খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করবেন মঙ্গলবার

খালেদা জিয়ারাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে নাশকতার মামলায় আগামী ৫ এপ্রিল বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।রোববার খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারিক আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তিনি সব সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আত্মসমর্পণ করলে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে জামিন চাইবেন তাঁর আইনজীবীরা।

৩০ মার্চ যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যার ঘটনায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। একই সঙ্গে পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না, তা পুলিশকে আগামী ২৭ এপ্রিল জানাতে বলেছেন আদালত। এ মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে গত বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এই অবরোধের মধ্যে ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরী পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা ছোড়া হলে ২৯ জন যাত্রী দগ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে নূর আলম (৬০) নামের এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ ফেব্র“য়ারি মারা যান। ওই ঘটনায় ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে দুটি মামলা করে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ। দুই মামলাতেই খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। এর মধ্যে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো।মামলাগুলোর মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানা এলাকায় গাড়িতে পেট্রোলবোমা মেরে যাত্রী হত্যার অভিযোগে দুটি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদীর দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা এবং গুলশান থানায় দায়েরকৃত একটি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে একমাত্র যাত্রাবাড়ি থানায় গাড়ি পোড়ানোর মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় উচ্চ আদালত খালেদাকে জিয়াকে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদীর দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় এবং গুলশান থানার আরেকটি মামলায় ধার্য তারিখের পূর্বেই আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করবেন খালেদা জিয়া।নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার আত্মসমর্পণ বিষয়ে সবিস্তারে জানিয়েছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেজবাহ।গত ২৮ মার্চ আদালতে হাজির না হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা।

গ্রেপ্তারিপরোয়ানাভুক্ত অপর আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন :খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপির ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুল বারী হেলাল, কাইয়্যুম কমিশনার, লতিফ কমিশনার, মীর আবু জাফর শামসুদ্দিন দিদার, যাত্রাবাড়ি এলাকার সাবেক এমপি সালিউদ্দিন আহমেদ, তার ছেলে তানভির আহমেদ রবিন, নবী উল্লাহ নবী।এ মামলায় জামিনে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, চেয়ারপারসনের তথ্য উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, আমান উল্লাহ আমান, সেলিম ভূইয়া ও রফিকুল ইসলাম মাসুম। এ ছাড়া জেলহাজতে রয়েছেন শহিদুল্লাহ, পারভেজ, সোহাগ ও লিটন।

মামলাটিতে গত বছর ৬ মে খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি (হত্যা) এবং বিস্ফোরক আইনে ২টি এবং গত ১৯ মার্চ বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় পৃথক চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের এসআই বশির আহমেদ।অভিযোগপত্রে ৩৮ জন আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ ৩১ জন পলাতক রয়েছেন মর্মে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামীমি হিসেবে ১ নম্বরে রাখা হয়েছে।প্রসঙ্গত, গত বছর ২৩ জানুয়ারি রাত ৯টায় যাত্রাবাড়ির ডেমরা রোডের মাতুয়াইল কাউন্সিলর অফিসের সামনে গ্লোরি পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় দগ্ধ হন কমপক্ষে ৩১ জন। যাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসারত অবস্থায় নূর আলম নামে একজন মারা যান।ঘটনার পর পরিককল্পনাকারী হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় ১৮ জন নেতাসহ যাত্রাবাড়ির ছাত্রদল শ্রমিকদলসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৫০ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলাটি করা হয়েছিল।বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম এজাহারে আসামির তালিকায় উল্লেখ করা না থাকালেও এজহারের বক্তব্যের মধ্যে হুকুমদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।