ড.-কামাল-হোসেন

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ জানুয়ারি: সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সরকার দেখামাত্র গুলির কথা বলছে, আর বিরোধী দল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে৷ এর মাধ্যমে আজ দুই দলই সংবিধান ভঙ্গ করছে৷ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দুই দলের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর অঙ্গীকারও করেন সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা৷

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দাও, সহিংসতা বন্ধ কর’ শীর্ষক এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন৷ গণফোরাম, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য এ সমাবেশের আয়োজন করে৷মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ডাকসু সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যর উপদেষ্টা এস, এম কামাল প্রমুখ৷

তিনি বলেন, সব ধরনের বিধিনিষেধ উঠিয়ে দেয়া এবং বিএনপিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে জনসভা করার ইচ্ছা থাকলে, আর সরকারকে সেই সুযোগ করে দিতে হবে, আর বিএনপিকে সেই পথ গ্রহণ করতে হবে৷এ সময় দেশের চলমান সংকট সমাধানে রাজনৈতিকভাবে করতে হবে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা৷

সংলাপ ছাড়া সংকটের সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে গণফোরামের সভাপতি ড.কামাল হোসেন জনগণের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবহার না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান৷ড. কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ আর জনগণের মধ্যে বিরোধ অসাংবিধানিক শাসনের পরিণতি৷ দেখামাত্র গুলি করার মতো আদেশ দিলে সংবিধান রক্ষা হয় না, সংবিধান লঙ্ঘন হয়৷

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সংবিধান রক্ষা করার নির্বাচন৷ এখন সে কথা তিনি ভুলে গেছেন৷

ড. কামাল বলেন, ১৬ কোটি মানুষই আজ সন্ত্রাস থেকে মুক্তি চায়৷ তারা কার্যকর গণতন্ত্র দেখতে চায়৷ তারা দেশে বোমাবাজি চায় না৷

নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের দায়িত্ব সরকারের৷ তাই সাত দিনের মধ্যে দেশের এই সংকট নিরসন করুন৷ নইলে আপনারা পদত্যাগ করে জনগণকে মুক্তি দেন৷

তিনি বলেন,দেশের রাজনীতিবীদ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ সবপক্ষকে নিয়ে একটি জাতীয় সংলাপের আয়োজন করতে হবে৷ এই সংলাপের মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান বের করতে হবে৷ যাতে পাঁচ বছর পর পর দেশে এমন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আর না আসে৷

চলমান সংকট নিরসনে সরকারকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না৷ আগামী সাত দিনের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে না পারলে সরকারকে পদত্যাগ করতেও আহ্বান জানান তিনি৷

তিনি বলেন, দেশে যে সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের দায়িত্ব সরকারের৷ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ৮ থেকে ১০টি ট্রাক দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করেন তিনি বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য ৮-১০টি ট্রাক দরকার হলে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য তো ৩০-৪০টি ট্রাক প্রয়োজন৷ নিরাপত্তার নামে এ ধরণের ভ্লামী ছাড়তে বলেছেন তিনি৷

জেএসডির সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব বলেন, আইয়ুব-ইয়াহিয়ার সময় আমরা জনসভা, মিছিল-মিটিং করতে পেরেছি৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তা করতে দিচ্ছে না৷ আইয়ুব-ইয়াহিয়া খানকেও হার মানিয়েছে তারা৷

রাজকার যেমন মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না আওয়ামী লীগও তেমন গণতান্ত্রিক হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, রাজাকার যেমন কখনো মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেনা তেমনিভাবে আওয়ামী লীগ কখনো গণতান্ত্রিক দল হতে পারেনা৷ তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে আজ ঢাকা বিচ্ছিন্ন৷ এভাবে একটি দেশ চলতে পারেনা৷

সরকারের অবস্থান এবং বিএনপি জামাত জোটের সহিংস আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে নেতারা বলেন, দেশের প্রধান বড় দুইটি দলই ক্ষমতায় থাকতে এবং ক্ষমতায় যেতে সাধারণ জনগণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷সংকট সমাধানে দ্রুত দুই দলকেই নিজেদের কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার আহবান জানান বক্তারা৷