onion_পেঁয়াজ-g_17228

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০১৫: ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে রাজধানীতে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এক লাফে ৯০ টাকায় উঠে গেছে। জোগান বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আরেকদফা পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বাড়িয়েছে ভারত সরকার।শনিবার দ্বিতীয় দফায় প্রতি টনে ২৭৫ ডলার বাড়ানো হয়েছে। ফলে পেয়াঁজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য প্রতি টন ৭০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় গত ২৬ জুন রপ্তানি মূল্য ২২৫ ডলার বাড়িয়ে ৪২৫ ডলার করাছিল ভারত সরকার। রপ্তানি মূল্য বাড়ানোর ফলে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশি দেশগুলির বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। পেঁয়াজের জন্য ভারতের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল বাংলাদেশ। তাই সবচেয়ে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ।ভারতে মূল্য বৃদ্ধির খবরে রাতারাতি বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজারে আগুন লেগে গেছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো প্রচুর পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। দেশে এখন পেঁয়াজের কোন সংকটও নেই। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদার পরিমাণ ১৫ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় প্রায় ১২ লাখ টন।

মাত্র ৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। কিন্তু দেশের মুনাফাখোর মজুতদার ও ব্যবসায়ীরা কৌশলে দেশীয় পেঁয়াজ মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তিনগুণ দামে বিক্রি করছেন। রমজান মাসে পেঁয়াজের কেজি ছিলো মাত্র ৩২ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজ সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি। জানা গেছে, গত কয়েক মাসে বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন মার খেয়েছে। ফলে পাইকারি বাজারে তার দাম দাঁড়িয়েছে কেজিতে ৬০ রুপি। খুচরা বাজারে যা পৌঁছে গেছে প্রায় ৮০ টাকায়।এ অবস্থায় ভারত রপ্তানি বন্ধ করে বাজারে জোগান বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করতে যাচ্ছে ।খুচরা বিক্রেতাদের মতে দ্রুত সময়ে সেঞ্চুরি হাঁকতে পারে পেঁয়াজের দাম।নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আশরাফ উদ্দিন লিটন পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে তা বলতে পারবো না। দাম বাড়ার কারণ শ্যামবাজারের পাইকাররা জানেন। শুনেছি ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণেই দাম বাড়তি।

শ্যামবাজারের পাইকারদের উদ্ধৃতি দিয়ে লিটন বলেন, খুব দ্রুত সময়ে েেপঁয়াজের দাম আরও বাড়বে। তখন আমাদের ১০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে।খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা লিটনের কথামতো দাম বাড়ার কারণ জানতে ছুটে গেলাম শ্যামবাজারে। এখানে প্রতিকেজি দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ শনিবার শ্যামবাজারে পাইকারি দামে প্রতিকেজি দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।শ্যামবাজারের পাইকাররা জানান, ভারত থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশি বাজারে। দেশের অন্যতম পাইকারি পেঁয়াজের হাট ফরিদপুর, পাবনা ও রাজবাড়ীতেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এসব হাটে ৪০ কেজি পেঁয়াজ ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অথচ একদিনের ব্যবধানে তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়।

বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে শ্যামবাজারের অন্যতম আড়ৎ রাজ ট্রেডিংয়ে। এই আড়তের মালিক হাজী মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ করেই ভারতের পেঁয়াজের আমদানি কমে গেছে। যে কারণে পেঁয়াজের শঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।তিনি বলেন, পেঁয়াজের আমদানি কমে যাওয়ায় দেশি মজুদদারও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশি মোকামে ৪০ কেজি পেঁয়াজ ২৪শ’ টাকায় কিনেছি অথচ আজকে সেই পেঁয়াজ ৩২’শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। পেঁয়াজের দামের তারতম্য দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন ঘুরে। যেসব খুচরা বিক্রেতারা রোববার পেঁয়াজ কিনেছেন তারা ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে যারা বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার পেঁয়াজ কিনেছেন তারা একটু কম দামে বিক্রি করতে পারছেন।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) জানিয়েছে পেঁয়াজের বাড়তি দামের কথা।

টিসিবি জানায়, রোববার প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে।অথচ রমজান মাসে ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজ ৩৬-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। এক মাসের ব্যবধানে দ্বিগুনের বেশি দাম।ভারতীয় আমদানি রেট বৃদ্ধিকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয় বলছে পেঁয়াজের দাম অল্প সময়ের মধ্যে কমে আসবে।এই প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন (এন.ডি.সি) বলেন, একমাসে ভারত পাঁচগুন আমদানি রেট বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে বাজারে পেঁয়াজের দামে হঠাৎ করে প্রভাব পড়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি রেট ছিল ৬০-৬৫ টাকা আজকে যেটা হয়েছে ৭০-৮০ টাকা।তিনি আরও বলেন, আশা করছি, পেঁয়াজের দাম দ্রুত সময়ে কমে আসবে কারণ আমাদের দেশি পেঁয়াজ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রয়েছে। পেঁয়াজ পঁচনশীল পণ্য। তাই কেউ এটি ধরে রাখতে পারবে না।