বসন্তের ছোঁয়ায় বইমেলায়

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি: প্রকৃতিতে ফাগুন না এলেও শুক্রবার ফাগুনের প্রথম দিন। ফাগুনের প্রথম দিনে বইমেলায় শিশুগ্রহর চলে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিশু প্রহর চলে। এই সময়ে শিশুরা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে মেলায় স্বাচ্ছন্দে ঘুরেফিরে তাদের পছন্দের বই কিনতে পারবে। শিশুপ্রহর উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি চত্বরের শিশু কর্ণারটিকে শিশুদের উপযোগী করে সাজানো হয়েছে।

অমর একুশে ফেব্র“য়ারি উদযাপন উপলক্ষ্যে আজ সকাল ১০টায় একাডেমির মূল মঞ্চে শিশু-কিশোরদের নিয়ে আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিহ হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য সকাল থেকে শিশু-কিশোররা তাদের বাবা-মা, ভাই- বোনদের নিয়ে মেলায় আসে।প্রতিযোগিতা শেষে মেলার একপ্রান্ত অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত স্বভাবসুলভ দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে তারা।

এদিকে ফাগুনকে বরণ করে নিতে বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোররাও বাহারী রঙের পোশাক আর ফুল নিয়ে মেলায় হাজির হয়। কিশোরীদের অনেককেই দেখা যায় বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়ে আর মাথায় রঙিন ফুল গুঁজে মেলায় এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে বেড়াতে।বাবা-মায়ের হাত ধরে সাত সকালে মেলায় এসেছিল দীপন। সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। দীপন জানায়, গেল শুক্রবারও সে মেলায় এসেছিল। বইমেলায় ঘুরতে তার নাকি বেশ ভালো লাগে। নজরুল মঞ্চের সমবয়সীদের সঙ্গে তাকে খুনসুটি করতে দেখা গেল।

এদিকে ছোট ভাইবোনদের নিয়ে মেলায় বই কিনতে এসেছিলেন লিটন শর্মা। তিনি জানান, শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়ার পরিবারে ছোটদের জন্য বই কিনতে এসেছেন। লিটন শর্মা ঢাকায় থাকলেও তার ভাই-বোনেরা ঢাকার বাইরে থাকে। তাই তিনিই ছোটদের জন্য বই কিনতে এসেছেন।

বইমেলায় শুক্রবার ১১টার পর শুরু হয় শিশুপ্রহর। বসন্তের প্রথম দিনের ছোঁয়া দেখা গেছে শিশু-অভিভাবকদের পোশাকে।

বাবা মায়ের হাত ধরে কোমল কচি শিশুরা মেতে ওঠে হাসি-আনন্দে। আগ্রহভরে খুঁজে খুঁজে পছন্দের বই কিনতেও দেখা গেছে অনেককে। এর মাঝে ছবি তোলাওয় মেতে ওঠেন অনেক শিক্ষার্থী।শিশুপুত্রকে নিয়ে মেলায় আসা অর্গ- কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ অপারেশন নির্বাহী ইকবাল আহমেদ লেন, সাহিত্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষকে বিনোদিত করা। তবে শিশু সাহিত্যের আরেকটা কাজ রয়েছে, শিশুকে শিক্ষিত করে তোলা। শিশু সেটা পড়ে মজাও পেতে হবে।প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিউল আহমেদ অর্ককে নিয়ে আসা এই বাবা বলেন, আমি ওর পছন্দেও বই কিনি। পাশাপাশি আমিও ওকে পছন্দ করে দেই।

এর আগে বাবা- ছেলের বই কেনার পর্বে দেখা যায়, ছেলের সম্মতি নিয়েই বই কিনছেন বাবা।একটি বইয়ে ছেলে সম্মতি দেয়নি। সে বলেছে, এটা বড় হলে পড়ব, এখন পড়ব না।জবাবে বাবা বলেন, ঠিক আছে, আমি পড়ে দিব। তুমি কেবল নাও।ছেলে বলে, না, আমি এটা নিব না।এরপর বাবা ছেলের মতই মেনে নেন।এই বাবা বলেন, সংকটটা আমাদের ভোগবাদী চিন্তায়। আমরা ভোগের বিষয়ে ইউরোপ, আমেরিকার অনুসরণ করি। কিন্তু তাদের অনেক অর্জন রয়েছে। সেগুলোতে আমরা চিন্তা করি না। অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাই না।

কারণ এসব করতে হলে সাধনা করতে হয়, সময় লাগে। সমাজের সার্বিক এই অবস্থা আমাদের শিশু সাহিত্য-শিশু বিকাশেও প্রভাব ফেলছে।মিরপুরের হাক্কানী মিশন বিদ্যাপীঠ ও মহাবিদ্যালয়ের রওশন আরা মধু বলেন, এমনিতেই আমাদের শিশু সাহিত্য খুবই কম। যেগুলো আছে, তার অবস্থাও ভালো না।

তাছাড়া এই সাহিত্যের সঙ্গে শিশুদের যুক্ত করার উপায়টা বদলে গেছে। আমাদের শিশু একাডেমির ভূমিকা দুর্বল। ইউরোপ,আমেরিকাতো বটে, ভারতেও শিশু সাহিত্যের ওপর ভিত্তি করে শর্ট ফিল্ম, ফিল্ম ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুদের সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে।সাহিত্যের পাশাপাশি শিশুদের উপযোগী করে টিভি অনুষ্ঠান, কার্টুন ইত্যাদি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।হাক্কানী মিশনের প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থীকে নিয়ে মেলায় আসেন শিক্ষক-অভিভাবকরা।এই স্কুলের শিক্ষক মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের শিশু সাহিত্য কম ও মান ভালো নয়- ইত্যাদি নানা কথা রয়েছে। কিন্তু এরপরও এই মেলা শিশুদের বড় একটা জায়গা। এখানে শিশুদের আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আমরা স্কুল থেকে নিজেরাই এসেছি। কিন্তু সবাইতো এভাবে আসবে না। সব অভিভাবকও তাদের শিশুদের নিয়ে মেলায় আসে না। বেলা ১১টায় শিশুপ্রহর শুরু হওয়ার পর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে ঢুকতে লাইন দেখা যায়। পরে ভেতরেও ভিড় গত সপ্তাহের চেয়ে বেশি বলে একাধিক স্টলের বিক্রেতারা জানিয়েছেন।শিশু প্রকাশনা ‘ঝিঙেফুল’র বিক্রেতা মো. হাসান মাহমুদ বলেন, আজ ভিড় অন্য দিনের চেয়ে বেশিই মনে হচ্ছে। গত সপ্তাহের শিশু প্রহরের চেয়েও আজ শিশু-অভিভাবকদের উপস্থিতি বেশি।প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবিবা আহমেদকে নিয়ে মেলায় এসেছেন বাবা সুমন আহমেদ।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুমন আহমেদ বলেন, বাস্তব ভিত্তিক, শিক্ষণীয় ও মজার বই আমি আমার মেয়েকে কিনে দিতে চাই। কিন্তু এ রকম বই কমই দেখি।