18-07-15-BD PM_Eid Greeting_Gono Bhaban-40

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ জুলাই ২০১৫ : মন্ত্রিসভায় রদবদলে সরকারের কাজে গতি বাড়ে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শনিবার ঈদশুভেচ্ছা বিনিময়ের পর এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্লামেন্ট সিস্টেম অব ডেমোক্রেসিতে এটা একটা সাধারণ কাজ। যে কোনো সময় মন্ত্রিসভায় চেইঞ্জ হতে পারে। মন্ত্রী পরিবর্তন হতে পারে। মন্ত্রীদের পরিবর্তন হওয়া, মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পুনর্বণ্টন হচ্ছে সরকার প্রধানের এখতিয়ার। কাজেই আমরা সময়ে সময়ে এই ধরনের পরিবর্তন আনতে পারি।মাঝে মাঝে পরিবর্তন আনলে একটু গতিশীলতা বাড়ে। মানুষের আগ্রহও বাড়ে।এ সময় হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এই যে একটু পরিবর্তন হল,মিডিয়াও একটু লেখার সুযোগ পেল। মিডিয়াকেও একটু লেখার সুযোগ করে দিলাম। এই জন্য আমাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।কাজেই এটা একটা সাধারণ ব্যাপার। এটা সব সময়ে হয়, সব দেশেই হয়। এটা নিয়ে বিরূপ কথা বলার কোনো সুযোগ নাই।মন্ত্রিসভায় এই রদবদল নিয়ে আলোচনায় অতীতের দুটি ঘটনা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, একটি কথা বলি, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার নেতৃত্বে যখন ক্ষমতায়, উনি কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিয়ে কামরুজ্জামান সাহেবকে সভাপতি করেছিলেন। উনাকে মন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। তিনি পার্টিও প্রেসিডেন্ট হিসাবে পার্টি চালাতেন, কিন্তু মন্ত্রীর মর্যাদায় ছিলেন।কাজেই এই পদ্ধতিও ছিল।বঙ্গবন্ধু ’৫৭ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। সংগঠনটাকে গড়ে তোলার জন্য পার্টির সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন।বাংলাদেশে একমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই পার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদ গ্রহণ করে দলকে সুসংগঠিত করতে মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন। এটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের হয়, এটা নিয়ে এত লেখালেখির সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।

তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে এটা একটা সাধারণ কাজ। যেকোনো সময় মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন হতে পারে, মন্ত্রী পরিবর্তন হতে পারে। এটা সব দেশে, সব সময়ে হয়।এ নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের সুযোগ নেই।তিনি বলেন, মন্ত্রীদের পরিবর্তন হওয়া,মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পুনর্বণ্টন হচ্ছে সরকার প্রধানের এখতিয়ার।কাজেই আমরা সময়ে সময়ে এই ধরণের পরিবর্তন আনতে পারি। মাঝে মাঝে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনলে কাজে গতি বাড়ে। একই সঙ্গে মানুষের আগ্রহও বাড়ে। জনগণ পাশে থাকলে কেউ ক্ষতি করতে পারবে নাপ্রধানমন্ত্রী জনগণকে সরকারের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণই আসল শক্তি। জনগণ আমাদের পাশে থাকলে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। কোন শক্তি দেশের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ৯৩ দিনের হরতাল-অবরোধে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলো। এটা সত্য যে তারা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। কিন্তু তারা দেশকে পিছিয়ে দিতে পারেনি।তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত মানুষকে হত্যা করেছে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। যদিও মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো জঘন্য কাজ আর হতে পারে না। অথচ তারা তাই করেছে। তারা আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বহু মানুষের জীবনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছিলো।হরতাল-অবরোধ, সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সব ধরণের নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণেই দেশের মানুষ শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পারছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ৯৩ মাসের হরতাল-অবরোধে দুই হাজারের বেশি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা রেলের বগি পুড়িয়েছে, ইঞ্জিন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এমনকি লঞ্চও পুড়িয়েছে।হরতাল-অবরোধে বিপুল যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত না হলে মানুষ আরো সহজে বাড়ি ফিরতে পারতো মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, যদিও সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ায় মানুষ হয়রানি ছাড়া বাড়ি যেতে পেরেছে। দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সবার কাছে দোয়া চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, তা যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশ যেন বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়। বাঙালি জাতি বিশ্বসভায় যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন জনগণের কল্যাণে কাজ করে। নিয়ত ভালো থাকলে ফল যে পাওয়া যায়, তাও আজ প্রমাণিত। দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের বাজেট চারগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এখন উন্নয়নের রোল মডেল। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। প্রবৃদ্ধি অর্জন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের কাছে সমাদৃত।

প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ১০টার কিছুক্ষণ আগ থেকে রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, প্রতিবন্ধী, দরিদ্র ও দুস্থ, বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের নাগরিকের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।এরপর সাংবাদিকদের মাধ্যমেদেশের জনগণকে ঈদ মোবারক জানান শেখ হাসিনা।শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, জয়ের স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওভারমায়ার, কন্যা সায়মা হোসেন পুতুল,মেয়ে জামাই খন্দকার মাসরুর হোসেন,নাতি-নাতনিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।শুরুতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আর্ন্তজাতিক সম্পাদক ফারুক খান প্রমুখ ।