ঢাকা মহানগর আ.লীগকে

দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।নগর কমিটি এখন থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ- এ দুই নামে পরিচালিত হবে। রোববার বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নতুন দুই কমিটির শীর্ষনেতাদের নাম ঘোষণা করেন। সৈয়দ আশরাফ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দক্ষিণে সভাপতি হিসেবে বর্তমান লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মহানগরের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে এবং উত্তরে সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্য একেএম রহমতুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত মো. সাদেক খানের নাম ঘোষণা করেন।

একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানা কমিটিগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নামও ঘোষণা দেন সৈয়দ আশরাফ।তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এতো বড় ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগে ভাগ করায় নতুন কমিটির কাজকর্মে গতি আসবে। নতুন নেতৃত্ব আগের চেয়ে ভালো করবেন।এর আগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে প্রয়াত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজকে চূড়ান্ত করা হয়েছিলো। গত ২৩ জানুয়ারি এম এ আজিজ মারা যাওয়ায় লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতকে সভাপতি হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।এর আগে গত বছরের এপ্রিলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের জন্য পৃথক দুই কমিটি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। কাউন্সিলের দীর্ঘ দিন পরেও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। অবশেষে রোববার শেষ হতে যাচ্ছে সেই প্রতীক্ষার।

আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর শাখার সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয় ২০০৩ সালের ১৮ জুন। ওই বছরের জুনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও পরের বছর ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মোহাম্মদ হানিফকে সভাপতি ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের নভেম্বরে মারা যান মোহাম্মদ হানিফ। তার মৃত্যুর পর এক নম্বর সহ সভাপতি ওমর আলী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে থাকেন। এরপর ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিতে পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান ৬ নম্বর সহ সভাপতি এম এ আজিজ।মহানগর আওয়ামী লীগকে প্রথমবারের মত বিভক্ত করে গঠন করা হয়েছে দুটি ইউনিট। এ দুটি ইউনিট এখন থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ ও উত্তর নামে পরিচালিত হবে।সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগরীর ৪৯টি থানা, ১০৩টি ওয়ার্ড ও ১৭টি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়।এর আগে গত বছরের এপ্রিলে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাককে মহনগর দক্ষিণ এবং দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খানকে মহানগর উত্তরের জন্য পৃথক কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। দায়িত্বপ্রাপ্ত এ দুই নেতা উত্তরে ঢাকা-১১ আসনের সাংসদ এ কে এম রহমতুল্লাহ ও মো. সাদেক খানকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আর দক্ষিণে সভাপতি হিসেবে এম এ আজিজ ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রস্তাব করে এর তালিকা সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেন। আজিজের মৃত্যুর পর তার জায়গায় আবুল হাসনাতকে মনোনয়ন দিয়ে সভানেত্রী শনিবার (০৯ এপ্রিল) কমিটি দুটি অনুমোদন দিয়ে অনুমোদনপত্রে স্বাক্ষর করেন। এর আগে উত্তর ও দক্ষিণের খসড়া কমিটি তৈরি করা হলেও ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের মৃত্যুর কারণে দক্ষিণের সভাপতি পদ আটকে যাওয়ায় কমিটি গঠন পিছিয়ে যায়। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে এক শোকসভায় এম এ আজিজকে সভাপতি করা হয়েছিল বলে তার বক্তৃতায় বলেছিলেন। কিন্তু গত ২৩ জানুয়ারি আজিজের মৃত্যুর পর এ পদে আদি ঢাকাইয়া নতুন নেতা খুঁজতে গিয়েই মূলত পিছিয়ে যায় কমিটি ঘোষণা।তবে গত ২৩ জানুয়ারি এম এ আজিজ মারা যাওয়ায় আদি ঢাকাইয়া হিসেবে লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতকে দক্ষিণের সভাপতি করা হয়েছে। গত ১১ মার্চ গণভবনে ডেকে তার সাথে কথাও বলেছেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর সম্মেলন করার কথা থাকলেও প্রায় ১২ বছর পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর। সম্মেলনে আগের কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে নতুন কমিটি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বরত থাকতে বলা হয়। একইভাবে আগের কমিটির স্ব স্ব পদের নেতারাই বিগত দিনে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন১৯৮৬ সালে লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন হাসনাত, এখনো এ পদে রয়েছেন তিনি। তবে ১৯৯৩ সালে কাউন্সিলর নির্বাচনে সদ্য সাবেক কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিমের কাছে নির্বাচনে হেরে যান তিনি, ওই নির্বাচনে ঢাকার মেয়র হয়েছিলেন মোহাম্মদ হানিফ।দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া শাহে আলম মুরাদ সদ্য বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে বরিশালে জন্ম নেয়া এ নেতা ১৯৭৮ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। মূলত এরশাদের সামরিক শাসনামলেই তার রাজনৈতিক উত্থান। ১৯৮০ সালে লালবাগ থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। পরে ১৯৮৩ সালে বৃহত্তর ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। পরে ১৯৮৪ সালে সাংগঠনিক কাজে বেরিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন এ নেতা। পরে ২০০৩ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

এদিকে উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লা ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হন। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে তৎকালীন ঢাকা ৫ আসনের (বাড্ডা-গুলশান-উত্তরা) সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন, বর্তমানেও তিনি এ পদে বহাল আছেন। ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়া এ নেতার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি উত্তীর্ণ হওয়া। ঢাকা ১০ আসনের এ সাংসদ তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও। তিনি এছাড়াও পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান, এফবি ও ফুড বেড ফুটওয়্যারের সভাপতি এবং ট্যানারি, ডাইচিপেক্স টেক্সটাইল মিলস ও এপেক্স প্রপার্টির এমডির দায়িত্বে আছেন।

উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মোহাম্মদপুর এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন। ২০০২ সাল থেকে বৃহত্তর মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। সাদেক নগর নামে মোহাম্মদপুরে তার নামে একটি এলাকাও গড়ে ওঠেছে।এদিকে সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মায়াকে নগরের কোন দায়িত্বে রাখা হয়নি। প্রথমে তিনি নিজেই বিভক্ত কমিটির দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হননি। পরে উত্তরের সভাপতি হতে চাইলেও তাকে নগর কমিটিতে রাখা হয়নি। দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রী হওয়ার কারণে তাকে নগর কমিটিতে রাখা হয়নি, তবে জরুরি অবস্থা চলাকালে ২০০৭ সালের ১৩ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক নূরুল আলম সূত্রাপুর থানায় মায়ার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতি মামলায় দুটি ধারায় মায়াকে মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। মামলায় হাইকোর্টে খালাস পেলেও আপিল বিভাগ সে রায় বাতিল করে দেয়। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য তার করা আবেদন খারিজ করেছেন দিয়েছেন আপিল বিভাগ। সাজা বহাল থাকায় মায়ার মন্ত্রিত্বে থাকা না থাকার বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।নগরের নেতৃত্বের দৌড়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে।