1432630138

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ মে: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেছে রাষ্ট্রপক্ষ৷ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়৷আপিল বিভাগের বেঞ্চে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন৷ বেলা একটার দিকে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়৷এর আগে আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করেন মুজাহিদের আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও খন্দকার মাহবুব হোসেন৷

মঙ্গলবার আসামিপক্ষ শুনানি শেষ করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবুর হোসনে ও এস এম শাহজাহান শুনানিতে অংশ নেন৷ এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন৷বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি৷এরপর আসামিপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের জবাব দিতে পারবেন৷শুনানিতে মুজাহিদের পক্ষে খন্দকার মাহবুব বলেন, ট্রাইবু্যনালে রাষ্ট্রপক্ষের দেয়া সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনা আমাদের মনে হয়েছে এসব সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ এসব সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে কাউকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ মতো শাস্তি দেয়া যায় না৷ তাই মুজাহিদের মৃতু্যদণ্ডাদেশের রায় বাতিল করে তাকে খালাস দেয়া হোক৷ তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা৷

তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল আইন করা হয়েছিল পাকিস্তান সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য৷ বঙ্গবন্ধু তাদেরকে ক্ষমা করে দেন৷ যদিও তারা ছিলেন যুদ্ধাপরাধের অপরাধে অভিযুক্ত৷ তাদের ক্ষমা করে দিয়ে আল বদর, আল শামসের বিচার করা হচ্ছে৷পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার এই মামলার বিভিন্ন সাক্ষীর বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখিয়েছি এই সব সাক্ষীর ভিত্তিতে মুজাহিদকে মৃতু্যদণ্ড দেওয়া যায় না৷ যে দুটি অভিযোগে তাঁকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে সাত নাম্বার অভিযোগটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগই ছিল না৷ এই অভিযোগটি ট্রাইবু্যনাল আমলে নেননি৷ এরপরও এতে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে৷

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আজ আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ এক ও তিন নাম্বার অভিযোগের যুক্তি দিয়েছে৷ কাল আবার আমরা যুক্তি উপস্থাপন করব৷২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২ মুজাহিদকে মৃতু্যদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন৷ ট্রাইবু্যনালের রায়ে বলা হয়, মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে৷ তৃতীয় অভিযোগে (ফরিদপুরের রণজিত্‍ নাথকে আটক রেখে নির্যাতন) তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পঞ্চম অভিযোগে (নাখালপাড়া সেনাক্যাম্পে আলতাফ মাহমুদ, রুমী, বদি, আজাদ, জুয়েল হত্যাকাণ্ড) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ ষষ্ঠ (বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড) ও সপ্তম অভিযোগে (বাকচরে হিন্দুদের হত্যা ও নিপীড়ন) মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়৷ ষষ্ঠ অভিযোগের সঙ্গে প্রথম অভিযোগ (সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন হত্যা) একীভূত করায় এতে আলাদা করে শাস্তি ঘোষণা করা হয়নি৷ দ্বিতীয় ও চতুর্থ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মুজাহিদকে খালাস দেন ট্রাইবু্যনাল৷

ট্রাইবু্যনালের রায়ের বিরুদ্ধে ১১ আগস্ট আপিল করে মুজাহিদ খালাস চান৷ সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি৷ গত ২৯ এপ্রিল থেকে আপিল শুনানি শুরু হয়৷