26-01-16-PM_Police Week 2016_ Razarbag Police Line-77

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত দাঁড়াতে হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তাদের জনগণের সেবক হতে হবে। তাদেরকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত দাঁড়াতে হবে, যাতে মানুষ তাদের ওপর নির্ভর করতে পারে।

তিনি মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬ উদ্বোধনকালে এ নির্দেশ দিয়ে বলেন, পুলিশ সদস্যদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথাযথভাবে রক্ষার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আমি আশা করি, আমাদের লক্ষ্য অর্জন এবং ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে আপনারা অবদান রাখবেন।এর আগে প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জিপে চড়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের দৃষ্টিনন্দন কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। তিনি অভিবাদনও গ্রহণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক ও অতিরিক্ত আইজিপি প্যারেড কমিটির প্রেসিডেন্ট মোখলেসুর রহমান তাঁকে স্বাগত জানান। সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (এসপি) শামসুন্নাহার প্যারেড পরিচালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের কর্মক্ষেত্র ও কর্মব্যপ্তি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুরি-ডাকাতি, হত্যা-রাহাজানি বন্ধ নয়- সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মাদক পাচার, স্বর্ণ চোরাচালান ও নারী-শিশু পাচার রোধে পুলিশকে কাজ করতে হয়। এ কারণে আমরা পুলিশ বাহিনীকে উন্নত প্রশিক্ষণ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রয়োগে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।পুলিশ বাহিনীকে দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক পুলিশ সদস্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ দমন, যুদ্ধাপরাধের বিচার, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন, তিন সিটি কর্পোরেশন ও দেশব্যাপী পৌরসভা নির্বাচনসহ সকল জাতীয় প্রয়োজনে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে।শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সহায়তায় সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৬ জন বীর সদস্য জীবন দিয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জন হ”েছন পুলিশ সদস্য। আমি পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শহীদ সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পবিত্র সংবিধান, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষার জন্য এই আত্মত্যাগ এক বিরল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের এ অবদান গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, সহিংসতা ও পেট্রোল বোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত ও ১১৮০ জন আহত হন। তাদের নিষ্ঠুরতা-নির্মমতার শিকার হয়ে নিরীহ বাস ড্রাইভার, বাস-টেম্পু-সিএনজি যাত্রী, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ-বিজিবি-আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্য, এমনকি স্কুলের শিক্ষক এবং শিশুও নিহত হয়েছে। এটা অকল্পিনীয় যে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে।বিগত বছরগুলোতে বিএনপি-জামায়াত-শিবির চক্রের সন্ত্রাস ও সহিংসতার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের অনৈতিক ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের আবারো ধন্যবাদ জানান।পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের বর্ণনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জাঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশে জনবল বৃদ্ধিতে তাঁর সরকার সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের জনবল দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে।তিনি বলেন, গত ৭ বছরে আমরা পুলিশের অর্গানোগ্রামে ৭৩৯ ক্যাডার পোস্টসহ ৩২,০৩১টি পদ সৃষ্টি করেছি। এই বৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশের জনসংখ্যার হারের বিবেচনায় এই পুলিশ সদস্য সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়, আমরা আরো ৫০ হাজার পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,২৭৭টি ক্যাডার পোস্টসহ ১৩,৫৫৪টি পদে নিয়োগ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই অবশিষ্ট জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হবে।তিনি বলেন, আরো জনবল নিয়োগের পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহের বিষয় সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ,পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), টুরিস্ট পুলিশ,রিভার পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি এন্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন গঠন করেছে। পুলিশ এসব উদ্যোগের ফল পেতে শুরু করেছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর সরকার জাতির পিতার দেয়া আইজিপি র‌্যাঙ্ক ব্যাজ’ পুনরায় চালু করেছে এবং সাব-ইন্সপেক্টর/সার্জেন্ট পদকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ও ইন্সপেক্টর পদকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করেছে।কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম আরো জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই পুলিশ ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশের কার্যক্রম আরো গতি সঞ্চারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনবল বৃদ্ধি ও বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যানবাহন এবং অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ চলমান থাকবে।সকল ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ধাপে ধাপে প্রতিটি খাত পুনর্গঠন করেছে এবং আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটিয়েছে।তিনি বলেন, সরকারের প্রায়োগিক বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে দেশে জনগণের মাখাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৩১৪ ডলার এবং দারিদ্য হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমে ২২.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।তিনি বলেন, আমরা সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ১২৩ শতাংশ বাড়িয়েছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ এবং উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি সদস্য এই সাফল্যের সমঅংশীদার।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ থাকবো না… আমরা ২০২১ সাল নাগাদ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবো এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, এই এ্যাওয়ার্ড ভবিষ্যতে তাদের কাজে আরো উৎসাহিত করবে।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গত এক বছরে পুলিশ সদস্যদের সাহসিকতা ও তাদের সার্ভিসের জন্য ৪টি ক্যাটাগরিতে ১০২ জন পুলিশ সদস্যের মাঝে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) হস্তান্তর করেন। ১৯ জন সদস্য বিপিএম এ্যাওয়ার্ড এবং ৪০ জন পিপিএম এ্যাওয়ার্ড এবং ২৩ জন বিপিএম সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড ও অপর ৪০ জন পিপিএম সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।