ddd_60980

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫ জুন: বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে অতিরিক্ত উদ্যোগের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।রজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবছরই করদাতা বাড়ছে। তবে গতি মন্থর। হ্যাঁ, লক্ষ্য উচ্চ। তবে রাজস্ব বোর্ড এখন যথেষ্ট প্রস্তুত। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

আসন্ন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য সংসদে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরদিন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বরাবরের মতোই রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যাতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের চারজন মন্ত্রী ও সচিবরা মুহিতের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেট বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই এবং রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না বলে মন্তব্য করেছে সিপিডি। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন,‘বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট কথা বলতে তারা কী বোঝায়, আমি বলতে পারি না। আমাদের যদি অগ্রগতির দিকে যেতে হয়, তাহলে আমাদের অতিরিক্ত উদ্যোগের প্রয়োজন আছে। নতুন করদাতা বাড়াতে বড় ধরনের ধাক্কা দেওয়ার এখনই সময়। বাজেটের ২ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনকে চ্যালেঞ্জ’ হিসাবে নেওয়ার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে এখন একটি ধাক্কা দেওয়ার সময় এসেছে।অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সত্যিই যদি অগ্রগতির পথে যেতে চাই, ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাই, তাহলে রাজস্ব আদায় অবশ্যই বাড়াতে হবে। আর সেই চ্যালেঞ্জই আমি আমার এই বাজেটে নিয়েছি। সেই চ্যালেঞ্জ সাকসেস করব বলে আমি প্রত্যাশা করছি।

মুহিতের বিশ্বাস, বাজেটের লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব বাবদ দুই লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা দিতে জাতি প্রস্তুত আছে। আর এই বিশাল লক্ষ্য অর্জনে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা এনবিআরও প্রস্তুত রয়েছ।আমরা নতুন করদাতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি, এই করদাতাদর কাছ থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আসবে। এ কথা ঠিক যে এই রাজস্ব আদায়ের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা দেওয়া দরকার। এই ধাক্কা দেওয়ার সময় এসেছে এবং আমরা সেই ধাক্কাটিই দিতে চাই।আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে টানা সপ্তমবারের মতো বাজেট দেওয়ার বিরল কৃতিত্ব দেখানো মুহিত বলেন, ২০০৯ সালে তিনি যখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান, তখন দেশে সক্রিয় করদাতার সংখ্যা ছিল সাত লাখ। এখন তা বেড়ে ১১ লাখ হয়েছে।

ইট ইজ ভেরি ভেরি স্লো। এই সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমাদের এনবিআর একটি জরিপ করেছে, সেই জরিপের ভিত্তিতেই আমরা নতুন করদাতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত এই কর আদায় করব।মুহিত বলেন, আমরা জানি, আমাদের এই টার্গেট উচ্চাভিলাষী, টার্গেট ইজ ভেরি হাই, তবে আমাদের রেকর্ড আছে, এই সাত বছরে একবার আমরা রাজস্ব আদায়ে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলাম। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকার ও এনবিআরের পক্ষ থেকে এবার অতিরিক্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান মুহিত।দশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের স্বার্থেই এ উদ্যোগের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়, বলেন তিনি। রাজস্ব না বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি সাতের উপরে ওঠা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলেন, রাজস্ব না বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি সাতের উপরে ওঠানো সম্ভব নয়। আমি যখন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন রাজস্ব দেওয়া লোকের সংখ্যা ছিলো সাত লাখ। যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এগারো লাখে।তিনি বলেন, আমরা যদি প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) সাতের উপরে ওঠাতে চাই তাহলে অবশ্যই রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে হবে।রাজস্ব সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান এনবিআর আগের থেকে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। জনবলও দ্বিগুণ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় না রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে কোনো সমস্য হবে,’ যোগ করেন মুহিত।এর আগে একই সংবাদ সম্মেলনে কালো টাকার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, কালো টাকা নিয়ে বলার কিছু নেই। কারণ, এ বিষয়ে আয়কর আইনেই স্পষ্ট করে লেখা আছে। তাই আমি কালো টাকা নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে চাই না।

কালো টাকা নিয়ে বলার কিছু নেই। কারণ, এ বিষয়ে আয়কর আইনেই স্পষ্ট করে লেখা আছে। তাই আমি কালো টাকা নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে চাই না।বাজেট বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন একটি বড় সমস্যা। তবে বর্তমানে এক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। গত অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৬ শতাংশ।

সিমকার্ডে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সেক্টর অনেক উন্নতি করেছে। শুল্ক আরোপের ফলে গ্রাহকদের সমস্যা হবে, আমার তা মনে হয়না। চিনি আমদানিতে শুল্ক আরোপের বিষয়ে বাজেট বইয়ে ভুল ছাপা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে এক সাংবাদিক অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বাজেট প্রস্তাবের আগে আপনি বলেছিলেন, চিনি আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে না। কিন্তু বাজেট বইয়ে দেখা যাচ্ছে অপরিশোধিত চিনির প্রতি মেট্রিক টনে আমদানি শুল্ক দুই হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। আর পরিশোধিত চিনিতে প্রতি টনে ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই প্রশ্ন শুনে প্রথমে মন্ত্রী ওই সাংবাদিককেই ভুল সাব্যস্ত করে ক্ষিপ্ত হন। কিন্তু আরেক সাংবাদিক বাজেট বই থেকে তথ্যটি উদ্ধৃত করলে তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, এটা কেমন করে আসেলো!এ ব্যাপারে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবর রহমানকে জিজ্ঞেস করেন তিনি। তিনি বলেন, ভুল করে এসেছে। আপনি আগে বলেছিলেন কিন্তু সংশোধন করা হয়নি। সংসদে বাজেট আলোচনা শুরুর আগেই সংশোধন করা হবে।২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, যারা দেশের অগ্রগতি চান না তারাই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলে নাড়ানাড়ি করছেন।শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রায়ই অনেক বিষয়কে উচ্চাভিলাষী, স্বপ্নবিলাসী ও কল্পনাবিলাসী বলে আখ্যা দিয়ে থাকি। কিন্তু বর্তমান সরকার তা বাস্ত বে রূপ দিচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশীয় অর্থায়নে পদ্মাসেতু হবে, তখন দেশের মানুষের সঙ্গে বিদেশিরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু আমরা এখন পদ্মাসেতুর বাস্তব রূপ দেখছি, বলেন তিনি।

ভাতা প্রসঙ্গে আমু বলেন, যখন আমরা এটা চালু করার পরিকল্পনা করেছিলাম তখন বিদেশিওরা অবাক হয়েছিল। আমাদের মতো গরিব দেশ ভাতা দেবে এটা তারা বিশ্বাসই করতে পারেনি। কিন্তু এখন দেশে অনেকেই ভাতা পাচ্ছেন।’সংবাদ সম্মেলনে মেট্রো রেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন তিনি।শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে একটু ধীরগতি হয় এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়।রাতারাতি উন্নতি করা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের হাতে আলাদ্দিনের চেরাগ নেই। তবে শেখ হাসিনা সরকার দেশের অনেক অগ্রগতি করছেন। এখন আমরা বিদেশে চাল রফতানি করছি।