images-22-593x330

দৈনিকবার্তা-গৌরনদী (বরিশাল),৩০ এপ্রিল: বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্নস্থানে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য৷ গাঁজা, ভাং, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সহজলভ্য হওয়ায় উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবসমাজ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে৷ প্রশাসন এ বিষয়ে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন স্পট থেকে অভিযান চালিয়ে মাদকবিক্রেতাদের গ্রেফতার করলেও কয়েকদিন পরেই তারা ছাড়া পেয়ে আবার পুরোদমে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে৷

বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, আগৈলঝাড়ায় গাঁজা, ফেন্সিডিলের পাশাপাশি বর্তমানে যৌণ উত্তেজক ট্যাবলেট ইয়াবাও পাওয়া যাচ্ছে৷ এছাড়াও ড্যান্ডি নামক সগামের ব্যবহার এখন মাদক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে৷ স্বল্পমূল্যে সহজে প্রাপ্তির জন্য এটি এখন মাদকসেবীদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে৷ জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা-পাতিনেতাদের ছত্রছায়ায় উপজেলার বিভিন্নস্থানে মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে৷ এসব স্থানে উঠতি পাতিনেতারা অবাধে মাদক বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে৷ এদের অধিকাংশ আবার যথেচ্ছ সেবনের সাথেও জড়িত৷ মাদক বিক্রি ও সেবনের কয়েকটি চিহ্নিত স্পট হচ্ছে- গৈলা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, গৈলা বাজার, গুচ্ছগ্রামসহ ২-৩টি জায়গা, গৈলা এতিমখানার পাশে মতি সরদারের বাড়ি, উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড, থানার উত্তরপাশের টেম্পোস্ট্যান্ডসহ ২-৩ জায়গা, পয়সারহাটের পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ের বাসস্ট্যান্ড, বাগধা, পাকুরিতা স্কুল এলাকা, নওপাড়া গ্রামে হেলান মোল্লার পুত্র শুক্কুর আলী, জোবারপাড়-নাঘিরপাড়ের ব্রিজ ও স্কুল এলাকা, বড়মাগরার উত্তরপাড়, আস্কর বাঁশতলায় আয়নাল ও কবির, কান্দিরপাড়ে সোহাগ মেকার, ছয়গ্রাম বন্দর, মিশ্রিপাড়া হাট ও স্লুইজগেট, কালুরপাড়, সাহেবেরহাট, রাজিহার, রামেরবাজার, রামানন্দেরঅাঁক, মোল্লাপাড়াসহ আরও কয়েকটি জায়গায় প্রতিনিয়ত মাদকবিক্রি ও সেবন চলছে৷

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, টেকেরহাটে চেকপোস্ট বসার কারণে মাদক পাচারকারীরা আগৈলঝাড়া বা এর আশেপাশে কোন পুলিশী চেকপোস্ট না থাকায় নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে যশোর-খুলনা-গোপালগঞ্জ থেকে মাদকের চালান পয়সারহাট-আগৈলঝাড়া হয়ে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাচার করে৷ এর নেতৃত্বে রয়েছে আমবৌলা গ্রামের জনৈক তরুণ বিএনপি নেতা৷ এছাড়াও আগৈলঝাড়ার অপর এক ব্যক্তি পরোক্ষভাবে এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে ঘনিষ্ট একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে৷ মাদকের সাথে অস্ত্র চোরাচালান সিন্ডিকেটও ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে পয়সারহাট বন্দর, আশ্রায়ণ প্রকল্প ও আশপাশের এলাকা৷ ফলে এ এলাকায় ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে৷ ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, আগৈলঝাড়ায় বর্তমানে গাঁজা, ফেন্সিডিলের পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত যৌণ উত্তেজক ট্যাবলেট ইয়াবাও পাওয়া যাচ্ছে৷ এরকমই একটি মাদকের অভয়ারণ্য হচ্ছে পূর্ব সুজনকাঠি এতিমখানার পূর্বপাশের মতি সরদারের বাড়ি৷ মতি অভিনবপন্থায় গাঁজা বিক্রি করে৷ পূর্বে রিঙ্া ও বর্তমানে ইজিবাইক চালানোকে পূঁজি করে মোবাইলের মাধ্যমে স্ত্রী ও মাকে দিয়ে সে এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে৷ মতি মাদকদ্রব্য মামলায় জেলে গেলেও তার স্ত্রী রুবিনা ও মা হাসিনা বেগম এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে৷ একই গ্রামের জনৈক হাফিজ ঢাকায় হেরোইনের ব্যবসা করে ৩বার গ্রেফতার হয়েছিল৷ বর্তমানে এলাকায় নিজবাড়িতে বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেও আড়ালে পূর্বের ব্যবসা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ তাদের দাপটে এলাকার সাধারণ মানুষ দিশেহারা৷ সাহেবেরহাট থেকে মন্টুকে একাধিকবার স্থানীয় লোকজন মাদক বিক্রি করতে নিষেধ কররেও সে তা ছাড়তে না পারায় কিছুদিন পূর্বে গণধোলাই খেয়ে বাজারে তার বসবাস নিষেধ করা হয়৷ পরে সে কতিপয় প্রভাবশালীকে ম্যানেজ করে পুনরায় বসবাস ও গাঁজা বিক্রি শুরু করলে গত ৮ অক্টোবর হাতেনাতে ধরা পরলে মন্টু অভিনব কায়দায় পালিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয় গাঁজা ক্রেতা৷ গত একবছরে পুলিশের ব্যাপক অভিযানে কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও অল্পদিনের মধ্যেই অজানা কারণে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে৷ অনেকক্ষেত্রে পুলিশ থানায় আনার পথেই অনৈতিক সুবিধা ভোগ করে কাউকে ছেড়ে দেবার অভিযোগও রয়েছে৷ ছাড়া পাবার পরই তাদের দাপট ও বিক্রির কৌশল আরও বেড়ে যায়৷ তাদের বক্তব্য, জায়গামত টাকা দিয়ে তারা ব্যবসা করছে৷ এসব মাদক ব্যবসায়ীদের হাত থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে জনগণ প্রশাসনের সুনিয়ন্ত্রিত হস্তক্ষেপ কামণা করছে৷