Thakurgaon_Orobindu Pathshala Pic-2

দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ১১ জুন: ‘জন্মদিন’ শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ জাগে। চোখের পাতায় ভেসে ওঠে বর্নিল আয়োজনের চিত্র- রঙিন বেলুন, বিশালাকার উপাদেয় কেক, মোমবাতি আর শিশুদের কল-কাকলি। এতোসব আয়োজন থাকে ক্ষণিকের জন্য; বড়জোর এক-দু’দিন। কিন্তু অরবিন্দুর ‘জন্মদিন’ চলে হররোজ। শিশুদের নিত্য পদচারণায় মুখর থাকে তার ‘জন্মদিন’ নামের অবৈতনিক পাঠশালা।

ঠাকুরগাঁওয়ের অজ পাড়াগাঁয়ে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত করতে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন সরকারি কর্মচারী অরবিন্দু রায়। ভিন্নধর্মী এই পাঠশালাটি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার উজ্জ্বলকোঠা গ্রামে। সন্ধ্যা নামলেই শিশুরা দলবেঁধে ছুটে আসতে থাকে অবৈতনিক এই পাঠশালায়। মাত্র ১০জন শিশু নিয়ে পাঠশালার যাত্রা শুরু হলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩’শ জনে।

২০১১ সালের নভেম্বর মাসে সেবা আর শিক্ষার আলো ছড়াতে স্থানীয় পরিবার কল্যাণ বিভাগের কর্মচারী অরবিন্দু রায় এলাকার কয়েকজন যুবককে নিয়ে এ কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অরবিন্দু ও ১৬ জন বেকার যুবক/যুবতী এ পাঠশালায় শিক্ষা দান করছেন। উজ্জ্বলকোঠা ছাড়াও পাঠশালায় পড়তে আসছে বাঙ্গালী পাড়া, রামদেবপুর, ডাবগ্রাম, রাঘবপুর, অতরগাঁওসহ ৮টি গ্রামের শিশুরা। পাঠশালা চালু হওয়ায় শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকরা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।

অভিভাবক বাসন্তী রানী, হিমেল সরকার, ললিত রায়সহ অনেকেই বলেন, ‘কৃষিতে তেমন ভালো লাভ হচ্ছে না। সংসারে টানাটানি। তিন-চার জন ছেলেমেয়ের লোখাপড়ার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলাম আমরা।’এই পাঠশালাটি যেন আমাদের জন্য আর্শীবাদ। পাঠশালাটি বন্ধ হলে অনেক আলো নিভে যাবে। তাই সবার সহযোগিতা চাই।’হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মশালায় এ পাঠশালা চালু হলেও এখানে নেই বসার ব্যবস্থা। নেই আলোর ব্যবস্থা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শিশুরা লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুলের পাশাপাশি বিনা খরচে বাড়তি পড়ার সুযোগে খুশি শিশু শিক্ষার্থীরা। উজ্জ্বলকোঠা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী জয়ন্তী রানী রায় জানায়, এ পাঠশালায় এসে লেখাপড়ায় তার মনযোগ বেড়েছে। স্কুলের পড়াগুলো এখানে এগিয়ে নেওয়া যায়।

উজ্বলকোঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী কপিলা রানী জানায়, তাদের সংসারের অবস্থা খুবই নাজুক। লেখাপড়ার খরচ জোটে না। প্রাইভেট পড়বে কীভাবে! এই পাঠশালা চালু হওয়ায় তার সেই ভাবনা ঘুঁচেছে।৫ম শ্রেণীর ছাত্র জয়ন্ত চন্দ্র জানান, সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে পড়তে আসি। রাত ৯টায় আবার চলে যাই।’অবহেলিত গরিব শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্যই এই পাঠশালার জন্ম বলে জানান উদ্যোক্তা অরবিন্দু রায়। অরবিন্দু বলেন, ‘দীর্ঘ দিনের আকাক্সক্ষা ছিল গ্রামাঞ্চলের অবহেলিত শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করার। উজ্জ্বলকোঠা গ্রামবাসীদের সহায়তায় এই পাঠশালা চালু করা হয়েছে। প্রতিদিন শিশুদের ভিড় বাড়ছে।’

তিনি আরোও বলেন, ছোট্ট পরিসরে লোখাপাড়া চালানো খুবই কষ্টকর। শিশুদের বসার জন্য তেমন ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়তো এই পাঠশালার সমস্যা লাঘব হবে।এখানে পাঠদান করছেন, কৃষক প্রতাপ রায়। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর তেমন কোনো কাজ থাকে না। তাই ভালো কাজে সময় দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ তিনি বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই ভবিষৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে এ ধরনের উদ্যোগ ছড়িয়ে দিতে পারলে সোনার আলোয় আলোকিত হবে এ বাংলা।