DoinikBarta_দৈনিকবার্তাom2kokat20150408181441

দৈনিকবার্তা-নারায়ণগঞ্জ, ০৮ এপ্রিল: বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। ১৬ পৃষ্ঠার ওই চার্জশিটে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ১৬ জনকে।বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাত খুনে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মামুনুর রশিদ নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রূপমের আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নাম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, উপ-অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানা।অভিযুক্ত ৩৫ জনের মধ্যে ২২ জন বর্তমানে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি আছেন। বাকি ১৩ জন রয়েছেন পলাতক। মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন বর্তমানে ভারতের কলকাতার একটি কারাগারে বন্দি।এদিকে, চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন- সিদ্দিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) ইয়াছিন মিয়া, হাসমত আলী হাসু, আমিনুল ইসলাম রাজু, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন, তানভির আহমেদ, ইয়াছিন শিপন, সোনা মিয়া, জুয়েল রানা, মো. শাহিন, মিজানুর রহমান, আরিফুজ্জামান সরাকর, মহিবুল্লা, রফিকুল ইসলাম ও রিয়াদ।এর মধ্যে ইয়াছিন মিয়া, হাসমত আলী হাসু, আমিনুল ইসলাম রাজু, আনোয়ার হোসেন ও ইকবাল হোসেন ছিলের এজাহার ভূক্ত আসামি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন জানান, আদালতে জমা দেয়া ১৬ পৃষ্ঠার ওই চার্জশিটে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, উপ-অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার এম এম রানা রয়েছেন। অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ১৬ জনকে।আগামী ১১ মে এ চার্জশিট গ্রহণের ওপর শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন আরো জানান, দুটি মামলায় এ পর্যন্ত র‌্যাবের ১৭ সদস্যসহ ২১ জন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া মামলায় ১২৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয় ও ১৬২ আলামত জমা দেয়া হয়।এদিকে, নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী বিউটি ইসলামের দায়ের করা মামলা থেকে প্রধান আসামি নূর হোসেন ব্যতীত অপর পাঁচজনকে অব্যাহিত দেয়ার বিষয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করা হবে জানানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, আদালতে ২টি মামলায় ১৬ পাতার চার্জশিটে সাত জনকে অপহরণ ও পরে হত্যার ঘটনায় ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ১২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এছাড়া ১৬২ ধরনের আলামত উদ্ধার দেখানো হয়েছে। অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ১৬ জনকে।সাত খুনের ঘটনায় হওয়া দু’টি মামলার মধ্যে নিহত কমিশনার নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির করা মামলায় কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৬জনকে আসামি করা হয়েছিল। এই মামলার ৬ আসামির মধ্যে নূর হোসেনকে গত বছরের ১৪ জুন ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার করা হলেও এজাহারভুক্ত অপর ৫ আসামি পলাতক রয়েছেন।

অন্যদিকে চন্দন সরকার ও গাড়ি চালক ইব্রাহিমকে অপহরণ ও হত্যা মামলার বাদী ছিলেন চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। এ মামলায় অজ্ঞাত সংখ্যক লোককে আসামি করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর বুধবার নারায়ণগঞ্জের আদালতে এই অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামনুর রশিদ মণ্ডল।র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফুর রহমান ও এম এম রানার সঙ্গে এই বাহিনীর ২৫ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
২০১৪ সালের এপ্রিলে এই হত্যাকাণ্ডের সময় র‌্যাব-১১ এর অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা।বাকি ১০ আসামির মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন কাউন্সিলর নূর হোসেন বর্তমানে ভারতে কারাবন্দি। তাকে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম চাঁদনী রূপমের আদালতে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের দুই মামলায় অভিযোগপত্র জমা পড়ে।

নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের পরিবার একটি মামলা করেন, অন্য মামলাটি করেন নিহত আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের পরিবার। আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেএম ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিচারক আগামী ১১ মে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন রেখেছেন।দুই মামলায় ১২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং ১৬২টি আলামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।গত বছরের ২৭ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর তাদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পাওয়া যায়।নিহত অন্যরা হলেন- নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।