nizami-3

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের রায় ৬ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে।দুই পক্ষের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার রায়ের ওই দিন ধার্য করে। বেঞ্চের অন্য তিন সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে তার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষের পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনে শেষ হয় নিজামীর আপিল শুনানি।রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম। আদালতে নিজামীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান।এর আগে সোমবার ৭ ডিসেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। গত ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর নিজামীর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।মতিউর রহমান নিজামীকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে খালাস দাবি করেন তার আইনজীবীরা। বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে মুজাহিদের ফাঁসি হয়েছে।

একই অপরাধে রায়ের ধারাবাহিকতায় মতিউর রহমান নিজামীরও ফাঁসি চান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।অপরদিকে যে সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে দেওয়া হয়েছে, তাতে মতিউর রহমান নিজামী খালাস পাবেন বলে আশা করেছেন তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিল মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্যের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন দুই পক্ষ। সোমবার নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখার পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আর মঙ্গলবার এর জবাবে আসামিপক্ষে যুক্তিখণ্ডন করেন নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এর মধ্য দিয়ে ১১তম কার্যদিবসে আপিল মামলাটির শুনানি শেষ হওয়ায় রায়ের দিন ধার্য করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি (নিজামী) আলবদরের উদ্দেশ্যে লেখা লিখেছেন আলবদরদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য। আলবদরদের আরো কাজে নিয়োজিত হওয়ার জন্য। তাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এ লেখার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে আলবদরদের হাতে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা জীবন হারিয়েছেন। কাজেই আলবদরদের ব্যাপারে তার যে বক্তব্য সেটা পিনপয়েন্টে।সুতরাং, এ থেকে নিজামীকে অব্যাহতি দেওয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।মাহবুবে আলম বলেন, আলবদর বাহিনী যখন গঠিত হয়, তখন তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। আর ছাত্রসংঘের সদস্যের সমন্বয়ে আলবদর গঠিত হয়।তাদের (আসামি) পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তিনি অক্টোবর থেকে আর ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন না।

সুতরাং, তার কোনো নেতৃত্ব দেওয়ার আর সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা বলেছি, তিনি নভেম্বর যে লেখা লিখেছেন তাতে দেখা যায়, আলবদরদের ওপর তার কন্ট্রোল ছিলো বলেও মন্তব্য অ্যাটর্নি জেনারেলের।
তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার বিষয়ে মতিউর রহমান নিজামী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তথা মৃত্যুদণ্ড যদি না পান তাহলে আমরা হতাশ হবো।আপিলে ফাঁসির আবেদন করেছেন কি-না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ।বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে মুজাহিদের ফাঁসি হয়েছে, একই অপরাধে নিজামীর বিষয়ে কি আশা করছেন-এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, মুজাহিদের মামলার রায় আদালতে পেশ করেছি। ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতৃত্বে নিজামী-মুজাহিদ ও গোলাম আযমের নাম ছিলো। যেহেতু একই অপরাধে মুজাহিদের ফাঁসি হয়েছিলো।

তাই রায়ের একই রকম ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে একই অপরাধে নিজামীরও ফাঁসির দাবি করেছি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্ত তাদের দাবি, নিজামী উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু আইনে আছে, তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে এসব মামলায় দণ্ড দেওয়া যাবে।অন্যদিকে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তৎকালীন সময়ে নিজামীর কিছু বক্তব্য তুলে ধরে প্রসিকিউশন বলতে চেয়েছেন তিনি ইনস্টিগেশন(উসকানি) করেছেন। সে কারণে সে দোষী। আমরা বলেছি, সংগ্রাম পত্রিকায় যতোগুলো বক্তব্য এসেছে সবগুলো ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা করেছেন। ট্রাইব্যুনাল ওইসব অভিযোগে তাকে খালাস দিয়েছেন।

খন্দকার মাহবুব বলেন, আদালত বলেছেন, অ্যাবেটমেন্টের কথা। আমি বলেছি, অ্যাবেটমেন্টের ঘটনা স্পেসিফিক করতে হবে। কোন অপরাধের বিষয়ে উস্কানি দিয়েছেন। যে ঘটনাগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলো পাকিস্তানি আর্মিরা করেছে। প্রসিকিউশন থেকে সাক্ষ্য এসেছিলো-নিজামী সঙ্গে ছিলেন। প্রধান আসামি হচ্ছে পাকিস্তানি আর্মি। এখানে প্রধান আসামির বিচার হচ্ছে না। তখন অ্যাবেটর হিসেবে তার বিচার কতোটুকু সমীচীন? এবং সেখানে আমাদের অ্যাবিলিটি অর্থাৎ পাকিস্তানি আর্মির সঙ্গে আমাদের কন্ট্রোল কতোটুকু বলেও প্রশ্ন করেন খন্দকার মাহবুব। শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলীম চৌধুরী ও ডা. আজহারুল হকের বিষয়ে তিনি বলেন, কথিত মতে তাদেরকে আলবদররা ধরে নিয়ে গিয়েছিলো।

