Enuদৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৮অক্টোবর: তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু যৌন নিপীড়নকারীকে সমাজের কাছে ‘জানোয়ার’ হিসেবে চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়েছেন৷’যারা যৌন নিপীড়ন করে তারা সমাজের বিষধর সাপ৷ বিষধর সাপের কামড়ে লজ্জি্বত হবেন না৷ তাকে লজ্জা দিন৷ চিহ্নিত করুন৷ তাদের বিরম্নদ্ধে আওয়াজ তুলুন, তুই জানোয়ার, তুই জানোয়ার, ধ্বংস হ, নিপাত যা৷ সমাজের এই জানোয়ারদের প্রতিরোধ করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন,- রাজধানীতে ‘নারীর জন্য নিরাপদ নগরী’ শীর্ষক ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার এই আহ্বান জানান৷ইউকে এইডের সহায়তায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ্যাকশন এইড এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের নির্বাহি পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজুদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যের আনত্মর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় সচিব লিন ফেদারস্টোন এমপি, নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত্‍ আইভি, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এম এ মান্নান এবং এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ফারাহ কবির৷হাসানুল হক ইনু বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সমাজের সচেতন মানুষকে সোচ্চার হতে হবে৷ যৌন হয়রানির ঘটনা দেখেও চুপ করে থাকার সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসুন৷ ইভটিজিং এর দায় নারীর নয়৷ যারা ফতোয়া দেয় তারাই অন্যদেরকে ইভটিজিং করার উত্‍সাহ যোগায়৷ তাদেরকে প্রতিহত করম্নন৷

তথ্যমন্ত্রী নারীর জন্য নিরাপদ নগরী গড়ে তোলার লৰ্যে চিহ্নিত স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন, টহল পুলিশের মধ্যে নারী পুলিশদের সম্পৃক্ত করণ এবং ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা অভিযান চালানোর পরামর্শ দেন৷ তিনি পুলিশদেরকে জেন্ডার সংবেদনশীল প্রশিৰণ দেয়ারও সুপারিশ করেন৷লিন ফেদারস্টোন বলেন, পৃথিবী জুড়েই নারী নির্যাতন চলছে৷ সারা বিশ্বে প্রতি ৩ জনে ১ জন নারী কোন না কোন ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন৷ বিশ্বে যৌন হয়রানির হার তো কমছেই না, বরং এর কারণে দারিদ্র বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশ ও মায়ানমারে যৌন হয়রানি বিরোধী ক্যাম্পেইনে সহায়তা করছে৷

আগামী বিশ্বকে যৌন হয়রানিমুক্ত ও জেন্ডার সংবেদনশীল মানব গোষ্ঠীতে পরিণত করার জন্য লিন ফেদারস্টোন শিশু ও যুব সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান৷সেলিনা হায়াত্‍ আইভি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট সাজার বিধান সম্বলিত উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও তার কঠোর বাসত্মবায়নে সরকারি পদৰেপ গ্রহণের আহ্বান জানান৷

তিনি বলেন, শুধু নারী কেন, এই নগরীর একজন মানুষও আজ নিরাপদ নন৷ নারীর জন্য নিরাপদ নগর গড়ে তোলা হলে তা সবার জন্য নিরাপদ হয়ে উঠবে৷ তাই যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারী পদক্ষেপের পাশাপাশি সুশীল সমাজকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে৷আইভি বলেন, আমার সনত্মান আজ বিপন্ন না হতে পারে৷ কিন্তু অন্যের সনত্মান্ যখন বিপন্ন হয় তখন আমরা চুপ করে থাকতে পারিনা৷ মনে রাখতে হবে, আমার সনত্মানও কখনো না কখনো কোথাও না কোথাও যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে৷ তখন তার পাশেও কারো প্রয়োজন হতে পারে৷

অনুষ্ঠানের শুরম্নতে দেশের ঢাকা,চট্টগ্রাম,রাজশাহী,খুলনা,বরিশাল,সিলেট ও নারায়নগঞ্জ শহরে বসবাসরত নারীদের ওপর এ্যাকশন এইড পরিচালিত গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়৷ ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ৮০০ নারী ও কিশোরী এবং ৪০০ পুরম্নষের ওপর এ গবেষণা করা হয়৷এ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, নারীর প্রতি যৌন সহিংসতামুক্ত ও নিরাপদ নগর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারি সেবার গুরম্নত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করতে এ্যাকশন এইড এ জরিপ পরিচালনা করে৷

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নগরের ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী গণপরিবহন, রাসত্মা কিংবা উন্মুক্ত জনবহুল এলাকায় চলাফেরা করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন৷ এসব নারীর ৮৮ ভাগই মনে করেন তারা পথচারী, পুরুষ-যাত্রী এবং ক্রেতাদের দ্বারা হয়রানির শিকার হন৷ শহরের ৯৭ শতাংশ নারী যৌন হয়রানিকে সহিংসতা মনে করেন৷ তারা মনে করেন, পুলিশের সাহায্য চাইলে সমস্যা বাড়ে৷ যৌন সহিংসতা এড়াতে ৬৪ শতাংশ নারী রাতে ঘরের বাইওে যান না৷ নিরাপত্তাহীনতার কারণে ৬০ ভাগ নারী রাতে ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে দলগতভাবে যেতে চান৷অনুষ্ঠান শেষে স্প্রেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারের উন্মুক্ত মঞ্চে নিরাপদ নগরী, নির্ভয় নারী’ শীর্ষক প্রচারণা কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়৷ পরে একটি বর্ণ্যাঢ্য শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ কার্যালয়ে এসে শেষ হয়৷