DoinikBarta_দৈনিকবার্তা_Tista

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ মে: প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গী হবেন কি না, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। একটা সময় মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি যেতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত মোদীর হস্তক্ষেপে বরফ গলল। কোনও অঘটন না ঘটলে ৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকা আসবেন মুখ্যমন্ত্রী।এর আগে ইউপিএ জমানায় মনমোহন সিংহ যখন ঢাকা গিয়েছিলেন, তখন শেষ মুহূর্তে যেতে রাজি হননি মমতা। তার কারণ ছিল, মমতার সঙ্গে আলোচনা না-করেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে শেখ হাসিনাকে কথা দিয়েছিল কেন্দ্র। দ্বিতীয় কারণ হল, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার যে মনমোহনের সফরসঙ্গী হচ্ছেন, সেটা মমতাকে আগাম জানানো হয়নি।

মোদী কিন্তু প্রথম থেকেই খুব সাবধানী। পাকিস্তান বাদ দিয়ে প্রায় সমস্তপ্রতিবেশী রাষ্ট্র সফর করে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশে যাচ্ছেন সবার শেষে। তার কারণ একটাই। মমতার সঙ্গে আলোচনা না-করে বাংলাদেশের ব্যাপারে একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে চাননি। মমতার সঙ্গে মোদীর একান্ত বৈঠক হয়েছে দু’বার। একবার সংসদে আর একবার রাজভবনে। দু’বারই বাংলাদেশ নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যে শীঘ্রই বাংলাদেশ যাচ্ছেন, সেটা সম্প্রতি রাজভবনের বৈঠকেই মমতাকে জানান মোদী। সেখানেই বিশেষ ভাবে মমতাকে অনুরোধ করেন সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য।মমতাও জানিয়ে দেন, নীতিগত ভাবে তিনি বাংলাদেশ যেতে সম্মত। এমনকী, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল নিয়েও সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দেন তিনি। বস্তুত, এই চুক্তি স্বাক্ষরের কর্মসূচি নিয়েই এ বার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যতটা জমি হস্তান্তর হবে, তার বেশির ভাগই যাবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তাই মোদী চাইছিলেন এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মমতা তাঁর সঙ্গে থাকুন। মোদীর সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন ও বাস পরিষেবা শুরু করা হবে। এই সব টওকল্পের ব্যাপারেও রাজ্য সরকার পূর্ণ সহযোগিতা করছে।

সূত্র বলছে, পরিস্থিতি জটিল করে তোলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সাম্প্রতিক কলকাতা সফর। সেখানে রাজনাথ বলেন, খুব শীঘ্রই তিস্তা চুক্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী। ক্ষুব্ধ মমতা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন এই কথা বলছেন, তার মানে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় তিস্তা চুক্তি সই করে ফেলতে পারেন। সুতরাং তাঁর ঢাকা না যাওয়াই শ্রেয়।প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মমতাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, তিনি ঢাকায় গিয়ে তিস্তা নিয়ে কোনও কথা বলবেন না। ওই চুক্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন একমত নন, তখন শুধু বাংলাদেশের কথায় তিনি চুক্তি করবেন, এটা হতেই পারে না। রাজনাথও এ দিন বলেন, এই সফরেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যাবে এমন কথা তিনি বলতে চাননি। তিনি বলতে চেয়েছিলেন, দুই দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে এই চুক্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী।

মমতা বলেন, আমি তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে নই। কিন্তু উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করে তো চুক্তি করা উচিত নয়। মমতা জানান, তিস্তার জলপ্রবাহ খতিয়ে দেখতে কল্যাণ রুদ্রের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য।তাঁর কথায়, অতীতে যে চুক্তিটি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে বেশ কিছু ত্রুটি আছে।সেগুলি মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন। আমি নিজে বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার বক্তব্য জানিয়ে এসেছি। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে কোনও রকম নেতিবাচক সম্পর্ক নেই। কিন্তু আলাপ-আলোচনা না-করে একতরফা কিছু করলে আমরা সেটা কিছুতেই মানতে পারব না। কারণ, আমার কাছে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ সবার আগে।তাঁদের বক্তব্য, মমতার বাংলাদেশ সফরে মূল কাঁটা ছিল তিস্তা চুক্তি। কোনও রকম চাপ দিয়ে এ ব্যাপারে মমতাকে নতিস্বীকার করানো সম্ভব নয়। মোদীর পক্ষ থেকে চলতি সফরে তিস্তা চুক্তি না-করার আশ্বাস মেলার পরেই বাংলাদেশ যেতে রাজি হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশে এলেও তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। নরেন্দ্র মোদি মমতাকে কথা দিয়েছেন তার সম্মতি ছাড়া তিনি একতরফা ভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করবেন না। এ নিয়ে সফরে কোনো কথাও বলবেন না।তবে স্থল সীমান্ত চুক্তিসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হবে সফরে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ওইসব চুক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকায় নরেন্দ্র মোদি মমতাকে পাশে চান ওই সময়ে।আগামী ৬ ও ৭ জুন দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন নরেন্দ্র মোদি। মমতাসহ চার মুখ্যমন্ত্রী তার সফর সঙ্গী হচ্ছেন। বেশ আগে থেকে এই সফর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও মমতার বাংলাদেশে আসা নিয়ে একটি অনিশ্চয়তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল গত কয়েক দিন ধরে। শেষ পর্যন্ত সেই অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। নতুন করে কোনো সমস্যা তৈরি না হলে বলা যায় মমতা আসছেন মোদির সঙ্গে।জানা যায়, কলকাতায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাম্প্রতিক সফরে তিস্তা নিয়ে করা একটি মন্তব্য মমতাকে বিগড়ে দেয়। ওই সফরে রাজনাথ শিং বলেন, খুব শিগগির তিস্তা চুক্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী। তার এ বক্তব্য মমতাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। মমতা ভাবতে থাকেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্র তার সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি। চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গ পানির কত শতাংশ পাবে তাও সুরাহা হয়নি। আর স্বরাষ্টমন্ত্রী বলছেন, শিগগির চুক্তি হয়ে যাবে। তিনি মোদির সঙ্গে ঢাকা গেলে চুক্তি হয়েও যেতে পারে। তাই তার ঢাকা না যাওয়ায়ই শ্রেয়।

খবরে বলা হয়েছে, মমতার এই পিছুটান বিপাকে ফেলে দেয় নরেন্দ্র মোদিকে। শেষ পর্যন্ত তাকে নতুন করে দূত্যিয়ালি করতে হয়। মোদি বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তার ঢাকা সফরে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক রাজ্য হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি মমতাকে ঢাকা যাওয়ার ব্যাপারে প্রথম থেকেই তিনি অনুরোধ করে আসছেন। মমতা তার সফর সঙ্গী হতে রাজি হওয়ায় তিনি খুশি।এর আগেও ইউপিএ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরেও শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেন মমতা। মমতার অভিযোগ ছিল, তার সঙ্গে আলোচনা না করেই তখন তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে কথা দিয়েছিল কেন্দ্র।এসব বিষয় নরেন্দ্র মোদিও জানেন। আর জানেন বলেই প্রথম থেকে তিনি সতর্ক। দায়িত্ব নেয়ার পর গত এক বছরে পাকিস্তান বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই তিনি সফর করেছেন। বাংলাদেশে তিনি সবার শেষে আসছেন। এর কারণ একটাই, তা হলো- মমতার সঙ্গে আলোচনা না করে বাংলাদেশের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না তিনি।সফরসঙ্গী হিসেবে মমতাকে রাজি করাতে নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সফরে যান। সেখানে দুইবার মমতার সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক হয়। এর মধ্যে রাজভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মমতাকে তার সঙ্গে ঢাকা যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। মমতাও যেতে রাজি হন। সেই বৈঠকে স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল নিয়েও মমতা সবুজ সঙ্কেত দেন নরেন্দ্র মোদিকে। পরে বিলটি রাজ্যসভা ও লোকসভায় পাস হয় সর্ব সম্মতভাবে।

সূত্রে জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদির এই সফরে স্থল সীমান্তসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হবে। স্থল সীমান্ত চুক্তির ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যতটা জমি হস্তান্তর হবে, তার বেশির ভাগই যাবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তাই মোদি চান এই চুক্তি সইয়ের সময় মমতা তার সঙ্গে থাকুন। মোদির সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন ও বাস পরিসেবা শুরু করা হবে।সূত্রে আরো জানা গেছে, রাজনাথের বক্তব্যে চটে যাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে মমতাকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, তিনি (মোদি) ঢাকায় গিয়ে তিস্তা নিয়ে কোনও কথা বলবেন না। ওই চুক্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন একমত নন, তখন শুধু বাংলাদেশের কথায় তিনি চুক্তি করবেন, এটা হতেই পারে না।রাজনাথও তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন- এই সফরেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যাবে এমন কথা তিনি বলতে চাননি। বলতে চেয়েছেন, দু’দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে এই চুক্তি হবে।তার ভাষ্য, অতীতে যে চুক্তিটি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে বেশ কিছু ত্রুটি আছে। সেগুলো মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন। তিনি নিজে বাংলাদেশে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার বক্তব্য জানিয়ে এসেছেন।জানা গেছে, আগামী বছর পশ্চিম বঙ্গে রাজ্য সভার নির্বাচন। মমতার আশঙ্কা তিস্তা চুক্তি সেই নির্বূাচনে ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই তিনি ওই পর্যন্ত এ নিয়ে অপেক্ষা করেতে চান।