UK suspends direct air freight from Dhaka

বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের কার্গো বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। ঢাকায় হজরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্র“টি থাকার অজুহাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে বাংলাদেশ বিমানে কার্গো পরিবহনে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। এতে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে তৈরি পোশাক, সবজিসহ রফতানিমুখী বেশ কিছু পণ্য। অপ্রতুল নিরাপত্তা ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের অজুহাতে অস্ট্রেলিয়ার পর এবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।মঙ্গলবার রাতে তাদের ওয়েবসাইটে এ নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয় ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যের সরাসরি ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। এছাড়াও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়, বাংলাদেশ সরকার নিরাপত্তার বিষয়ে আরো যত্মবান হবে।বুধবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া পর্যন্ত কার্গো বিমান চলাচল স্থগিত থাকবে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিশ্বমানের না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।ভিন্ন রুট ব্যবহার করে যে সব বিমান সংস্থা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে কার্গো পরিবহন করছে তারা তা শর্তসাপেক্ষে করতে পারবে। তবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের আগে কার্গোবাহী এসব বিমান পুনঃপরীক্ষা করা হবে। কার্গো পরিবহনে নিয়োজিত বিমান সংস্থা কিংবা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বিস্তারিত তথ্যেও জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের ট্রান্সপোর্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সংবাদে আরো বলা হয়েছে, বেসামরিক বিমান চলাচল ও বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাজ্য সরকার।উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে মিশরের আকাশসীমায় বোমা বিস্ফোরণে রাশিয়ার একটি যাত্রীবাহি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে ১১ বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ত্রুটি চিহ্নিত হয়। এগুলোর মধ্যে ৮ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ত্রুটি ব্যপকভাবে আলোচনায় আসে। এসব বিমানবন্দরে বাড়ানো নজরদারিও। বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা ত্রুটি থাকা বিমানবন্দরের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০-এ।

এদিকে কার্গো পরিবহনে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও ঢাকা-লন্ডন সরাসরি যাত্রী পরিবহনে সন্তোষ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য। এদিকে বিমানের কার্গো কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় গত তিন মাসেও অস্ট্রেলিয়া তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। গত ডিসেম্বর থেকে দেশটি বিমানে কার্গো নিচ্ছে না। এতে প্রতি দিন গড়ে অর্ধশত কোটি টাকার ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যে কার্গো পরিবহন বন্ধ হলে মাসে দুই হাজার কোটি টাকা হাতছাড়া হওয়ার আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা।জানা গেছে, যুক্তরাজ্য এভিয়েশন গোয়েন্দাদল তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে বিমানে ঢাকা-লন্ডন সরাসরি যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও কার্গো পণ্য পরিবহনে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, বিমানের কার্গো রফতানি টার্মিনালটি বহিরাগত জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ ধরনের জনবল মারাÍক ঝুঁকিপূর্ণ। রফতানি টার্মিনালে কর্মরত ৩০০ জনবলের মধ্যে মাত্র ৬০ জন বিমানের নিজস্ব। বাকিরা বিভিন্ন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বহিরাগত। এদের মধ্যে চোরাচালানসহ বিভিন্ন মামলার আসামিও আছে। নামমাত্র স্ক্যানের পর এরা টার্মিনালে প্রবেশ করছে। একইভাবে স্ক্যান ছাড়াই অবাধে পণ্যসামগ্রীও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে উঠানো হচ্ছে। এ অবস্থায় কার্গো পণ্যের সঙ্গে বোমা বা অন্য কোনো এক্সপ্লোসিভ বিমানের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়ার মতো আশংকার কথাও বলা হয়েছে যুক্তরাজ্যের রিপোর্টে। নিরাপত্তা শিথিলতায় কার্গো ফ্রেটগুলো যেসব দেশের বিমানবন্দরে যাচ্ছে সেখানে বড় ধরনের নাশকতার আশংকাও আছে। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এ অবস্থার উন্নতি না হলে তারা ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে কার্গো পরিবহন বন্ধ করে দেবে।কার্গো শাখা সূত্রে জানা গেছে, শর্তসাপেক্ষে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে সরাসরি কার্গো রফতানি করতে প্রয়োজনীয় সনদ ‘এয়ার কার্গো সিকিউরিটি-৩ (এসিসি)’ ও রেগুলেশন এজেন্ট-৩ (আরএ)’ সনদ নবায়ন করেছে। গত জানুয়ারিতে তিন মাসের জন্য বিমাকে এই সনদ দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কার্গো কমপ্লেক্সের জনবল কাঠামো ঠিক না হলে মার্চের পর তারা আর এই সনদ নবায়ন করবে না। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে সব ধরনের রফতানি কার্যক্রম।

বিমানের একটি সূত্র জানায়, নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে শাহজালাল বিমানবন্দরের জন্য ২৫০ সদস্যের জনবল নিয়োগ দিলেও সরকার কার্গো (রফতানি) শাখায় নিজস্ব জনবল নিয়োগ দেয়নি। খোদ বিমান বোর্ড জনবল নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে যুক্তরাজ্যের সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও বিমান কর্তৃপক্ষ কার্গো রফতানি শাখায় জনবল নিয়োগ দিতে পারছে না। মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এপ্রিল থেকে কার্গো পরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে।জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বরের পর বিমানের কার্গো ভিলেজ থেকে শুধু মরদেহ ও ২ গ্রাম ওজনের কূটনৈতিক ডকুমেন্ট ছাড়া অন্য কোনো পণ্য অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে না। এ কারণে কার্গো রফতানি টার্মিনালে অস্ট্রেলিয়াগামী রফতানিযোগ্য পণ্যের স্তূপ জমে গেছে। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা অন্য পথে তাদের পণ্য পাঠানোর চেষ্টা করছেন। এতে অধিকাংশ ব্যবসায়ীকেই লোকসান গুনতে হচ্ছে।বিজিএমইএ’র একজন কর্মকর্তা জানান, আকাশপথে অস্ট্রেলিয়ায় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও নমুনা পাঠানোর সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প পথে অন্য দেশের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে তেমনি আর্থিক ব্যয়ও বাড়ছে। এখন ইইউ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বিপদে পড়বেন দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।

বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল এলাইট প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহম্মেদ যুগান্তরকে জানান, বর্তমানে বছরে ১ হাজার থেকে ১৫শ’ কোটি টাকার বেশি সবজি রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। এর অধিকাংশই যাচ্ছে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এ মুহূর্তে যদি যুক্তরাজ্য সবজি নেয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে ২ শতাধিক ব্যবসায়ীকে পথে বসতে হবে।