আমরা সেখানে বলেছি, ডা. আলীমের স্ত্রী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, আজহারের পক্ষেও সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডা. আলীমের স্ত্রী একটি বই লিখেছিলেন। আজকে আদালতে এসে তিনি বলেছেন, নিজামী সাহেবের নির্দেশে আলবদররা ডা. আলীমকে তুলে নিয়ে গেছে। তার বইয়ে এ ধরনের ঘটনার উল্লেখ ছিলো না। দুইটা বই। কোনোটাতে এ কথা নেই। একইভাবে আজহারুলের স্ত্রী শাহরিয়ার কবিরের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানেও নিজামীর সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি। যে সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে, আমরা আশা করি, আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। তিনি খালাস পাবেন বলেও দাবি করেন খন্দকার মাহবুব।তিনি আরও বলেন, যদি ধরে নেওয়া হয়, তিনি সহযোগী ছিলেন, তাহলেও তাকে যেন লঘুদণ্ড দেওয়া হয়। আমাদের প্রত্যাশা’ তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।

গত ৩০ নভেম্বর থেকে ০২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন কার্যদিবসে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান। সে সময়ও আসামিপক্ষ বলেন, অপরাধ সংঘটিত হলেও নিজামী সে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন। এরপরও কোনো অভিযোগে যদি আদালত দোষী সাব্যস্ত করেন, তাহলে তাকে যেন চরম দণ্ড দেওয়া না হয়, সে বিষয়ে আদালতে আরজি জানান তারা। এ আপিল মামলার শুনানি শুরু হয় গত ০৯ সেপ্টেম্বর থেকে। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালের রায়সহ মামলার নথিপত্র উপস্থাপন শেষ করেন আসামিপক্ষ।

নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে গতবছর ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।রায়ে বলা হয়, শত শত নিরস্ত্র মানুষ, অসংখ্য বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী হত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত এই চার অপরাধ ছিল একাত্তরের বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। বুদ্ধিজীবী হত্যা ও নিরস্ত্র মানুষকে গণহত্যা ছিল ভয়ানক।এই চার অভিযোগ ছাড়াও অপহরণ, হত্যার চার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। প্রসিকিউশনের আনা ১৬ অভিযোগের মধ্যে বাকি আটটিতে খালাস পান তিনি।জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামী একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আল বদর বাহিনীর প্রধান।স্বাধীনতাকামী বাঙলির ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে আসে।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন নিজামী। ছয় হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ নিজামীর করা আপিলে ১৬৮টি যুক্তি তুলে ধরে সাজার আদেশ বাতিল করে খালাস চাওয়া হয়। সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ।এই আপিলের ওপর চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শুনানি শুরু হয়। মঙ্গলবার দশম দিনের শুনানির শুরুতে নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলম তার জবাব দেন।২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি ষষ্ঠ মামলা, যা আপিল আদালতে রায়ের পর্যায়ে এল।এর আগে পাঁচটি রায়ের মধ্যে চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।আপিল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত না হওয়ায় রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি।এছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

৭২ বছর বয়সী নিজামী বিগত চার দলীয় জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। তার আগে ২০০১-০৩ সময়ে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী। এর আগে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাতেও তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার করার পর একই বছরের ২ অগাস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।এরপর ২০১৩ সালের ২৮ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে জামায়াত আমিরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়।তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খানসহ প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ২৬ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। নিজামীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তার ছেলে মো. নাজিবুর রহমানসহ মোট চারজন।বিচার শেষে গতবছর ২৯ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল যে রায় দেয় তাতে প্রসিকিউশনের আনা ১৬ অভিযোগের মধ্যে আটটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।এই আট অভিযোগের মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর ঘটনায় নিজামীর ফাঁসির রায় হয়।এ

সব ঘটনার মধ্যে সাঁথিয়ার বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা, ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ; করমজা গ্রামে নয়জনকে হত্যা, একজনকে ধর্ষণ, বাড়িঘরে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ; ধুলাউড়ি গ্রামে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।আর অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে জামায়াত আমিরকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।এসব ঘটনার মধ্যে পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে অপহরণ করে হত্যা; মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প খুলে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতা; পাবনার বৃশালিখা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সেলিমের বাবা সোহরাব আলীকে স্ত্রী-সন্তানদের সামনে হত্যা; ঢাকার নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলে আটক মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন বিচ্ছু জালাল, বদি, রুমি (শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে), জুয়েল ও আজাদকে হত্যার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাকি আট অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে না পারায় এসব অভিযোগ থেকে নিজামীকে খালাস দেয় ট্রাইব্যুনাল।