39217_0

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি: হরতাল-অবরোধের ঢাকার বাইরের অবস্থা খুব বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত৷ তিনি এও বলেছেন, ‘আমাদের এই পরিস্থিতির মধ্যেই চলতে হবে৷শনিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা এবং সামষ্টিক অর্থনীতির সামপ্রতিক অবস্থান’ বিষয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন৷

অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মন্তব্য থেকে বিরত থাকেন৷ তিনি বলেন, আশা করি ৭ দিনের মধ্যে পরিস্থিতির স্বাভাবিক হবে৷এসময় সাংবাদিকরা পরিস্থিতি তো স্বাভাবিক হচ্ছে না বলে প্রশ্ন করলে জবাবে মন্ত্রী বলেন, আশা তো চলতে থাকবেই৷ ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোর অবস্থা খুব বিপজ্জনক৷ ঢাকা মোটামুটি সচল আছে৷ এই জেলাগুলোকেও আমাদের সচল করতে হবে৷

৭ দশমিক ৩ প্রবৃদ্ধির হার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, হাইলি ডাউটফুল৷ হয়তো সম্ভব হবে না৷চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারা বাংলাদেশের শত্রু৷ এটা আন্দোলন নয়৷ বাংলাদেশের উন্নতি ব্যাহত করার উদ্দেশ্য নিয়ে এটা করে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটের আকার না বাড়লে সরকারের কার্যক্রম বাড়ানো যায় না৷ বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্য কমে গেছে, এটা কাক্ষিত ছিল না৷ মাথাপিচু আয় দ্বিগুণ হয়েছে৷ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মাথাপিচু আয় ছিল ৫০৬ মার্কিন ডলার৷ ২০১৩-১৪ সালে মাথাপিচু আয় দ্বিগুণ হয়েছে৷ যার পরিমাণ ১১শ মার্কিন ডালার৷ রিজার্ভ বেড়েছে৷ খাদ্যশস্যের উত্‍পাদন বেড়েছে ৩ কোটি ৮১ লাখ টন৷ বিদু্যত্‍ খাতে প্রভূত: উন্নতি সাধিত হয়েছে৷ এই খাতে উত্‍পাদন ২০০৫ -০৬ অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট৷ বর্তমানে বিদু্যত্‍ উত্‍পাদন দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২৮৩ মেগাওয়াট৷

তিনি বলেন, শিল্প খাত সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না৷ দেশের প্রবৃদ্ধির হার কাঙি্ক্ষত পর্যায়ে পৌঁছাতে দিতে চাচ্ছেন না বেগম খালেদা জিয়া৷অর্থমন্ত্রী বলেন, সোশ্যাল প্রটেকশন বিএনপির আমল থেকে চলছে৷ তারা এটা প্রোটেকশন করেছে৷ আমাদের সময় অনেক এগিয়েছে৷ কিন্তু কিছু বুদ্ধিজীবী এটা স্বীকার করতে চায় না৷তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থেই আইসিটি খাতে দেশে বিপ্লব সাধিত হয়েছে

হরতাল-নাশকতার মতো কর্মকাণ্ডে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর কাঙ্খিত জিডিপি অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷যারা সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত তারা বাংলাদেশের শত্রু এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েক বছরের মধ্যেই দেশে অর্থনীতির ভিত্তিতে রাজনীতি পরিচালিত হবে৷

এসময়, হরতাল-নাশকতা মোকাবলোয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য আগামী বাজেটে আলাদা বরাদ্দ দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি মোতায়েন করে দেশ সচল রাখতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হবে৷ কী পরিমাণ অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা এখনই বলব না৷ দেশের সামপ্রতিক পরিস্থিতির উত্তরণ কবে হবে, জিজ্ঞেস করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, নোবডি নোউজ৷’তিনি সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনারা বলতে পারবেন? গত জানুয়ারিতে আমি আশা করেছিলাম, এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে৷ এমন আশা তো আমি করতেই পারি৷

দেশ কি এ অবস্থার মধ্য দিয়েই যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ অদ্ভুত দেশ, প্রায়ই হরতাল-অবরোধ হয়৷ তবে এর মধ্যেও মোট দেশজ উত্‍পাদনের প্রবৃদ্ধির হার (জিডিপি) ৬ শতাংশের ওপর থাকছে৷ সামপ্রতিক সহিংস পরিস্থিতিতে অর্থনীতির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সে চিত্র আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় সমন্বয় কাউন্সিলের বৈঠকে তুলে ধরা হবে বলে জানান মন্ত্রী৷ দেশবাসীর প্রতি আপনার আহ্বান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ আন্দোলন যারা করছে, তারা বাংলাদেশের শত্রু৷ আমি সচেতন ব্যক্তিদের (সেনসিটিভ পারসন) এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই৷সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ও অথনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. মেজবাউদ্দিন আহমেদ৷