21067_1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ জুলাই ২০১৫: গত দুদিন ধরে চলা গুঞ্জনের মধ্যে অবশেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হারিয়েছেন আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদধারী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়(এলজিইডি)মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়ার গুজবই সত্যি হলো।বৃহস্পতিবার সৈয়দ আশরাফকে এলজিআরডি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি একই সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও থাকবেন।বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা।এখন থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ই হবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর মূল দায়িত্বক্ষেত্র। তবে তিনি অতিরিক্ত হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।

গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সৈয়দ আশরাফকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেলেও এ নিয়ে ধুম্রজাল কাটছিলো না।অবশেষে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশারাফ হোসাইন ভূঞা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে সৈয়দ আশরাফকে অব্যাহতি দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। জানা গেছে,সৈয়দ আশরাফ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও তিনি কখনোই সচিবালয়ে অফিস করতেন না।মন্ত্রণালয়ের কোন বৈঠকে বা সভা সেমিনারেও থাকতেন না আশরাফ। তিনি বাসায় বসে ফাইলে স্বাক্ষর করে সরকারি বেতন ভাতা নিতেন। ফলে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দেয়।মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনে একনেক বৈঠকে সৈয়দ আশরাফের অনুপস্থিতি দেখে ক্ষেপে যান প্রধানমন্ত্রী।একনেক বৈঠকে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এমপিদের জন্য স্থানীয় সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি প্রকল্প উত্থাপন করা হয়। সাধারণত যে মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প একনেকে উঠে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে তা উপস্থাপন করতে হয়। কিন্তু এত বড় প্রকল্প উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রী ছিলেন না।এ প্রেক্ষিতেই সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি এখন থেকে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা জানিয়েছেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।মঙ্গলবার একনেক সভার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে তার মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর সৈয়দ আশরাফ গুজবে কান না দিতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন।বৃহস্পতিবার বিকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিষয়টি নিশ্চিত করার পর মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরৃল ইসলামের ছেলে আশরাফের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।অব্যাহতির ঘোষণা আসার আগে আশরাফ দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘণ্টাখানেক একান্তে কথা বলেন। মোশাররাফ হোসাইন বলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও মন্ত্রী থাকছেন সৈয়দ আশরাফ। তবে তার কোনো দপ্তর থাকছে না।

আশরাফ বাদ পড়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এসেছেন শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুলের শ্বশুর খন্দকার মোশাররফ।এই মন্ত্রণালয়ের অধীন রুরাল ওয়ার্কার্স প্রোগ্রামের প্রথম প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার মোশাররফ এলজিইডি বিভাগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিলেন।স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব পেলেও তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর শেখ হাসিনার সরকারে স্থান হয় খন্দকার মোশাররফের। ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায়ও তিনি শুরু থেকে রয়েছেন।গত বছরের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর দলে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত আশরাফের বাদ পড়ার মধ্য দিয়ে কার্যত প্রথম পরিবর্তন এল।এর আগে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বাদ পড়েন। তবে তার মন্ত্রণালয় কাউকে দেওয়া হয়নি।মন্ত্রণালয় এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বৈঠকে অনুপস্থিতি নিয়ে আশরাফের সমালোচনা ছিল দলে।মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে আশরাফকে না দেখে শেখ হাসিনা অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন জানান।

নাম প্রকাশে অনিচছুক ওই ব্যক্তি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উনি (আশরাফ) মিটিং-টিটিংয়ে আসেন না, এজন্য সরিয়ে দিলে ভালো হয়।এতে আশরাফকে অব্যাহতি দেওয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব কোনো খবর না থাকার কথা জানান।এরপর আশরাফ তার নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেন, কোনো গুজবে কান দেবেন না।গত সাত বছর ধরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সামলে আসা ৬৩ বছর বয়সী সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদেও রয়েছেন প্রায় একই সময় কাল।২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বন্দি হওয়ার প্রেক্ষাপটে দলে সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ভার আসে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী সৈয়দ নজরুলের ছেলে আশরাফের উপর।তখন বিরূপ পরিস্থিতিতে আশরাফের সফলতার মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল পরে মুক্তি পেলেও দায়িত্বে আর ফিরতে পারেননি। পরে ২০০৯ সালে কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আশরাফ।তার আগে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার সরকারে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আশরাফ। ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠন করলে দলের সাধারণ সম্পাদককে একই মন্ত্রণালয়ই দেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদককে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটি দিতে স্বচ্ছন্দ। এর আগে শেখ হাসিনার সরকারে জিল্লুর রহমানও একইভাবে এই মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। বিএনপির ক্ষেত্রেও একই বিষয় দেখা যায়।কিশোরগঞ্জের সংসদ সদস্য আশরাফ ছাত্রজীবনে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জেলখানায় সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর লন্ডনে চলে যান আশরাফ। সেখানে আওয়ামী লীগে সক্রিয় ছিলেন তিনি।১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার ওই সরকারে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হন আশরাফ।১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন তিনি।বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ চার সহচরের মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকারে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। পরে তিনি পদত্যাগ করেন। জাতীয় চার নেতার পরিবারের মধ্যে এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীরও সদস্য।