গণজাগরণ মঞ্চে পুলিশের হামলা

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর: যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃতু্য কারাদণ্ডের রায় প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভরত গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ৷ রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয়া গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ৷ এ সময় পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে জলকামান এবং টিয়ারশেলও নিক্ষেপ করে৷ এতে বিভক্ত মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ মঙ্গলবার রাত থেকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা শাহবাগে অবস্থান নেয়৷ যুদ্ধাপরাধ মামলায় বুধবার জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃতু্য কারাদণ্ডাদেশের পর ইমরানের সমর্থকরা রাস্তার ওপর বসে পড়েন ও বিভিন্ন স্লোগান দেন৷ এতে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ পরে পুলিশ তাদের পিটিয়ে এবং জলকামানের মাধ্যমে ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে৷ প্রায় ১০ মিনিট পর পরিস্থিতি শান্ত হয়৷ ইমরানসহ বেশ কয়েকজন কর্মী কিছুটা আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে৷

রায় ঘোষণার আগে ইমরানের নেতৃত্বে একটি মিছিল টিএসসি চত্বর হয়ে হাইকোর্টের দিকে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে শাহবাগে ফেরত আসে৷ তখন ইমরান এইচ সরকার বলেন, রায় আশানুরূপ না হলে তা প্রত্যাখ্যান করে ফের শাহবাগে অবস্থান নেয়া হবে৷ পুলিশের ছোড়া কাঁদুনে গ্যাস ও গরম জলে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ বেশ কয়েকজন আহত হয় ৷প্রত্যক্ষদশর্ীরা বলেন, পুলিশ দফায় দফায় জলকামান থেকে গরম জল ছোড়ে; সঙ্গে নিক্ষেপ করা হয় কাঁদুনে গ্যাসের শেল৷ ওই এলাকায় কাউকে দাঁড়াতে দেয়া দেয়নি৷ইমরানসহ চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, তারা কাঁদুনে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে৷ তাদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই৷একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইবু্যনালে মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর আপিলের রায়ে সাজা কমিয়ে তাকে আমৃতু্য কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত৷

বুধবার সকালে আপিল বিভাগ এই রায় ঘোষণার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শাহবাগে অবস্থান নিয়ে থাকা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আঁতাত করে এই রায় দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের৷’আঁতাতের এই রায় মানি না/প্রহসনের এই রায় মানি না, ‘আপোসকারীর আস্তানা/জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি স্লোগান দেয় তারা৷ ওই এলাকায় বিক্ষোভ-মিছিলের পর এক পর্যায়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা৷ ঘন্টাখানেক পর তাদের উপর চড়াও হয় পুলিশ৷গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাইবু্যনালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পর তার ফাঁসির দাবিতে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে গড়ে উঠে শাহবাগের এই আন্দোলন৷জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীর সাজা কমিয়ে দেয়া আপিল বিভাগের রায় প্রত্যাখ্যান করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আঁতাত করে এই রায় দেয়া হয়েছে৷ এটা পরিকল্পিত, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক৷

এই রায়ের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম যাতে আন্দোলন করতে না পারে সেজন্য গত এক বছর ধরে গণজাগরণ মঞ্চে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷এদিকে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে সুপ্রিম কোটের্র আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশের যে রায় দিয়েছেন তার প্রতিবাদে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে৷ বুধবার বিকালে শাহবাগে তিন দিনের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক আরিফ জেবতিক৷তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, শাহবাগে বুধবার বিকাল থেকে যে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে তা রাত ১০টা পর্যন্ত অবস্থান করবে৷ বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে৷এছাড়া শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে৷ বুধবার সুপ্রিম কোটের্র আপিল বিভাগ যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃতু্য কারাদণ্ডাদেশ দেয়৷ এরপর রায়ের প্রতিবাদে মিছিল বের করেন তারা৷এর আগে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, রায় আশানুরূপ না হলে তা প্রত্যাখ্যান করে ফের শাহবাগে অবস্থান নেওয়া হবে৷

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পর তার ফাঁসির দাবিতে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে গড়ে উঠে শাহবাগের আন্দোলন, যা গণজাগরণ মঞ্চ নামে পরিচিতি পায়৷তখন প্রায় এক মাস শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায় তারা৷ তখন পুলিশের পক্ষ থেকেও তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়৷গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মধ্যেই আইন সংশোধন করে ট্রাইবু্যনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষেরও আপিল করার সুযোগ দেয়া হয়৷ আপিলের রায়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হলে গত বছরের ডিসেম্বরে তার মৃতু্যদণ্ড কার্যকর হয়৷