দৈনিকবার্তা-DoinikBarta_04-04-15-PM-206-04-15-PM_Video Conference-4

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৬ এপ্রিল: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট নাশকতার কারণে প্রায় তিন মাস দুঃসময় গেল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আর এই দুঃসময় মোকাবিলা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটতে পারে সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে তাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, পটুয়াখালী জেলা ও নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিড়িও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। এতে বরিশাল, নেত্রকোনা এবং পটুয়াখালীর স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা ও কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও বক্তব্য দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। শেখ হাসিনা বলেন, এক একটি জেলা একটি বিষয়ের জন্য বিশেষায়িত থাকে। এগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোকে আরও উন্নত করার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন তিনি। বরিশাল বিভাগে সেনাবাহিনীর জন্য একটি ডিভিশন হবে বলেও জানান তিনি।

মানুষকে পুড়িয়ে মারা কোন ধরনের রাজনীতি, তা বিএনপি-জামায়াতের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে মারছে রাস্তাঘাটে, নানা জঘন্য কাজ করেছে। আমরা যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করি তাদের সবার প্রশ্ন- মানুষ পুড়িয়ে মারা কোন ধরনের রাজনীতি?তিনি বলেন, সাধারণ ও নিম্নবিত্ত মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা- এত জঘন্য কাজ করেছে তারা। এমনটি আর কখনও বাংলাদেশে ঘটেনি।বক্তৃতায় আইন-শৃঙ্খলা যেন স্বাভাবিক থাকে সেজন্য নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। মানুষ যেন অবহেলিত না থাকে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জ্বালাও- পোড়াও, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আর যেন কেউ বেঁচে যেতে না পারে সে জন্য পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশররাফ হোসাইন ভূইঞার সঞ্চালনায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, ভোলা, ঝালকাঠি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিল।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।এদিকে, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে ভারতের স্থল, রেল এবং নৌপথ ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ- এই বিধান রেখে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংশোধিত বাণিজ্য চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি আছে ১৯৭২ সাল থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২০০৯ সালে এটি নতুনভাবে স্বাক্ষরিত হয়; যার মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩১ মার্চ।ওই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যের জন্য একে অপরের স্থল, রেল ও নৌ-পথ ব্যবহার করতে পারতো। বর্তমান আইনে তৃতীয় দেশ যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যদি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চায় তাহলে ভারতের স্থল, রেল ও নৌপথ ব্যবহার করতে পারবে।পূর্বে এই চুক্তির মেয়াদ ৩ বছর ছিল। বর্তমানে এর মেয়াদ করা হয়েছে ৫ বছর। কোনো দেশের আপত্তি না থাকলে নিজ নিজ পন্থায় চুক্তিটি নবায়ন হবে।১ এপিল ২০১৫ থেকে এ চুক্তি কার্যকর হয়েছে।এদিকে দ্যা পোর্ট (সংশোধনী) আইন-২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।অন্যদিকে, নির্দেশনা না মেনে গরমের মধ্যেও স্যুট-টাই পরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভর্ৎসনা শুনেছেন কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী।মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অফিসে স্যুট-টাই না পরার নির্দেশনা থাকলেও সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে যেসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ওই পোশাক পরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী তাদের ‘বকা’ দিয়েছেন বলে কয়েকজন মন্ত্রী জানিয়েছেন।

আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অফিসে স্যুট-টাই না পরতে ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সরকারি, আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।২০১২ সালের ৫ জুন নতুন করে ওই আদেশ ফের প্রকাশ করে স্যুট-টাইয়ের পরিবর্তে প্যান্ট ও শার্ট (অর্ধ/পুরাহাতা) পরার কথা মনে করিয়ে দেয় সরকার। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত স্যুট-টাই না পরে প্যান্ট-শার্ট পরতে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অনুরোধ জানায় সরকার।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মন্ত্রী বলেন, বৈঠকের শুরুতেই কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরমে স্যুট-টাই পরে এসেছেন কেন?এটা কি আমাদের ড্রেস না কি? ওগুলো ব্রিটিশদের ড্রেস। ব্রিটিশদের গোলামী করেছেন, তার অভ্যাস এখনও যায়নি।

ওই সময় রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন স্যুট-টাই পরে মন্ত্রিসভা কক্ষে অবস্থান করছিলেন বলে একজন প্রতিমন্ত্রী জানান।আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ বেশ কয়েক মন্ত্রী স্যুট পরলেও এদিন টাই পরেননি বলে জানান ওই মন্ত্রী।মন্ত্রিসভা বৈঠকের ছবিতে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকেও স্যুট পরা অবস্থায় দেখা যায়। বৈঠকে উপস্থিত আরেকজন মন্ত্রী বলেন, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ফিসফিস করে প্রধানমন্ত্রীকে কিছু একটা বলেন। এরপরেই স্যুট-টাই নিয়ে কথা বলা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবারের বৈঠকে ওবায়দুল কাদেরকে স্যুট-টাই পরা অবস্থায় দেখা যায়নি।সকাল ১০টায় মন্ত্রিসভা বৈঠক শুরুর পরপরই প্রধানমন্ত্রী স্যুট-টাই নিয়ে যখন কথা বলছিলেন তখনও মন্ত্রিসভার সব সদস্য বৈঠকে এসে উপস্থিত হননি বলে জানান ওই মন্ত্রী।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মন্ত্রী বলেন, স্যুট-টাই পরা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলার পর একজন মন্ত্রী পাজামা-পাঞ্জাবি পরে আসবেন কি না, জানতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তখন সরকারের নির্দেশনার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।