Khalada_bnpsm_banglanews24_410651325

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ জানুয়ারি: পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চলমান অবরোধ চলবেই বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া৷ তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে অবরোধ ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচি নেই৷ সরকারের নির্যাতন সয়ে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য ২০ দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ সোমবার গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান খালেদা জিয়া৷সরকার সংলাপের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া৷কার্যালয় থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি৷

গত ৫ জানুয়ারি অবরুদ্ধ অবস্থায় অবরোধ ডাকার পর এদিন প্রথম সাংবাদিকদের সামনে এলেন খালেদা জিয়া৷ সোমবার ভোররাতে ওই কার্যালয়ের চারপাশ থেকে পুলিশ ও ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়৷ দৃশ্যত এর মধ্য দিয়ে তার বের হওয়ার পথ উন্মুক্ত হল৷এরপর বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ছয়জন সদস্য আর এ গনি, মাহবুবুর রহমান, মওদুদ আহমেদ, আ স ম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান ও সারোয়ারী রহমানকে কার্যালয়ে ঢোকেন৷তাদের সঙ্গে কথা বলার পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি চেয়াপারসন৷

সকল প্রতিকূলতার মধ্যে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে আমি বিএনপিসহ ২০ দলের সকল নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই, বলেন তিনি৷ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খালেদা বলেন, অবরোধ কর্মসূচি চলছে, অবরোধ কর্মসূচি চলবে, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত৷তিনি বলেন, সরকারই অবরোধ কর্মসূচি দিতে বধ্য করেছে৷ তবে কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান বিএনপি চেয়ারপারসন৷ ৷

খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, ৫ জানুয়ারি সামনে রেখে সরকার আগে সারা দেশকে অবরুদ্ধ করে এবং এরপর আমাকে বন্দী রাখা হয়৷ আমি ৫ জানুয়ারি কার্যালয় থেকে বেরোতে গেলে পিপার সপ্রে ছোড়া হয়৷ এতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি৷কী অমানবিক আচরণ তারা করেছে, তা আপনারা জানেন৷আমি আর বলতে চাই না৷

বি্এনপির চেয়ারপারসন বলেন, সরকার আগের মতোই গত একটি বছর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা-হয়রানি করেছে৷ গুম-খুন করেছে৷ সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি৷ তারপর আমরা আলোচনার কথা বলেছি৷ সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছি৷ কিন্তু সরকার তা শোনেনি৷ উল্টো দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করেছে৷আমাকে অবরুদ্ধ করেছে৷ বাধ্য হযে আমরা শান্তিপূর্ণ অবরোধের ডাক দিয়েছি৷

খালেদা জিয়া বলেন, আমরা মানুষ হত্যার রাজনীতি করতে চাই না৷ পেট্রলবোমা, গানপাউডার এসবের ব্যবহার আওয়ামী লীগই শুরু করেছে৷ এখন ক্ষমতায় থেকেও তা করছে তারা৷ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনরা অন্তর্ঘাতের সুযোগ নিচ্ছে৷ তারা পেট্রলবোমা মারছে৷ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে৷ ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক বোমাবাজদের গ্রেফতার না করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও বাড়িতে হামলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷

চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, অত্যাচার বন্ধ করুন৷ মানুষকে শান্তি দিন৷ জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিন৷ অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেয়ার পদক্ষেপ নিন৷১৫ দিন পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশের ভ্যান ও জলকামান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ সোমবার বেলা ১১টার দিকে প্রধান ফটক থেকে পুলিশ সরে গেছে৷ সেখানে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর (সিএসএফ) সদস্যদেও েেদখা গেছে৷ সিএসএফের একটি গাড়ি ফটকের সামনে আড়াঅড়ি ভাবে রাখা আছে৷ ফটকের ভেতরেও সিএসএফের একটি গাড়ি আড়াআড়ি ভাবে রাখা৷খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ফটকে কেন অবস্থান করছেন জানতে চাইলে সিএসএফের সদস্যরা বলেন, কেন রাখা হয়েছে বলতে পারব না৷ ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে৷

খালেদার কার্যালয়ের ফটকেও পুলিশ নেই সিএসএফের অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, কেন গাড়ি রাখা হয়েছে তা সিএসএফই বলতে পারবে৷ গতকাল রাতে হঠাত্‍ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পুলিশ তুলে নেওয়া হয়েছে৷ হয়তো বা নিরাপত্তার কারণেও সিএসএফ রাখা হতে পারে৷

গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৫ দিন ধরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷ ৩ জানুয়ারি রাত নয়টার পর থেকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়৷ ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ‘অসুস্থ’ রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁকে বাধা দেয়৷ এর পর থেকে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন খালেদা জিয়া৷ অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া অবরোধের ডাক দেন৷ ৬ জানুয়ারি থেকে দেশে অবরোধ চলছে৷ এই অবরোধে রোববার পর্যন্ত ১৫ দিনে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২৭ জন৷

গত ১৭ জানুয়ারি রাত পৌনে একটার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের প্রধান ফটকে আবারও তালা দেওয়া হয়৷ রোববার (১৮ জানুয়ারি) সকালে তা আবার খুলে নেওয়া হয়৷ এরপর খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের প্রধান ফটকে আর তালা লাগানো হয়নি৷ গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাসাটি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়৷ কার্যালয়টি একটি দোতলা ভবন৷ খালেদা জিয়া বসেন দ্বিতীয় তলায়৷

রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাইরের কেউ দেখা করতে যাননি৷ খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, শীর্ষ নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করেন৷ তাঁর সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথেই সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের গাড়িতে আগুন দেয় ও গুলি করে দুবর্ৃত্তরা৷খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের পথ আটকে থাকা পুলিশের গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে ৩ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে চলে আসা ‘অবরুদ্ধ অবস্থার’ অবসান ঘটল এবং দৃশ্যত ওই কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন৷