প্রধানমন্ত্রী

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি: নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে সৃষ্টিকর্তা তাদের সুমতি দেবেন বলে আশাপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা ইসলাম ধর্ম পালন করে- তারা কিভাবে মানুষ মারে?তিনি বলেছেন, মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো যন্ত্রণা মানুষ মানুষকে কিভাবে দেয়?শনিবার বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আর্ন্তজাতিক সুফি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক সুফি সম্মেলন-২০১৫ এর আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মেরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার অর্থ সম্পদ রক্ষা করতে চান এবং জামায়াত ইসলামী মানবতা বিরোধীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করতে চায়।বাংলাদেশের চলমান সহিংস পরিস্থিতিকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও কষ্টকর উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সার্বিক উন্নতি হচ্ছে ঠিক সেই সময় কেন এই তান্ডব। এই যে মানুষের কান্না, কষ্ট, মানুষের ব্যথা- বেদনা তাদের মনে কি একটু নাড়া দেয় না?

মানুষ পুড়িয়ে মারা বিভৎসতা অবস্থা কখনোই সহ্য করা যায় না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে কি মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে? তারা ইসলাম ধর্মের নামে রাজনীতি করে কিভাবে একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে এভাবে পুড়িয়ে হত্যা করে।বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশে করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মানুষ পুড়িয়ে মেরে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান যাতে এদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। মানুষ ধ্বংস হবে। কিন্তু উনি (খালেদা) ওনার টাকা রক্ষা করবেন।মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে জামায়াত ইসলামী সন্ত্রাস করছে মন্তব্য করে যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে তো বিচার কাজ এক রকম। এটা যদি কোনো ইসলামিক দেশে হতো তবে তাদের শিরশ্ছেদ করা হতো। বাংরাদেশে প্রচলিত আইন ও আর্ন্তজাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে বলে তারা আপিল করারও সুযোগ পাচ্ছে।

তারা এভাবে মানুষ পুড়িয়ে কি অর্জন করছে। এভাবে মানুষকে কেন পুড়িয়ে মারছে?’ এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছে। শত বাধা উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিয়েছে। গত এক বছরে মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে ছিলো। বিগত ৬ বছর আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছি। মানুষের মধ্যে যখন আস্থা, বিশ্বাস, স্বস্তি ও শান্তি ফিরে এসেছে ঠিক সেই সময় বিনা কারণে বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে।বিএনপি-জামায়াত সত্যিই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে কি না? প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পেট্রোল বোমা দিয়ে নারী, শিশু নির্বিশেষে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। মানুষের মনে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। এরকম দেখে কি মনে হয় এরা সত্যিই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। সবচেয়ে কষ্ট লাগে ওই ধর্মের নাম নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট রাজনীতি করে ঠিকই। আবার তাদের হাত থেকে আমাদের মসজিদও রেহাই পায় না।তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম সবচেয়ে শান্তির ধর্ম, প্রগতির ধর্ম। কিন্তু সেই ধর্মের কথা বলে যারা রাজনীতি করে তারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, এতে আমার পবিত্র ধর্মের বদনাম হয়। মুষ্ঠিমেয় লোকের জন্য পবিত্র ধর্ম ইসলামের অপমানজনক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। মহান আল্লাহ তাদের সুমতি দিক।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ধর্মটওাণ মুসমানদের ইসলামের নামে, আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের যথাযথ প্রচার, প্রসার ও ধর্মকে যেন ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কেউ অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, তাবলিগ জামায়াতের জন্য টঙ্গীতে বিশাল জমি দান, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন।সকল ধর্মের মানুষের সহ-অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোগ করেন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অপকর্মের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিতে কাজ করার জন্য মাশায়েখ ও আলেমদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আলেম- মাশায়েখরা এসেছেন। আপনাদের কাছে আমি এই বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম। আল্লাহ তাদের (২০ দলীয় জোট) সুমতি দিক।বিশ্ব ইজতেমার সময়ও অবরোধ প্রত্যাহার না করায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, কি দুর্ভাগ্য আমাদের! ইজতেমার সময়ও অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে।

এরা হরতাল আর অবরোধের নামে শত শত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ইসলাম ধর্মের কোনো সম্মান দেয় না।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চুরির টাকা রক্ষা করতেই মানুষ পুড়িয়ে গণতন্ত্র ধ্বংস’ করতে চাচ্ছেন- মন্তব্য করে তিনি বলেন, উনি বিচারের সম্মুখীন হতে ভয় পান।বর্তমানে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে, যে দুই মামলায় খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ বিএনপির কয়েক নেতা আসামি।বিএনপি-জামায়াত জোটের গত এক মাসের বেশি সময়ের অবরোধে গাড়িতে আগুন, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও হাতবোমার বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশকেই আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।নাশকতায় প্রাণহানিতে দুঃখপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সকল ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে- তা অত্যন্ত দুঃখজনক। সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন যে তাণ্ডব হচ্ছে- পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ মারছে, আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এরা কি প্রকৃত মুসলমান?”

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতেই সুফি দর্শন নিয়ে কথা বলেন।তিনি বলেন, আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হল সুফি দর্শনের মর্মকথা। পরম সত্তা মহান আল্লাহকে জানার আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরন্তন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আধ্যাত্মিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যমে জানার প্রচেষ্টাকে সুফি দর্শন বা সুফিবাদ বলা হয়।অলি-আউলিয়ার মাধ্যমেই এক সময় আমাদের এই জনপদে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল।বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ভারতের রাজস্থানের আজমীরের খাজা মইনুদ্দিন চিশতীর দরগাহর সভাপতি ওয়াহিদ হোসেন চিশতী, দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগাহের সভাপতি সৈয়দ নজিব আল নিজামী, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ রেজাউল হক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক তৈয়বুর বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।ওয়াহিদ হোসেন চিশতী তার বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রীকে আজমীর থেকে আনা একটি ওড়না পরিয়ে দেন।পরে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।