christian businessman-doinikbarta

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় সুনিল গোমেজ নামে এক খৃুষ্টান ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বত্তরা। রোববার দুপর বনপাড়া খৃষ্টান পল্লীতে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সুনিল ৬৫গোমেজ বনপাড়া খৃষ্টান পল্লীর যোশেফ গোমেজের ছেলে। পুলিশ ও পত্যক্ষ দর্শি জানায় , প্রতিদিনের মত সুনিল গোমেজ বাড়ী থেকে বের হয় রোববার সকালে গির্জায় যান প্রার্থনার জন্য। প্রার্থনা সেরে তিনি সকাল ৮টার দিকে বাড়ীর পাশেই মুদি দোকান খুলে বসেন। এরপর বেলা ১২ টার দিকে স্থানীয় কিছু লোকজন দোকানে পণ্য কেনার জন্য ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকে দেখেন মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সুনিল গোমেজ। তার ঘারে পিঠে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কারা কখন কিভাবে হত্যা করেছে জানাতে পারেনি স্থানীয় লোকজন

সুনিল গোমেজের পরিব মেয়ে স্বপ্না জানান, ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধর সাথে তার কোন শত্র“তা ছিলনা। তারপরেও এই ধরণের হত্যাকান্ডে হতবাক তারা। খৃষ্টান পল্লীর পুরোহিত ফাদার হিউবার্ট রিবেরু বলেন . এরকম কেজন নিরিহ লোকের হ্যথাকান্ডে তারা বাক রুদ্ধ । এ বিষয়ে বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভাপরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আশরাফ জানান , সুনিল গোমেজকে কুপিয়েই হত্যা করা হয়েছে। তবে কারা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সে বিষয়ে এখনো পরিস্কার নয়। স্থানীয় লোকজন কাউকে হত্যা করতে দেখেনি। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে খোজ খবর চালিয়ে যাচ্ছে। বনপাড়া খ্রিষ্টানপাড়ায় সুনীল গমেজ (৬০) নামের এক মুদি ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর ঘাড়ের পেছনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। আলামত দেখে স্থানীয়দের ধারণা এটা জঙ্গি হামলা হতে পারে। তবে পুলিশ এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত না। রোববার দুপুর ১২টার দিকে নিজ দোকানে তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।বনপাড়া খ্রিষ্টানপাড়ার বাসিন্দারা জানান, রোববার হওয়ায় যোসেফ গমেজের ছেলে সুনীল গমেজ সকালে বাড়ির পাশের গির্জায় প্রার্থনায় যোগ দেন। পড্রার্থনা শেষে বনপাড়া বাজারে কিছু জিনিসপত্র কেনার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া মুদি দোকানে বসেন। দুপুর ১২টার কিছু পর পরই দোকানের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দুজন ভ্যানচালক গলা কাটা অবস্থায় তাঁর মৃতদেহ দোকানের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন সেখানে ছুটে আসেন।
দুপুর ে দড়টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সুনীলের শরীরের ওপরের অংশ দোকানের বাইরে দিকে ওপুর হয়ে ঝুলছে। মাথার পেছনে ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাতের মুঠোতে কিছু টাকা তখনো ধরা।

দোকানটি আধপাকা বসতবাড়ির একটি কক্ষে হলেও বাড়ির ভেতরের কেউ এ ঘটনা বুঝতে পারেনি বলে জানান ওই বাড়িতে ভাড়া থাকা রিজিয়া বেগম। প্রতিবেশী কানন গমেজ জানান, সুনীল গমেজের এক মেয়ে রয়েছে। আর একমাত্র ছেলে স্বপন বছর খানেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। মেয়ে স্বপ্নার বিয়ে হয়েছে কয়েক বাড়ি পরেই।খবর পেয়ে স্বপ্না গমেজ ছুটে আসেন বাবার বাড়িতে। তিনি জানান, ওই বাড়িতে তার বাবা ও মা থাকতেন। দুটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া ছিল। মা জাসিনতা গমেজ তাঁর অসুস্থ নানিকে দেখতে শনিবার পাবনার চাটমোহর গেছেন। সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিন হওয়ায় প্রতিবেশীরাও ওই সময় নিজ নিজ বাড়িতে ও গির্জায় সময় কাটাচ্ছিলেন। স্বপ্না গমেজ জানান, তাঁর বাবা একজন নিরীহ মানুষ। তিনি বিভিন্ন গির্জায় মালির কাজ করতেন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজ থেকে অবসর নিয়ে বাড়ির একটি কক্ষে মুদি ব্যবসা করতেন। তাঁর কোনো শত্রু ছিল না। কারও সঙ্গে কখনো গোলমাল হয়নি।বনপাড়া ধর্মপল্লির সহসভাপতি ব্যানেডিক গমেজ জানান, কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা ক্রেতা সেজে দোকানে এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়েছে। তিনি বলেন, ঘাড়ের পেছনের কোপানোর আলামত দেখে মনে হচ্ছে এটা জঙ্গি হামলা হতে পারে। কারণ উনি একজন আপাদমস্তক নিরীহ মানুষ। তার কোনো শত্রু নেই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিছুদিন আগে গ্যাব্রিয়েল কস্তা নামের এক ফাদার দম্পতিকে দুর্বৃত্তরা নিজ বাসায় মারধর করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে গিয়েছিল। ওই ঘটনায় মামলা হলেও আজ পর্যন্ত তার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনাও হয়তো এ সময় নমনীয় হয়ে যাবে। দুর্বৃত্তরা আড়াল হয়ে যাবে। আমরা বিচার পাব না।

বনপাড়া ধর্মপল্লির পাল পুরোহিত ফাদার বিকাশ হিউর্বাট রিবেরু বলেন, আমরা বাকরুদ্ধ ! কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। তাঁকে খুন করতে পারে এটা ভাবাও যায় না। তাঁর ছোট ভাই প্রশান্ত গমেজ দিনাজপুরের মরিয়ামপুর চার্চের ফাদারের দায়িত্ব পালন করেন। কী কারণে কারা কেন এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা বলতে পারব না। আমরা প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছি। দেখি তাঁরা কি করেন।সুনীল গমেজ হত্যার প্রতিবাদে বনপাড়া ধর্মপল্লির পক্ষ থেকে বিকেলে বনপাড়া চার্চের সামনে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন সমবেত হন এবং বনপাড়া বাজারে নাটোর-পাবনা সড়কে মানববন্ধন করেন। এতে ধর্মীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দিনাজপুরে খ্রিষ্টান ধর্মযাজক পিয়েরো পিচম, হোমিও চিকিৎসক এবং ঈশ্বরদীতে খ্রিষ্টান যাজক লুক সরকারকে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ধর্মযাজকসহ অন্তত ১২ জনকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে ।