরবনের অসত্মিত্ব বিলীন হয়ে যাবে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে৷ কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্রউচচতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইক্লোন, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ইত্যাদি কারণে সুন্দরবনের অসত্মিত্ব আজ হুমকির মুখে৷

তিনি বলেন, তদুপরি, এই বনভূমির উপর প্রায় ১২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল৷ এসব কর্মকা- বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে৷শুধু বাঘ রক্ষাই নয়, প্রাণী বৈচিত্রের বিপুল আধার হিসেবে সুন্দরবনকে রক্ষা করা জরম্নরি উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীব-পরিবেশের এক অনন্য নিদর্শন এই সুন্দরবন৷জাতীয় প্রাণীকে রক্ষা করার জন্য তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জাতীয় বাঘ পুনরম্নদ্ধার কর্মসূচি (এনটিআরপি) ও বাংলাদেশ বাঘ কর্মপরিকল্পনা (২০০৯-০১৭) বাসত্মবায়ন করছে৷

তিনি বলেন, ‘আমরা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ প্রণয়ন করেছি এবং জামিন অযোগ্য এ আইনে বাঘ শিকারী বা হত্যাকারীর ২ থেকে ৭ বছর পর্যনত্ম কারাদ- এবং ১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যনত্ম অর্থদ-ের বিধান রয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র পুনরম্নদ্ধার, সৰমতা গঠন ও বন্যপ্রাণী সুরৰা জোরদার করতে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ, ভূটান ও নেপালের মধ্যে বন্যপ্রাণী সুরৰার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে৷

তিনি বলেন, বন বিভাগের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট বন্যপ্রাণী পাচার, অবৈধ বিক্রি ও প্রদর্শন রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে৷ অসুস্থ বাঘের সেবাদানের জন্য খুলনায় একটি বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন বিভাগ বাঘের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও জরিপের জন্য গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে ভারতের বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউটের সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে ক্যাপচার ক্যামেরা ব্যবহার করছে৷ এই জরিপ শেষ হলে সুন্দরবনে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপন করা সম্ভব হবে৷ তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জরিপের ফলাফল পাওয়া যেতে পারে৷তিনি বলেন, আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বিগত দুই বছরে বাংলাদেশে কোন বাঘ হত্যা হয়নি৷ পূর্বে বছরে মানষের হাতে গড়ে ৩-৪টি বাঘের মৃতু্য হত৷ বাঘের আক্রমণে মানুষ মৃতু্যর সংখ্যাও ২৫-৩০ জন থেকে কমে মাত্র ৪ জনে এসে দাঁড়িয়েছে৷

বাঘ হত্যা ও বাঘের আবাসস্থল সঙ্কোচনের ফলে এই প্রাণীটি এখন বিলুপ্তির পথে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, গত একশ বছরে বাঘের সংখ্যা এক লাখ থেকে কমে তিন হাজার সাতশতে দাঁড়িয়েছে৷বাঘ আছে এমন সব দেশের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন সকলে মিলে আমরা বাঘ বাঁচাই, প্রকৃতি বাঁচাই৷বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষার পাশাপাশি এর আবাসস্থল সুন্দরবন রক্ষার জন্যও সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি৷

শুধু বাঘ রক্ষাই নয়, প্রাণী বৈচিত্র্যের বিপুল আধার হিসেবে সুন্দরবনকে রক্ষা করা জরুরি৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীব-পরিবেশের এক অনন্য নিদর্শন এই সুন্দরবন৷ আমি বিশ্ব সমপ্রদায়কে সুন্দরবন রক্ষায় অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি৷বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশ্বের সর্ববৃহত্‍ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল৷ ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্রউচচতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইক্লোন, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশের কারণে সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে৷ এই বনভূমির উপর প্রায় ১২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল৷ এসব কর্মকাণ্ড বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে দিয়েছে৷বন বিভাগের আয়োজনে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বাঘ সংরক্ষণে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷ ২০০০ সালে গ্লোবাল টাইগার ফোরামের প্রথম সাধারণ সম্মেলনও ঢাকাতেই হয়েছিল৷