27-01-16-PM_Parliament-2

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬: আওয়ামী লীগ সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে দেশের উন্নয়নের ৯০ শতাংশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। দেশের উন্নয়নের ৯০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক ভিত্তিক আর্থিক তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ। বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।বিগত মেয়াদ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন গৃহীত কর্মসূচিগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত সাত অর্থ-বছরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় মোট দেশজ আয় প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং সামাজিক খাতের দারিদ্র্য নিরসন।এছাড়াও রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু নিরাপত্তায় অগ্রগতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে আমাদের সাফল্য অভূতপূর্ব। সংকটের জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য সেলিনা বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।তিনি বলেন, উন্নয়নের সাথে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীকে সমাজের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করণের একটি ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার সর্বপ্রথম নারী স্পিকার নিয়োগ করেছে। জাতীয় সংসদে ২০ জন সরাসরি নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাস রিপোর্ট অনুযায়ী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ৭ম স্থানে। উপজেলা পর্যায়ে ১টি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে প্রশাসনে ব্যাপকহারে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিচারপতি, সচিব, উপাচার্য, ডেপুটি গভর্নর, রাষ্ট্রদূত, সেনাবাহিনী, নৌবাহিন, বিমান বাহিনী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মানবাধিকার কমিশনসহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীরা কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র, বিধবা এবং দুস্থ নারীদেরকে মাসিক ভাতা আগের তুলনায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে হতদরিদ্র ৭ লাখ ৫০ হাজার মহিলাকে মাসিক ৩০ কেজি চাল প্রদান করার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।তিনি বলেন, এছাড়া বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, নারীর দারিদ্র্যতা হ্রাস, সামাজিক নিরাপত্তা এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির জন্য বয়স্ক ভাতা প্রদান, ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান, স্বকর্মসংস্থানমূলক সহায়তা প্রদানের জন্য এককালীন আর্থিক সাহায্য প্রদান এবং দুস্থ মহিলাদের আইনগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে।তিনি বলেন, শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব প্রশিক্ষণ একাডেমি জিরানী সাভার পুনরায় চালু করা হয়েছে। এখানে মহিলাদেরকে সেলাই, কম্পিউটার ও বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এছাড়া নারীর কর্মসংস্থানে প্রশিক্ষণ প্রদান, নারী স্বাস্থ্য নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণ, সামাজিক ক্ষমতায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে আয় বৈষম্য কমে আসছে।প্রধানমন্ত্রী অ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য দিদারুল আলমের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।তিনি বলেন, সরকার কৃষি জমি সংরক্ষণ ও পরিকল্পিত গ্রামীণ উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছে। কৃষি জমির যাতে অপচয় না হয়, এদিকে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া আবাসিক সমস্যা সমাধানে ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে গ্রামীন অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চালনের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।শেখ হাসিনা বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মডেল ক্ষুদ্র ঋণের পরিবর্তে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সরকারের অগ্রাধিকারমূলক এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলায় ৪৮৫টি উপজেলার ৪৫ হাজার ৩টি ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ডে ৪০ হাজার ৫২৭টি গ্রামের প্রায় ২২ লাখ দরিদ্র পরিবার তথা ১ কোটিরও উপর দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপকৃত হচ্ছে।তিনি বলেন, এ সব দরিদ্র উপকারভোগীদের বর্তমান মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা।

উপকারভোগীদের নিজস্ব সঞ্চয় ৮৮৬ কোটি টাকা, সরকারি অনুদান ১ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা এবং এর সাথে ব্যাংক সুদ ও সার্ভিস চার্জ যুক্ত হয়ে মোট মূলধন ২ হাজার ৬৬১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সঞ্চিত অর্থ দরিদ্র জনগণের সমিতির ব্যাংক হিসেবে গচ্ছিত রয়েছে। যার মধ্য থেকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সদস্যরা সমিতির তহবিল থেকে প্রায় ২ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ২০ লাখ ৭৬ হাজার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়বর্ধক খামার গড়ে তুলেছেন। এ বিনিয়োগ গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক বৈপ্লবিক ধারার সূচনা করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্পভুক্ত প্রতিটি পরিবারের বাৎসরিক গড় আয় বেড়েছে ১০ হাজার ৯২১ টাকা। প্রকল্প এলাকায় নিম্ন আয়ের পরিবারের সংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগ থেকে কমে বর্তমানে শতকরা ৩ ভাগে দাঁড়িয়েছে।