মীর কাসেমের আপিল শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির আদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর মামলার আপিলের শুনানি আপিল বিভাগে শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চে এই শুনানি শুরু হয়। আজকের শুনানি শেষে বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেনই হায়দার, বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।এর আগে মীর কাসেম আলীর আইনজীবী এস এম শাহজাহান এই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পেপার বুক থেকে পড়ে শোনান। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ আটজনকে হত্যার দায়ে তাঁকে সর্বোচ্চ সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন মীর কাসেম।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াত নেতা মীর কাসেম ছিলেন কুখ্যাত গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান। মীর কাসেম ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রসংঘের (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন) সভাপতি হন। একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম শহর শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। ৭ নভেম্বর তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করলে মীর কাসেম এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। ১৯৮০ সালে তিনি রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার এ দেশীয় পরিচালক হন। ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের এই শূরা সদস্য দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান।মীর কাসেমের নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লা এলাকার ডালিম হোটেলে স্থাপিত হয় আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প ও নির্যাতনকেন্দ্র। একাত্তরে চট্টগ্রামে এই ডালিম হোটেলকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতো সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ, যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন মীর কাসেম। এর ফলে ডালিম হোটেল মানুষের কাছে পরিচিতি পায় হত্যাপুরী হিসেবে। আর নৃশংসতার জন্য মীর কাসেমের পরিচয় হয় বাঙালি খান।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলায় অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সপ্তম মামলা এটি, যার ওপর সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি শুরু হলো।২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে হত্যায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাসেমের ফাঁসির রায় আসে।

ওই বছর ৩০ নভেম্বর আপিল করেন কাসেম। দেড়শ পৃষ্ঠার মূল আবেদন ও এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ করা আপিলে মীর কাসেম সাজা বাতিল চেয়ে খালাস চান।মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার হিসাবে মীর কাসেম চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হন।পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান জামায়াতকে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করলে মীর কাসেম তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন।এরপর রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অসাধারণ ধূর্ততার স্বাক্ষর রেখে অত্যন্ত দ্রুততায় নিজের ও দলের উন্নতি ঘটান কাসেম, পরিণত হন জামায়াতের আর্থিক মেরুদণ্ডে।

মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে যে ভবনটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হতো, সেই ডালিম হোটেলকে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে ডেথ ফ্যাক্টরি’।একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতাকে। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়।