1344154416dbbl20120805093426

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫: ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিনেও কমলাপুর স্টেশনে ছিল উপচেপড়া ভিড়। ২০টি কাউন্টারই ছিল লোকে ঠাসা। লম্বা লাইন থাকায় টিকিট পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। ভোগান্তির পরেও যারা টিকিট পেয়েছেন তাদের মুখে ছিল হাসির ঝিলিক।বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহন করার টার্গেট নিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করে রেল কর্তৃপক্ষ। শনিবার শেষ হচ্ছে রেলের আগাম টিকিট বিক্রি। একইসঙ্গে বিআরটিসি বাস ও লঞ্চের আগাম টিকিট বিক্রি হওয়াতে শনিবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে শুক্রবারের চেয়ে মানুষের চাপ ছিল কম। তবে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২০টি কাউন্টারেই ছিল টিকিট প্রত্যাশীদের ভির। স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, শনিবার শেষ দিনে লোকাল যাত্রী বেশি আছে। তবে গত কয়েক দিনের চেয়ে আজ ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য লাইনের সারিটাও হয়েছে বেশ ছোট।

তিনি বলেন,শুক্রবার যাত্রী চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে আমাদের। তবে আজ মোটামুটি যাত্রী চাপ কম হওয়ায় মানুষ নির্বিঘ্নে টিকিট কিনতে পারছেন।তিনি বলেন, আজ মোট ১৪ হাজার ৬৩৩টি টিকিট দেওয়া হয়। গতকাল অনেকে টিকিটবঞ্চিত হলেও আজ টিকিটপ্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা হবে না।অগ্রিম টিকিটের জন্য কেরানীগঞ্জ থেকে ভোরে এসে কাউন্টারে দাঁড়িয়েছেন ইসরাত জাহান। তিনি স্বামী-সস্তান নিয়ে রাজশাহীতে যাবেন ঈদ করতে। সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি তিনটি টিকিট হাতে পেয়েছেন।এভাবে রংপুরগামী কবি বেলাল, সৈয়দপুরগামী শাহীন করিম, খুলনাগামী শাহীন রেজাও হাতে পেয়েছেন কাঙ্খিত টিকিট। তারা অভিযোগ করে বলেছেন, বাইরে দালালদের অতিরিক্ত টাকা দিলে তারা টিকিট পাইয়ে দেয়। তাহলে কী দাঁড়ায়, টিকিট কালো বাজারে চলে না গেলে কিভাবে বেশি টাকা দিলে টিকিট মিলছে? এই হচ্ছে রেলওয়ের ব্যবস্থাপনা।শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান করার সময় বেশ কয়েকজন টিকিট প্রত্যাশী অভিযোগ শোনেন এই প্রতিবেদক।

তবে তারা এটাও বলেছেন, গত ৪ দিন যে হারে টিকিট কালোবাজারে গেছে, আজ শনিবার সেই হারে কালোবাজারিদের কাছে যায়নি। সে কারণেই দেরী হলেও আমরা টিকিট পেয়েছি।রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) জানান, ঢাকার কমলাপুরে রেলওয়ে স্টেশনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। টিকেট ক্রেতারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারিত গন্তব্যের টিকেট ক্রয় করছেন। টিকেট বিক্রির সময় রেলওয়ের কর্মকর্তাগণ তদারকি করছেন।তিনি জানান, টিকেট কালোবাজারি রোধে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরা স্টেশন ও আশপাশের এলাকায় নজরদারি করছেন। এ পর্যন্ত আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।

মহানগর প্রভাতীর টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন শামীমা আক্তার। স্বামী ও দুই বছরের শিশু সন্তানসহ শনিবার ভোরেই স্টেশনে পৌঁছান তিনি। তবে সকাল আটটার আগেই স্বামী স্টেশন ত্যাগ করেন। ৯টায় অফিস, তাই েেকালের সন্তানসহ স্ত্রী শামীমাকে স্টেশনে রেখে যান তার স্বামী সাইফুল ইসলাম।নারীদের জন্য নির্ধারিত কাউন্টারে টিকিটের জন্য অপেক্ষমান শামীমার সঙ্গে বেলা পৌনে ১১টায় কথা হয়। বললেন, স্বামীর অফিস তাই বাধ্য হয়ে কোলের শিশুকে নিয়ে বাসায় তালা দিয়ে এখানে টিকিটের জন্য দাঁড়িয়েছি। পুরুষের জন্য ১৮-২০টি কাউন্টার থাকলেও নারীদের জন্য কাউন্টার মাত্র দু’টি। এজন্য টিকিটের জন্য বেশ ঝামেলা পেতে হচ্ছে। শামীমার মতো আরও কয়েকজন নারীকে দেখা গেছে শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াতে।শনিবার ঈদ-উল আযহার অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন।

