হাসানুল-হক-ইনু

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬:  তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা মামলার ব্যাপারে পুনঃতদন্তের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। সাংবাদিক মানিক সাহা ও সাগর-রুনি হত্যাকান্ডসহ সাংবাদিক হত্যার সকল মামলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে।তথ্যমন্ত্রী শুক্রবার দুপুরে সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।বিশিষ্ট সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক সাহার ১২তম হত্যাবার্ষিকী’ উপলক্ষে এ স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।‘মানিক সাহা হত্যার বিচারপ্রার্থী সাংবাদিক সমাজ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন এ সভার আয়োজন করে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, আপনারা মানিক সাহা হত্যা মামলার আবার তদন্ত চাচ্ছেন, এর অর্থ হলো মামলাটি যথাযথভাবে সাজানো হয়নি। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করবো, যাতে আবার তদন্তের বিষয়টি তারা বিবেচনা করেন।তথ্যমন্ত্রী এ স্মরণ সভায় বক্তৃতাকালে সাংবাদিক মানিক সাহা, সাগর-রুনিসহ বিভিন্ন সময়ে নিহত সাংবাদিকদের মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ার কথাও উল্লেখ করেন।

স্যাটেলাইট টেলিভশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক রাহুল রাহার সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট’র (পিআইবি) মহাপরিচালক সাংবাদিক শাহ আলমগীর, ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ ও দৈনিক কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্র বক্তৃতা করেন।তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বিঘেœ সাংবাদিকতা করার স্বার্থে সরকার জঙ্গীবাদমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে চায়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদল হয়েছে, কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে সাম্প্রদায়িকতার জঞ্জালে দাঁড়িয়ে সকলকে কাজ করতে হচ্ছে।মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা এসব হত্যাকান্ডের বিচার চাই। রাষ্ট্রকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলেই মৌলবাদী, জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাদের এ দেশ থেকে দূর করতে পারবো।তিনি বলেন, মানিককে হত্যা করা হয়েছিল, সবাইকে সাবধান করতে এবং এটা বোঝাতে যে, বাড়াবাড়ি করলে তোমাদেরও এ অবস্থা করা হবে।বামপন্থিদের ওপরই এ ধরনের আক্রমণ প্রথম ও বেশি হয়েছিল বলে বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন সিপিবি সভাপতি। সেলিম বলেন, ভুলে যাওয়ার খেসারত সবাইকে দিতে হয়। ইতিহাস আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়।

কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ অভিযোগ করে বলেন, সাংবাদিকতার আদর্শিক কারণেই মানিক সাহাকে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, দেখা গেছে, গত ১০/১৫ বছরে যেসব সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই সীমান্ত এলাকার।আবুল মকসুদ বলেন, মানিক সাহা যদি জমিজমা, টাকা-পয়সা নেওয়ার কারণে নিহত হতেন, তাহলে কিছুই বলার ছিল না। কিন্তু তিনি নিহত হয়েছেন আদর্শের কারণে। মানিক লড়াই করেছেন- চিংড়ির ঘের নিয়ে, মৌলবাদিতার প্রসঙ্গে ও সুন্দরবন রক্ষায়। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র তার পাশে ছিল না। বিচার-বিবেচনা করে দেখেছি, মানিকের অন্যতম হত্যাকারী রাষ্ট্রব্যবস্থা।

সৈয়দ আবুল মকসুদ পেশাগত কারণে গত ২০/২৫ বছরে নিহত সাংবাদিকদের তালিকা করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য তথ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। ৪-৫ জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে এ কাজ করার পরামর্শও দেন তিনি।

আবুল মকসুদ বলেন, রাষ্ট্রকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। কেউ-কেউ হত্যাকান্ড না ঘটালেও হত্যাকারীকে বাঁচাতে তৎপর ছিল। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে ।পিআইবি’র মহাপরিচালক শাহ আলমগীর বলেন, সাংবাদিকতার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতেই সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার হতে হবে। মানিক সাহার মতো সাংবাদিকদের প্রয়োজন যুগে যুগে। অথচ হত্যার ১২ বছরেও বিচার না হওয়ায় জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে,এতে সাংবাদিকদের মনেও হতাশা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, কেবলমাত্র রাষ্ট্রই পারে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।