ISIS

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ নভেম্বর ২০১৫: জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ফ্রান্সের প্যারিসে হামলার দায় স্বীকার করেছে। অনলাইনে দেওয়া তাদের বিবৃতির বরাত দিয়ে শনিবার এএফপির খবরে এ তথ্য জানানো হয়। সকালে অনলাইনে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আইএস দাবি করে, ‘বিস্ফোরক কোমরবন্ধনী পরে ও অস্ত্র হাতে নিয়ে আমাদের আট ভাই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সফল হামলা করেছে। এর আগে এ হামলার ঘটনায় আইএসকে দায়ী করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তিনি বলেন, স্বাধীন দেশ ফ্রান্সের ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট এ হামলা চালিয়েছে।ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে ফ্রান্সের অভিযান অব্যাহত থাকলে দেশটি শীর্ষ টার্গেটেই থাকবে বলে হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠনটি।শুক্রবারের প্যারিস হামলায় দায় স্বীকার করে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ হুমকি দেয় আইএস। বিবৃতিটি শনিবার (১৪ নভেম্বর) অনলাইনে পোস্ট করা হয়।শুক্রবার দিনগত রাতে থিয়েটার হল বাতাক্লঁ ও স্তেদে দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়ামসহ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ও এর আশেপাশের ছয়টি পৃথক স্থানে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনায় অন্তত ১৫৩ জন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অন্তত ৮০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে।বিবৃতিতে আইএস বলে, আমাদের যোদ্ধারা দেহে বোমাধারণ করে ও মেশিনগান হাতে প্যারিসের হৃদপিণ্ডে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। যদি ফ্রান্স তার নীতি পরিবর্তন না করে, তাহলে টার্গেটের শীর্ষেই থাকে যাবে।এর আগে একই দিন একটি তারিখবিহীন ভিডিও বার্তা পোস্ট করে আইএস। এতেও সিরিয়ায় ফরাসী অভিযান বন্ধ করা না হলে দেশটিতে হামলার হুমকি দেওয়া হয়। ভিডিও বার্তাটি আইএসের মিডিয়া শাখা আল-হায়াত মিডিয়া সেন্টার’ পোস্ট করে।এদিকে, প্যারিস হামলার ঘটনাকে নজিরবিহীন হিসেবে দেখছেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তিনি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন সংবাদ ব্রিফিংয়ের সময়।পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্যারিসে দেড় হাজার অতিরিক্ত সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শহরের বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ফ্রান্সের সীমান্ত।শুক্রবার রাতে প্যারিসের কয়েকটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক ব্যক্তি নিহত এবং কয়েক শ ব্যক্তি আহত হন। এ হামলার পর ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। একই সঙ্গে দেশটির সব সীমান্ত বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি দেড় হাজার সেনাসদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষী ব্যক্তিদের বিচারে দাঁড় করানোর আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের পাশে থাকার কথা বলেছে ন্যাটো।যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতায় ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এক টুইটে বলেন, সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা নিয়ে তাঁরা ফ্রান্সের মানুষের পাশে থাকবেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ‘বিস্মিত, হতবাক’ বলে জানিয়েছেন। রাশিয়া এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সের সরকার ও জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। দেশটির প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি এ কথা বলেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় একই সময়ে কয়েকটি স্থানে বোমা হামলা ও বন্দুকধারীদের গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সন্ত্রাসী হামলার পর পুরো ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ; বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত।হামলার দায়িত্ব স্বীকার করলেও মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসকেই সন্দেহ করা হচিছল। নাম প্রকাশ না করে ওঁলাদ বলেছেন, আমরা জানি, কারা এই সন্ত্রাসী।হামলাকারী পাঁচজনকে নিরস্ত্র করা হয়েছে বলে প্যারিসের পাবলিক প্রসিকিউটর ফ্রাঁসোয়া মলিয়েঁ জানালেও তারা জীবিত, না মৃত, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

হামলার পর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন নগরীটিতে সব বাসিন্দাদের যার যার ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। শহরে দেড় হাজার সৈন্য নামানো হয়েছে, বাতিল হয়েছে পুলিশের ছুটি, হাসপাতালগুলোতে কর্মীদের নিরবচ্ছিন্ন কাজে রাখা হয়েছে। মেট্রো রেলের পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে দূরপাল্লার রেল ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক থাকছে।প্যারিসজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার পর ফরাসি জনগণের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনেতারা।রয়টার্স জানিয়েছে, কয়েকটি স্থানে হামলা হয়। এর মধ্যে প্যারিস সিটি হলে একটি কনসার্টে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ৮৭ জন। আরও চারটি স্থানে বোমা ও গুলিতে মারা যান আরও ৪০ জনের মতো।কনসার্টে গুলিবর্ষণের কাছাকাছি সময় স্টেডিয়াম স্তাদে দে ফ্রান্সের বাইরে বোমাহামলা হয়। ওই সময় স্টেডিয়ামে জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলছিল, খেলা দেখতে গিয়েছিলেন খোদ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।ওই সময়ই প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে একটি রেস্তোরাঁ ও বারের সামনে গুলিবর্ষণ হয়, তাতে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে রয়টার্স। আরও কয়েকটি স্থানে গুলিবর্ষণের খবর এলেও তার বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে অধিকাংশ গণমাধ্যম বলছিল, অন্তত ১৫৩ জন নিহত হয়েছেন।