এদিন বিক্রি হচ্ছে ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিট। শেষ দিনের টিকিট কাটতে কেউ এসেছেন আগের দিন বিকেলে, আবার কেউ সন্ধ্যায়। ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা অপেক্ষা করে কেউ কেউ ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন। কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকিটের জন্য মানুষের বাঁধভাঙ্গা স্রোত। বুকিং কাউন্টারের সামনের লাইনগুলো স্টেশনের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো মিজবাহুল ইসলাম বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল (শুক্রবার) রাত পৌনে ১২টায় টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি। সামনে এখনও সম্ভবত ৭০-৮০ জন আছেন। প্রতিটি টিকিট কাটতে কাউন্টারে ৩-৪ মিনিট সময় লাগছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে।টিকিট কাটতে আসা যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, বুকিং কাউন্টারে প্রতি টিকিট কাটতে সময় বেশি লাগায় প্রতি ঘণ্টায় ২০ থেকে ২৫ জনকে টিকিট দেওয়া যাচ্ছে। অথচ এ সময়ে দ্বিগুণের বেশি টিকিট ছাড়া যায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ সময় আরও কমিয়ে আনা যায় দাবি করে টিকিট কাটতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহরাব হাসনাইন বলেন, ট্রেনের টিকিট প্রিন্ট হওয়ার যে মেশিন, সেগুলো অনেকটা অ্যানালগ সিস্টেমের। বর্তমানে অনেক দ্রুতগতির প্রিন্টিং মেশিন রয়েছে, যা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করতে পারে।কমলাপুর স্টেশনে কারো মুখে হাসি, কারো বা শঙ্কা দেখা গেছে। টিকিট যারা পেয়েছেন তাদের কাছে তা ছিলো যেনো সোনার হরিণ!রামপুরা থেকে আসা গৃহিণী তাসনুবা আক্তার বলেন, অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে টিকিট পেয়েছি, এটাতেই শান্তি।

কমলাপুর স্টেশনের ম্যানাজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, শেষদিকে টিকিটের জন্য লোকের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তাই যাত্রীদের একটু কষ্ট পোহাতে হয়।গত চারদিনে প্রায় সবাই টিকিট পেয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিটও যারা লাইনে থাকবেন শেষ সময় পর্যন্ত তারা পাবেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানো হয়তো কষ্টকর, কিন্তু যারা থাকবেন তারা টিকিট পাবেন। কমলাপুর স্টেশন সূত্র জানায়, ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বরের টিকিট বিক্রি হয়েছে। শনিবার বিক্রি হয় ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিট।একইভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া যাবে ফিরতি টিকিট। এদিন বিক্রি হবে ২৭ সেপ্টেম্বরের টিকিট। ২৪ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৮ সেপ্টেম্বরের টিকিট, ২৫ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৯ সেপ্টেম্বরের টিকিট, ২৬ সেপ্টেম্বর ৩০ সেপ্টেম্বরের টিকিট এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ১ অক্টোবরের টিকিট।প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্য্যন্ত ঈদ-উল আযহার অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন। ঈদের সময় বিক্রিত টিকিট ফেরত দেওয়া হবে না।জানা গেছে, বর্তমানে রেলের মোট ৮৮৬টি কোচ রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ১৩৮টি কোচ ঈদের ঈদের আগেই ট্রেনের বহরে যুক্ত হবে। ১৯৯টি ইঞ্জিন চালু রয়েছে, ঈদ সামনে রেখে মেরামতকৃত আরো ২৫টি বহরে যুক্ত হবে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন সারাদেশে এক লাখ ৮০ হাজার টিকিট ইস্যু করা হয়। ঈদ মৌসুমে অতিরিক্ত চাপ মোকাবেলায় প্রতিদিন সব ট্রেন মিলিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। এ ট্রেনগুলো ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা খুলনা, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে ঈদের আগে তিনদিন এবং ঈদের পরে সাতদিন চলবে। এছাড়া ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া রুটে ঈদের দিন দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।এদিকে গত মঙ্গলবার কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়রোধে তারা সতর্ক রয়েছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ছাড়াও রেলওয়ের দু’টি নিরাপত্তা বাহিনী যাত্রীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। যেখানেই যাত্রী হয়রানি, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা দেখা যাবে সেখানেই যাত্রীদের নিরাপত্তায় সক্রিয় হবে এসব নিরাপত্তা বাহিনী।

চট্টগ্রাম: ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন আজ। অপরদিকে ঈদের অগ্রিম টিকিটের প্রথম বাড়ি ফেরাও শুরু হয়েছে আজ থেকে। ১৫ সেপ্টেম্বর যারা অগ্রিম টিকেট ক্রয় করেছিলেন তাদের ঘরমুখো যাত্রা শুরু হয়েছে আজ শনিবার থেকে। অন্যদিকে ঈদের আগের দিন অর্থাৎ ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিটের জন্য লোকে লোকারণ্য চট্টগ্রামের রেলওয়ে স্টেশন। টিকিট বিক্রি শুরুর আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে সিলেটগামী পাহাড়িকা ও ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট।টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় গতকাল রাত ৮টা থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনে অসংখ্য যাত্রী ভীড় করেন। টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় অনেকেই টাকার বিনিময়ে আশেপাশের বস্তির লোকজন থেকে শুরু করে অফিসের কর্মচারীদেরকে পর্যন্ত লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, শনিবার ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এদিনের জন্য ৭ হাজার ৫১২টি টিকিট যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এ

রমধ্যে ৫ হাজার ৩৬৪ স্টেশন কাউন্টারে এবং ২ হাজার ১৪৮টি অনলাইনের যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত।গত মঙ্গলবার ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ওইদিন ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বরের এবং পরদিন বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ২১ সেপ্টেম্বর, ১৭ সেপ্টেম্বর ২২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২৩ টিকিট বিক্রি হয়।একইভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া যাবে ফিরতি টিকিট। এদিন বিক্রি হবে ২৭ সেপ্টেম্বরের টিকিট। ২৪ সেপ্টেম্বর ২৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ৩০ এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ১ অক্টোবরের টিকিট।চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন,আজ (শনিবার) অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন হওয়ায় যাত্রীদের চাপ একটু বেশি। টিকিট বিক্রি শুরুর আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে সিলেটগামী পাহাড়িকা ও ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। তবে শুক্রবার যাত্রীদের চাপ আরো বেশি ছিলো।