9755_326744

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫: স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করার সুপারিশ করেছে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠিত ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। তারা বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হওয়া জরুরি। রোববার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও কার্যের ভারসাম্য: স্বশাসন ও সুশানের জন্য বিকেন্দ্রীকরণ শীর্ষক এক গোল টেবিল আলোচনায় এ সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের মূল উদ্যোক্তা সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে টিআইবির চেয়ারম্যান এম.হাফিজ উদ্দিন খান,স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, ড. শওকাত আলী ও অর্থনীতিবিদ হোসেন এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমানে জাতীয় সংসদ একদলীয় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় এ অবস্থা আরও খারাপ হবে।প্রবন্ধে তোফায়েল আহমেদ সাত দফা সুপারিশমালা তুলে ধরেন। এগুলো হলো- প্রতিটি নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত কার্যক্ষমতা তাদেরকে চর্চা করতে দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হতে পারে। কিন্তু দলীয় বিবেচনায় পুরস্কার, শাস্তি ও অর্থায়ন হতে পারে না। পাবর্ত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের জেলা পরিষদগুলোকে যথা শিগগিরই সম্ভব নির্বাচিত প্রতিনিধির শাসনের আওতায় আনা এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে সরকারি দপ্তর, জনবল এবং অর্থ সম্পদ হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরানিত করতে হবে।ড.তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমানে আইন বিভাগ এক দলীয় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন। তা না হলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।

আলোচনায় এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। আমার উদ্দেশ্যে হলো জনগণের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রকে টেকসই করা। তবে আমরা এটি পারবো না, আমাদের সেই ক্ষমতা নেই। আমরা চাই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। দেশের গণতন্ত্র সুসংহত ও পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের জন্য শুধু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়। আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে হবে। রাজনীতিবিদদেরই এ কাজটি করতে হবে। দেশের আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এসব প্রতিষ্ঠানে এখন দলীয়করণ হচ্ছে।রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা না থাকলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব, তার সর্বশেষ প্রমাণ শ্রীলঙ্কা। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ঐকমত্য প্রয়োজন।

ভারতে রাজনৈতিক বিভাজন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের চেয়ে প্রকট। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়ে যায়, শামসুল হুদা বলেন।ড. তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, অতি কেন্দ্রীভূত অতিরিক্ত ক্ষমতা, এককেন্দ্রীক সমতা- শুধু রাষ্ট্র নয়, সংগঠন, পরিবার সবক্ষেত্রে ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ক্ষমতা মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে। ক্ষমতার প্রতি অতি অনুরাগ ও উন্মাদনায় কিছু কিছু মানুষ পাগল হয়ে যায়। তিনি বলেন, সচিব কখনো মন্ত্রীর কর্তৃত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবেন না। সচিব যদি রাজনৈতিক কর্মী হয়ে যান, তাহলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে মন্ত্রী কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন, সেটাও বিবেচ্য বিষয়। নাকি সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। স্থানীয় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হতে পারে, কিন্তু দলীয় বিবেচনায় পুরস্কার, শাস্তি, অর্থায়ন হতে পারে না।

বর্তমানে আইন বিভাগ অর্থাৎ জাতীয় সংসদ একদলীয় হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন,এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় এ অবস্থা আরো খারাপ হবে।ড. তোফায়েল তার সাত দফা সুপারিশমালায় তিনি বলেন, প্রতিটি নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত কার্যক্ষমতা, তাদেরকে চর্চা করতে দিতে হবে। এ ব্যাপারে কোনোরূপ বাধা বা হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। স্থানীয় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হতে পারে, কিন্তু দলীয় বিবেচনায় পুরস্কার, শাস্তি, অর্থায়ন হতে পারে না। পাবর্ত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের জেলা পরিষদগুলোকে যথা শিগগিরই সম্ভব নির্বাচিত প্রতিনিধির শাসনের আওতায় আনতে হবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পিরষদ পর্যায়ে সরকারি দপ্তর, জনবল এবং অর্থ সম্পদ হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরানিত করতে হবে।ড. শওকত আলী বলেন, আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার নিয়ে অনেক আইন রয়েছে, কিন্তু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি।

স্থানীয় সরকারকে ফলপ্রসূ করতে হলে প্রথমেই কেন্দ্র থেকে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ একটি একক রাষ্ট্র। এর কোনো অঙ্গরাজ্যনেই।একক রাষ্ট্রে ক্ষমতার পুরোপুরি বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়।এটা নেন্দ্রর হাতেই থাকবে।আহসান এইচ মনসুর বলেন, এমপিরা অসাংবিধানিকভাবে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করেন। এটা বন্ধ করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিকশিত করতে হলে এর আর্থিক স্বাধীনতা অবশ্যই প্রয়োজন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার বলেন, আমলারা কোনোদিন কোনোভাবেই চান না, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হোক।বিকেন্দ্রীয়করণ না হওয়ার জন্য আমলারাই দায়ী।আমাদের কাগজপত্রে অনেক কাজ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তেমন ক্ষমতা বা অর্থ দেওয়া হয়নি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের কাগজপত্রে অনেক কাজ দেয়া হয়েছে, কিন্তু ক্ষমতা বা অর্থ কোনোটাই দেয়া হয়নি। আগে আমরা জলমহল, হাটবাজার থেকে কর ধার্য করে টাকা পেতাম। এডিপি থেকেও ভাগ পেতাম, সেই ক্ষমতা এখন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের অবস্থা ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সরদারের মতো। জনগণ ইতোমধ্যেই রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে এনেছে। এখন যদি স্থানীয় প্রতিনিধদের কাছ থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে কি অবস্থা দাঁড়াবে আপনারাই বলেন? ইউএনও যিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার কথা, তিনি ব্যস্ত থাকেন ডিসির মনোরঞ্জনে।

যে সরকারই আসে, সে সরকারই আমলাদের সঙ্গে হাত মেলায়। কিন্তু সরকার এ সত্যটা বুঝতে চায় না, আমলারা দেশ চালায় না। দেশ চালায় গার্মেন্টস শ্রমিক ও বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো প্রবাসী শ্রমিকরা।কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার উত্তরদা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানি বলেন, ইউএনওরা চেয়ারম্যানকে চাকরের মতো ব্যবহার করে। আমাদের চাকরি তার মর্জির উপরে নির্ভর করে। আমার চাকরির রশি তার হাতে। অথচ আইনে তার কাজটা শুধুই উপজেলা ও আমাকে সাচিবিক সহায়তা দেয়া। কিন্তু সরকার বিধি করেছে আমলারা বিধি করেছে, তার প্রতিবেদনই আমাদের চাকরি নির্ভর করছে।