court_175962

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ নভেম্বর ২০১৫: ডাকাতির মালামাল ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও পরকীয়ার জেরে ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক পরিবারের চারজনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চার আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। ফাঁসির সাজা পাওয়া চার আসামি হলেন- সুমন, জাকারিয়া হোসেন জনি, সুমন ওরফে সিএনজি সুমন ও মো. নাসিরউদ্দিন।

এছাড়া সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় মামলার আরেক আসামি আফসানা আক্তারকে খালাস দিয়েছেন আদালত। তারা সবাই একটি ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। মুন্সীগঞ্জ এবং ঢাকার দোহার নবাবগঞ্জে ডাকতির বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত ছিলেন তারা।আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী সুলতান নাসের বলেন, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি খন্দকার আব্দুল মান্নান বলেন, মাত্র ২৪ কার্য দিবসে এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়েছে যা ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত।

রায়ে বিচারক বলেন, মামলার বিচারের সময় আমি কাঠগড়ায় দাঁড়ানো কোনো আসামির মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখিনি। তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও ছিল না।নিষ্ঠুর কায়দায়, ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিত ও নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।তবে অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় ডাকু সুমনের স্ত্রী আফসানা আক্তারকে অভিযোগ থেকে খালাস দেন বিচারক।রায়ের পর দণ্ডিত নাসির উদ্দিন কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাকিদের বিমর্ষ দেখা যায়।

এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কদমপুর শাকিন এলাকায় শামসুদ্দিন মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির মালামাল ভাগ বাটোয়ারা ও পরকীয়ার জের ধরে সাজু, তার স্ত্রী রঞ্জু, ছেলে ইমরান, মেয়ে সানজিদাকে ঘাড় ভেঙে হত্যা করা হয়। ছয়তলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে হতভাগা চারজনের হাত-পা চোখ বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়।এ ঘটনায় সাজুর ভাই বছিরউদ্দিন গত ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর একটি হত্যা মামলা করেন। পরে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২০১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কেরানীগঞ্জ থানার এসআই মনিরুজ্জমান আসামি সুমন ডালি ওরফে ডাকু সুমন, জাকারিয়া হোসেন, সিএনজি সুমন, নাজির উদ্দিন ও আফসানার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।এসব আসামিরা আদালতে তারা তাদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দীও দিয়েছেন। গত ৪ জুন এ মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।মামলায় ২৮ জন সাক্ষির মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সাজু এবং মামলার আসামিরা একই ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। আসামি সুমন ঢালী ও জনি তাদের স্ত্রীর সঙ্গে সাজুর পরকীয়া সম্পর্ক ছিল বলে সন্দেহ করতেন। এছাড়া সুমনের মোটর সাইকেল এবং তার স্ত্রীর হাতের রুলি ‘চুরি করায়’ সাজুর প্রতি তাদের ক্ষোভ ছিল।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, আসামিরা অতিথি সেজে সেদিন সাজুর বাসায় যায় এবং সেখানেই রাত্রিযাপন করে। রাতের কোনো এক সময় তারা ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে সাজু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে।ঘটনার দুই মাসের মধ্যে আসামির মধ্যে পুলিশ পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই আদালতে জবানবন্দিও দেন।চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ৬ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার বিচার।বিচার চলাকালে বাদীপক্ষে ২৪ জনের সাক্ষ্য শোনেন বিচারক। যুক্তিতর্ক শেষে গত ১৬ নভেম্বর বিচারক রায়ের দিন ঠিক করে দেন। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রায় হল।