mina_494757439

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫: ইসলাম ধর্মের অন্যতম মূল স্তম্ভ হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে মঙ্গলবার সকাল থেকেই। আগামী পাঁচ দিন ধরে এটি অব্যাহত থাকবে। পবিত্র মক্কা নগরী থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের মিনা উপত্যকায় জমায়েত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। সৌদি গেজেট জানিয়েছে, সোমবার রাতেই মিনায় পৌঁছেছেন ৬০ ভাগ হাজি। বাকি ৪০ ভাগ তাঁবুর নগরী বলে পরিচিত মিনায় পৌঁছাবেন মঙ্গলবার সকালে। সৌদি আরবের জেদ্দা, মদিনা, রিয়াদ, দাম্মাম, আবহা, জাজান ও তায়েফ এই সবগুলো শহরের স্রোত আজ মক্কা আর মিনাতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। চলতি বছর সৌদিতে বিদেশি হাজির সংখ্যা হচ্ছে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ২০৬ জন। এ সংখ্যা গতবছরের চেয়ে কিছু কম।হাজিরা আজ রাতটি মিনাতেই কাটাবেন।

পরদিন অর্থাৎ বুধবার সকালে তারা সূর্যোদয়ের পরপরই সমবেত হবেন মক্কা থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে। আরাফাত ময়দানেই লাখো হাজির কণ্ঠে উচ্চারিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা-শারিকালাকা লাব্বাইক’ ধ্বনি। আরাফাতের ময়দানে শুভ্র সেলাইবিহীন এক কাপড়ে মুসল্লিরা হজের খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন। সারাদিন তারা আরাফাতেই থাকবেন এবং হজের খুৎবা শুনবেন।আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে সন্ধ্যায় মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন মুসল্লিরা। মুজদালিফায় রাতে থাকার সময় পাথর সংগ্রহ করবেন তারা। পরে এসব পাথর মিনার জামারায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ছুড়বেন হাজিরা।মিনায় হাজিদের অবস্থানের জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত তাবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাজিদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশের নিশ্চিয়তা দিতে মক্কা, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় বিলিয়ন বিলিয়ন রিয়াল খরচ করে প্রচুর অবকাঠামো নির্মাণ করেছে সৌদি সরকার।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকেই মক্কার আবহাওয়া প্রচণ্ড উষ্ণ ছিল এবং তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছিল বলে জানিয়েছে আরব নিউজ। দুপুর নাগাদ এই তাপমাত্র ৪৬ ডিগ্রিতে পৌঁছাবে বলে স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে। তবে মিনার অবস্থা কিন্তু ভিন্ন। সোমবার রাতে বৃষ্টি হওয়ায় সেখানে বেশ ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল মনসুর আল-তুর্কি বলেন, চলতি বছর হজ করতে সারাবিশ্বের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ সৌদি আরবে এসেছেন। তাদের নিরাপত্তায় সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ইউনিট, ট্রাফিক পুলিশ এবং জরুরি সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন।আর হাজীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ২৫টি হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে মিনা। মিনায় কেউ যাচ্ছেন গাড়িতে, কেউবা হেঁটে। হজের অংশ হিসেবে তারা মিনা, আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফায় অবস্থান করবেন। ৮ জিলহজ মিনায় সারা দিন এবং ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে গিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এরপর আরাফাত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় রাত যাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন তারা। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন তারা। মিনায় বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, কোরবানি ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ, সাঈ করবেন। তাওয়াফ শেষে মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান ও প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন।

এদিকে হাজীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। তিনি হজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের এই নির্দেশ দিয়েছেন।এদিকে মক্কার পৌরসভার একটি টিম কোরবানীর পশু জবাই ও সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত রয়েছে।মক্কায় বাংলাদেশ হজ অফিস সূত্র জানায়, এ বছর ১ লাখ এক হাজার ৭৫৮ হজযাত্রী মক্কায় পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সরকারের খরচে হজযাত্রীর সংখ্যা ২৬৭।হজ শেষে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বিমানের ফিরতি হজ ফ্লাইট।