আইনমন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জে স্কুল শিক্ষককে কান ধরিয়ে উঠ-বস করানোর নিন্দা জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যারা এ অপরাধে জড়িত তাদের শাস্তি পেতে হবে।মঙ্গলবার বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারাধীন ও তদন্তাধীন থাকা মামলা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।আইনমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তনু হত্যা মামলাটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি অবশ্যই বিবেচনা করবে। তনু হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন। এ অবস্থায় কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে তনু হত্যার ঘটনা দেশের জনগণকে বিচলিত করেছে। জনগণ এর সুষ্ঠু বিচার চায়।উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাসের বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু খুন হন।পুলিশ,ডিবির পর বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গত ২৮ মার্চ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গত ৩০ মার্চ তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সোমবার রাতে কুমিল্লা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান জানান, কুমিল্লায় কলেজ ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর মরদেহ থেকে নেয়া বিভিন্ন আলামত ডিএনএ পরীক্ষার পর ধর্ষণের আলামত মিলেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস করানো, এটা আমার দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিন্দনীয়।…এটা কিন্তু একটা অপরাধ। যারা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে নিশ্চয়ই শাস্তিভোগ করতে হবে। কারণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যায় না। এটা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করতে পারি না।এটা ঠিক যে এই শিক্ষক একজন ছাত্রকে মারধর করেছিল বলে আমি কাগজের রিপোর্টে দেখেছি। তবে যদি সেটাও হয়ে থাকে তাকেও বিচারের আওতায় আনা যেত। তাই বলে তৎক্ষণাৎ মোবাইল কোর্ট ছাড়া ওই খানে এরকম বিচার করাটা এটা বরদাশত করা যাবে না। আমার মনে হয় এটার ব্যাপারেও একটা আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।শুক্রবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে জখম করে স্থানীয় জনতা। এক পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান তাকে কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেন।এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলার পাশাপাশি শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি উঠেছে।তবে ওই ঘটনায় কোনো ফৌজদারি অপরাধ ঘটেনি দাবি করে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেছেন, তাই পুলিশের করার কিছু নেই।

কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, সাবজুডিস মেটার হচ্ছে যখন আদালতে কোনো মামলা থাকে। আর তদন্তাধীন হচ্ছে, যখন পুলিশ এটা নিয়ে তদন্ত করে। এই দুটো সময়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন আছেন তাদের আসলে কিন্তু এ সম্পর্কে মন্তব্য করাটা ঠিক নয়। তাই এ বিষয়ে যে প্রশ্নটা আপনারা করেছেন তা নিয়ে আমার মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না।ডিএনএ টেস্টে তনুকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে সিআইডির প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ দুটো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এগুলো কিন্তু তদন্তের অংশ। এগুলি যখন পুলিশ আদালতে তার প্রতিবেদন সাবমিট করবে তখন কিন্তু এই দুটো প্রতিবেদন সম্পর্কে পুলিশের একটা মন্তব্য থাকবে। এখনো আদালতে যদি এটা কোনো এপ্লিকেশন করা হয়, তাহলে এটা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার তারা কী নির্দেশনা দেবে।এসব ক্ষেত্রে আদালতের অনেক ডিসিশন আছে। আদালতই এটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এটা যথেষ্ট জনগণের মনকে বিচলিত করেছে। জনগণ এটার একটা সুষ্ঠু বিচার চান। এসব প্রেক্ষিত বিচার করে আমার বিশ্বাস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে কোনোভাবে পাঠানো যায়, নিশ্চয়ই তারা এটা বিবেচনা করবে।