image_76639_0

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬: একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িত দল বা সংগঠনের বিচারের বিধান যুক্ত করে ফেব্র“য়ারিতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের তালিকা নিয়ে বিতর্কের জেরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মুক্তিযুদ্ধের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোথায় ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাউকে ফুটবল খেলতে দিতে পারি না।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ের আইন মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন প্রণয়নসহ ১২ দফা দাবিতে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র নেতারা।ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আইন প্রনয়ন প্রসঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী।আইনমন্ত্রী বলেন, আজকেও তাদের একজন লিস্ট চেয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে আমি বলবো- তারা যখন লিস্ট তৈরি করেননি। আর কোথাও কোনোদিন লিস্ট তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তারা বললে সেটাই আমরা করবো, এত সময় আমাদের নেই। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন তৈরির প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।

এই আইনে সর্বোচ্চ কত শাস্তি হবে তা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, সেটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। পৃথিবীর অনেক দেশে এমন আইন আছে, বিভিন্ন শাস্তির বিধান আছে। কতটুকু রাখা যায় তা আলাপ-আলোচনা করে রাখা যাবে। আমি আজকেই এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না।মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তালিকা নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উত্থাপিত বিতর্ক প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, শহীদদের তালিকা চাচ্ছেন খালেদা জিয়া, ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি কতজনের তালিকা তৈরি করেছিলেন? তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন তা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন আছে!আইনমন্ত্রী বলেন, আমি আগে বলেছিলাম, মার্চ মাসনাগাদ হবে। সেই ক্ষেত্রে এটা এগিয়ে এসেছে। এখন বলছি ফেব্র“য়ারি।জামায়াত নিষিদ্ধের আইন ফেব্র“য়ারির মধ্যে হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বলা হলে আদালতের এখতিয়ারে হাত দেওয়া হয়। যেটা করা হচ্ছে, সংগঠনের বিচার এবং শাস্তির বিধান রেখে একটা আইন করা হচ্ছে। সেটা আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন করে করা হচ্ছে। জামায়াত নিষিদ্ধ হবে কি-না, সেটা আদালত বলবে।সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিষয়টি শাস্তির বিধান হিসাবে আসবে বলেও জানান তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, অর্থমন্ত্রী এই ব্যাপারে কথা বলেছেন। আমি এই ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলব। বাজেয়াপ্তের বিধান রেখেই আইন করতে হবে।এসময় ইউরোপের হলোকাস্ট ডিনায়াল অ্যাক্টের আদলে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা ও ইতিহাস বিকৃতি রোধে আইন প্রণয়নের বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা। আনিসুল হক বলেন, এটা খসড়াটা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। আমার মনে হয়, এই রকম একটা আইন প্রয়োজন হয়ে গেছে। আমার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ফুটবল খেলা আমরা খেলতে দিতে পারি না।

আজকেও আপনারা দেখবেন বিএনপির এক নেতা বলেছে, ওনাদেরকে লিস্ট দিতে হবে, কতজন শহীদ হয়েছেন। ওনারাও ক্ষমতা ছিলেন। ওনারা কেন তৈরি করেননি?। কোথাও এই রকম লিস্ট তৈরি করা সম্ভব হয়নি।আজগুবি কথাবার্তা শোনার সময় নাই। সেই কারণেই এই আইনটার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি।এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকগুলো দেশে এই ধরনের আইন আছে, সেখানে কতটুকু শাস্তির বিধান রাখা আছে, সেটার কতটুকু যুক্তি আছে, তার কতটুকু রাখা হবে, সেটা পরে ঠিক হবে। আজকেই আমি এই ব্যাপারে বলতে চাই না। সাক্ষী সুরক্ষা আইন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাক্ষী সুরক্ষা আইনের ইনিশিয়েটিং মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র। সেখানে আছে এটা। আমার সঙ্গে একবার আলাপ হয়েছে। সেই আইনটার মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় আমাদের প্রশ্ন আছে। এই বছরের জুন মাসের মধ্যে আমার মনে হয়, সেটা সংসদ পর‌্যন্ত পৌছানো সম্ভব হবে।একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে সাংবাদিক ও লেখক শাহরিয়ার কবির, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসির মানুমসহ অন্যান্য নেতারা আইনমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরেন।